Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
State News

টাস্ক ফোর্স গড়ে, যন্ত্র জোগান দিয়ে যুদ্ধ রাজ্যের

পরিকাঠামোর কাজ বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই গতি পেয়েছিল।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৫:৪৫
Share: Save:

কলকাতা-সহ রাজ্যে দ্বিতীয় করোনা-আক্রান্তের হদিস পাওয়ার পরে ওই ঘাতক রোগ মোকাবিলার প্রস্তুতির ছবিটাই বদলে গেল শুক্রবার।

লন্ডন-যোগে কলকাতার আরও এক বাসিন্দার লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যে পজ়িটিভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, বৃহস্পতিবারেই সেই আভাস মিলেছিল। তবে রাত পর্যন্ত তাতে সম্মতির সিলমোহর দেয়নি স্বাস্থ্য ভবন। শুক্রবার দফতর খোলার আগেই কলকাতা পুরসভা যখন আক্রান্তের সূত্র ধরে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খোঁজে নেমে পড়েছেন, তখনও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ হোয়াটসঅ্যাপে সরকারি বার্তায় দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়। ১) লন্ডন-যোগে রাজ্যের দ্বিতীয় করোনা-রোগীর খবরটি সত্যি। ২) ‘কোভিড১৯’-এর মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসচিব বিবেক কুমারের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে। সেই টাস্ক ফোর্সের প্রথম বার্তা, রাজ্যে দুই আক্রান্তেরই লন্ডন-যোগ রয়েছে, তাই সাম্প্রতিক অতীতে যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন, তাঁরা বাধ্যতামূলক ভাবে ১৪ দিন ‘হোম কোয়রান্টিনে’ থাকবেন। বিশেষত ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশ থেকে যাঁরা এসেছেন। রাজ্যের প্রথম সারির এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক পদস্থ চিকিৎসক-কর্তা বলেন, ‘‘অন্তত দু’সপ্তাহ আগে এটা করা উচিত ছিল!’’

পরিকাঠামোর কাজ বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরেই গতি পেয়েছিল। রাজারহাটের কোয়রান্টিন, বেলেঘাটার আইডি, আরজি কর এবং এমআর বাঙুর হাসপাতাল মিলিয়ে শুধু করোনা মোকাবিলায় ৮০০ শয্যার ওয়ার্ড তৈরির কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন স্বাস্থ্য ভবনে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিকাঠামোর কাজ শুরু হয়ে যায়। ৩০০ ভেন্টিলেটর, ১০টি ইকমো (এক্সট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজিনেশন) ছাড়াও পোর্টেবল এক্স-রে, ডায়ালিসিস এবং ইউএসজি-র সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে।

আইসোলেশন কোথায় কত

রাজারহাট কোয়রান্টিন কেন্দ্র
• ৫০০ শয্যার প্রস্তুতি।

বেলেঘাটা আইডি
• ২২ থেকে শয্যা বেড়ে হচ্ছে ১০০।

এম আর বাঙুর
• সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ে ৩০ শয্যার ওয়ার্ড তৈরি। আরও ১২০ শয্যার প্রস্তুতি। আপাতত চারটি ভেন্টিলেটর।

আরজি কর
• ১০ শয্যা। রেসপিরেটরি কেয়ার ইউনিট।

এনআরএস
• অর্থোপেডিক সিবি বিল্ডিংয়ে আট শয্যার ওয়ার্ড তৈরি। বাড়বে আরও ছ’টি।

সিএমসি
• পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ২৬ শয্যার ওয়ার্ড। পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী প্রস্তুতি।

ন্যাশনাল
• চক্ষু বিল্ডিংয়ের তেতলায় ছ’শয্যার ওয়ার্ড।

সাগর দত্ত
• সাত শয্যার আইসোলেশন। ন’জনের মেডিক্যাল বোর্ড।

এসএসকেএম
• পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা।

বেসরকারি হাসপাতালের ছবি

ফর্টিস আনন্দপুর
• এক শয্যার পাঁচটি আইসোলেশন কক্ষ।

অ্যাপোলো গ্লেনেগলস
• আপাতত তিনটি।
তৈরি হচ্ছে দু’টি ভেন্টিলেটর-সহ আট শয্যার আইসোলেশন।

আর এন টেগোর
• একটি ভেন্টিলেটর-সহ পাঁচ শয্যা।

আমরি
• গ্রুপের তিনটি হাসপাতালে মোট ১৭ শয্যার আইসোলেশন।

সিএমআরআই
• আটটি শয্যা।

পিয়ারলেস
• আটটি শয্যা।

মেডিকা
• চারটি নন-ক্রিটিক্যাল। তিনটি ক্রিটিক্যাল।

রুবি
• দু’টি শয্যা।

উডল্যান্ডস
• চারটি শয্যা।

বেলভিউ
• আটটি শয্যা।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, করোনা-রোগীর চিকিৎসায় সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কর্তারা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সাধারণ রোগীদের মধ্যে যাতে আতঙ্ক না-ছড়ায়, সেই জন্য করোনা-আক্রান্তদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। রাজারহাটে নতুন সিসিইউ ইউনিট গড়া হচ্ছে। অন্য সব হাসপাতালে পৃথক আইসিইউ-সিসিইউ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: পর্যবেক্ষণে প্রশিক্ষণ গ্রামীণ ডাক্তারদের

জরুরি ভিত্তিতে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক ডেকে একগুচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পুরনো ফরেন্সিক বিভাগ থেকে অর্থোপেডিক সিবি ওয়ার্ডে সরে গেল আইসোলেশন ওয়ার্ড। সৌদি আরব থেকে ফেরা এক ব্যক্তি সেখানে ভর্তি আছেন। তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেও জরুরি বিভাগ থেকে চক্ষু বিভাগের তেতলায় স্থানান্তরিত হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। আজ, শনিবার সেখানে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ছোঁয়াচে রোগের মোকাবিলায় কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এনআরএস। তার মধ্যে আছে: হাসপাতালের প্রতিটি প্রবেশপথে বাড়তি লোকের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ। ওয়ার্ডের নিরিখে রোগীর সঙ্গে দেখা করার সময়সূচি বদল। খুব প্রয়োজন না-হলে এখন কেউ যাতে বহির্বিভাগে না-আসেন, সেই অনুরোধ করা হবে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে। বহির্বিভাগের রোগীদের এক সপ্তাহের বদলে দু’সপ্তাহ পরে আসতে বলবেন চিকিৎসকেরা। ফার্মাসিতে ক্রনিক রোগের রোগীদের এক বারে ওষুধ দেওয়া হবে দু’সপ্তাহের। যে-সব অস্ত্রোপচার পরে করলেও ক্ষতি নেই, তা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিল থেকে মাস্ক কেনার কথা জানান সমিতির প্রধান শান্তনু সেন। ‘‘হাসপাতালে করোনা প্রতিরোধে এই সব পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসক হিসেবে সেই কাজ ত্বরান্বিত করা আমার নৈতিক দায়িত্ব,’’ বলেন শান্তনুবাবু

আইসোলেশন ওয়ার্ডের ঠিকানা বদলেছে এমআর বাঙুরেও। সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ের একতলায় নতুন আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রসঙ্গে সেখানকার সুপার শিশির কোলে বলেন, ‘‘আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ড সব দিক থেকে প্রস্তুত। পৃথক সিঁড়ি, পৃথক লিফটও রাখা হয়েছে।’’

করোনা চিকিৎসার নোডাল হাসপাতাল, বেলেঘাটার আইডি-তেও পরিকাঠামো গড়ার ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। আইডি-র অধ্যক্ষা অণিমা হালদার নবান্নের বৈঠকে চিকিৎসকের অভাবের কথা তুলেছিলেন। উপাধ্যক্ষ আশিস মান্না এ দিন বলেন, ‘‘১১০ জন সুইপার চেয়ে ১৬১ জন পেয়েছি। ৫৭ জন জিডিএ। চারটি অ্যাম্বুল্যান্স। এত দিনে সব পাচ্ছি।’’

বেসরকারি ক্ষেত্রেও করোনা-পরিষেবা প্রসারিত হচ্ছে। লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য আইসিএমআরের অনুমোদন পেয়েছে কলকাতার পাঁচটি বেসরকারি ল্যাবরেটরি। সেগুলি হল ইএম বাইপাসের অ্যাপোলো গ্লেনেগ্‌লস, এসআরএল (সল্টলেক), এসআরএল (আনন্দপুরের ফর্টিস), নিউ টাউনের সুরক্ষা এবং ইএম বাইপাসের ফর্টিস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE