বইমেলায় কলকাতা সাহিত্য উৎসবে মার্কিন কবি নিল হলের সঙ্গে শঙ্খ ঘোষ। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৌভিক দে।
নিজের হাতে গড়া দুলের পসরা মুম্বই থেকে আসা বন্ধু রেহানাকে সামলানোর ভার দিয়েছেন শমিতা। তবে লিটল ম্যাগ প্যাভিলিয়নের টেবিলে বসে থাকা মোটে পোষাচ্ছে না ডাকাবুকো কলেজছাত্রীটির। সমকামী ও রূপান্তরকামী নারীর মুখপত্র ‘স্বকণ্ঠে’-র বইমেলা সংখ্যা হাতে নিয়ে ডাকাডাকি করে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঠিক তখনই বইমেলার আর এক প্রান্তে মাইকের সামনে সরব রূপান্তরকামী সমাজকর্মী লক্ষ্মীনারায়ণ ত্রিপাঠী। কলকাতা সাহিত্য উৎসবের আসরে মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্দীপ রায়দের সঙ্গে যৌনতা ও জেন্ডার নিয়ে আলোচনা জমে উঠেছে।
নানা কিসিমের বই চর্চার আবহে সহজে শোনা যায় না, এমন বহু চাপা স্বরও সঙ্কোচের আগল ঠেলে কথা বলছে। বস্টনে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের প্রাক্তনী, অধুনা দেশের একটি নামী বিজ্ঞানপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সমকামী বঙ্গসন্তান এ বার বইমেলায় আসতে পারেননি। তবে তাঁর জীবনের কষ্টের গল্প লিখে ফেলেছেন ফুরফুরে মেজাজে। নিবেদিতা হলের ১৮২ নম্বর স্টলে সেই চটি বই ‘বস্টনে বং গে’ অনেক পাঠককেই ছুঁয়ে যাচ্ছে।
জুরিখবাসী মহিলা যোষিতা নিজের বই দেখতে ঘুরঘুর করছেন ২৩৬ নম্বর স্টলে। দু’দশক আগে প্রেমিকের সন্তানের মা হওয়া ও চাকরি জীবনের আখ্যান ‘আইটি আইটি পা পা’ সরস ঢঙে লিখে ফেলেছেন তিনি।
‘‘চারপাশের কত লড়াই আমাদের খেয়ালই থাকে না!’’ সৃষ্টিসুখ-এর স্টলে বলছিলেন রম্যরচনা লেখক তথা দিল্লির সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের আমলা সৌরাংশু সিংহ। তাঁর মতে, মেলায় প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্প থাকলে কিছুটা ভাল হতো বৈ কী! দৃষ্টিহীন যুবক সৈকত কর, রামেশ্বর মুর্মুদের তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই। তাঁদের ব্রেল প্রেস-এর জন্য টাকা তুলতে গোটা মাঠ টো টো করছেন।
ছক-ভাঙা স্বরের ছোঁয়াচ মিলছে নানা ভাবেই। ঋতাক্ষরের বই দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘যুক্তিবাদীর মর্মকথা’ প্রকাশিত হল। ফেসবুকে খবর পেয়ে ধর্ম, নাস্তিকতা, মিডিয়ার বিজ্ঞানচর্চা নিয়ে কাটাছেঁড়ার বইটি অনেকেই সংগ্রহ করছেন। ‘অক্ষর’-এর স্টলে ঢুকলেই সিলেটি টানে সহাস্য, ‘আইয়েন, আইয়েন’ মিষ্টি অভ্যর্থনায় শুভব্রত দেব। দেশের এক কোণে পড়ে থাকা উত্তর-পূর্ব প্রান্তের জীবনচর্যার নানা ছোঁয়াচ সেখানে। ত্রিপুরার বাংলা কবিতার নতুন বই, মণিপুরী গল্পের সংকলন থেকে ককবরক ভাষার বইয়ের হদিস মিলছে। উত্তর-পূর্বের অজানা গল্প, সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের আখ্যান ‘এক্সপ্লোরিং নর্থইস্ট’ পেশ করছে উডল্যান্ডস পাবলিকেশন। তিলকরঞ্জন বেরার বইটি জহর সরকার, গৌতম ঘোষেরা প্রকাশ করলেন।
মেলায় বিহু নাচে মাতাচ্ছেন কলকাতার কলেজের অসমিয়া ছেলেমেয়েরা। অসমের দুই মহিলা তিলোত্তমা সেনগুপ্ত, সঞ্চিতা বড়ুয়ারা বইমেলার মাঠেই তাঁদের প্রযোজনায় বাংলা কমেডি ‘অনেক হল, এ বার তো মরো’র প্রচারে সামিল হয়েছেন। দুয়োরানি বাংলা ভাষার সেরা লেখকদের ভাষান্তরের ঝক্কি নিয়েও জোরদার আলোচনা-চক্র। অনুবাদক অরুণাভ সিংহ, কন্নড় লেখক শ্রীনাথ পেরুর, যাদবপুরের অনুবাদ তালিম কেন্দ্রের সায়ন্তন দাশগুপ্ত প্রমুখ নানা সমস্যা তুলে ধরলেন।
বইকে উপলক্ষ করে সংস্কৃতির এই সেতুবন্ধনই শেষ কথাটা বলে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy