Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শংসাপত্রে নাম কেন কলেজের, বিতর্ক শিক্ষায়

শংসাপত্রে কলেজের নাম রাখার ব্যাপারে ২১ মার্চ সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি তোলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ১১:৫০
Share: Save:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমনই হোক, যেখানেই হোক, ফল নিয়ে তো কথা! তা হলে স্নাতকে সফল প্রার্থীদের শংসাপত্রে কলেজের নাম রাখা হবে কেন? প্রশ্ন তুলছে শিক্ষা শিবিরের একটি অংশ। ওই শিবিরের অন্য অংশ অবশ্য বলছে, আপত্তির কী আছে! এতে তো কলেজে-কলেজে প্রতিযোগিতার মনোভাবই বাড়বে। তাতে উপকার হবে পড়ুয়াদেরই।

এই বিতর্কের শেষ দেখা যাচ্ছে না। তবে স্নাতকদের শংসাপত্রে কলেজের নাম রাখার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাংলায় আপত্তি ও অসন্তোষ তুঙ্গে। অনেক শিক্ষাবিদের অভিযোগ, স্রেফ কলেজের মানের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি করে তাঁদের ভবিষ্যৎকেই বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

শংসাপত্রে কলেজের নাম রাখার ব্যাপারে ২১ মার্চ সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি তোলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভাল, মাঝারি ও খারাপ মানের বহু কলেজ রয়েছে। কিন্তু স্নাতক শংসাপত্রে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থাকে। কলেজের নাম থাকে না। চলতি বছর থেকে শংসাপত্রে কলেজের নামও দেওয়া থাকবে। সঙ্গে থাকবে প্রার্থীর ছবি।’’ এবং আধার নম্বরের সঙ্গে যোগ করা হবে সেই শংসাপত্র। তবে গোপনতার খাতিরে সেটি শংসাপত্রে দেওয়া হবে না। মন্ত্রীর মতে, এর ফলে নকল পরীক্ষার্থী আটকানো যাবে, আবার চাকরিদাতারাও বুঝতে পারবেন, কাকে চাকরিতে নেওয়া হচ্ছে।

শংসাপত্রে প্রার্থীর ছবি বা আধার-সংযোগ নিয়ে বিতর্ক না-হলেও কলেজের নাম রাখা এবং চাকরির ক্ষেত্রে নামী কলেজের পড়ুয়াদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই মুখ খুলেছেন শিক্ষাবিদেরা। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘কলেজের মান দিয়ে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করা যায় না। তথাকথিত নিম্ন মানের কলেজেও ভাল পড়ুয়া পাওয়া যায়। কেন্দ্রের এই ক্ষতিকারক সিদ্ধান্ত আসলে ওই পড়ুয়াদের প্রতিই অবিচার করবে।’’ তাঁর আশঙ্কা, এতে নামী কলেজের মধ্যমেধার পড়ুয়ারা স্রেফ কলেজের নাম ব্যবহার করে বাড়ি সুবিধা পেয়ে যাবেন। তুলনায় কম নামী কলেজের মেধাবীরা সুযোগ পাবেন না। এই ব্যবস্থার জেরে আরও বেশি দুর্নীতি জাঁকিয়ে বসতে চলেছে বলে মনে করছেন অধিকাংশ শিক্ষক।

এ রাজ্যে নামী কলেজে ভর্তির প্রবণতা এত বেশি যে, তাতে টাকার দেদার খেলা চলে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে সেই প্রবণতা বাড়বে বলে শিক্ষা মহলের আশঙ্কা। অনেকে মনে করছেন, ভাল নম্বর পেয়েও টাকা দিতে না-পারায় ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না মেধাবীরা। উজ্জ্বল ফল করেও নামী কলেজে ঠাঁই হবে না তাঁদের। ভবিষ্যতেও নানান সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন তাঁরা। শিক্ষক-নেতা তরুণ নস্কর বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য নয়। এতে কলেজে-কলেজে ভেদাভেদ বাড়বে। বাড়বে দুর্নীতি। সঙ্কটে পড়বে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ।’’

যদিও এই ব্যবস্থায় ইতিবাচক দিকের অভাব নেই বলে মনে করছেন শিক্ষা মহলের অন্য অংশ। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী দিবা কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বলেন, ‘‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল কলেজের র‌্যাঙ্কিং ঠিক করে। সেই অনুযায়ী আর্থিক সাহায্যও দেয়। সেটায় যদি অসুবিধা না-থাকে, নতুন ব্যবস্থাতেও কোনও অসুবিধা থাকার কথা নয়। এতে বরঞ্চ ভালই হবে। কলেজগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে।’’ তবে পড়ুয়ারা যাতে নম্বরের ভিত্তিতেই সুযোগ পান, সে-দিকে লক্ষ রাখা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। জয়পুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শংসাপত্রে কলেজের নাম রাখার মধ্যে খারাপ কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।’’ একই বক্তব্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসুর। তিনি বলেন, ‘‘আমি এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকত্ব দেখতে পাচ্ছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE