কেন্দ্রের বিশেষ পর্যবেক্ষক দলের নেতা অপূর্ব চন্দ্রের (একেবারে ডান দিকে) সঙ্গে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)। মঙ্গলবার গুরুসদয় রোডে বিএসএফের অতিথিশালায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কিসের ভিত্তিতে রাজ্যের করোনা-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্র দল পাঠাল, তার ব্যাখ্যা না-পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের পরিদর্শনে যেতে দেওয়া হবে না বলে সোমবােরই জানিয়ে দিয়েছিল নবান্ন। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠিও দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে কলকাতায় বিএসএফের অতিথিশালায় এবং শিলিগুড়িতে এসএসবি-র অতিথিশালায় বসেই ছিলেন দিল্লির আন্তর্মন্ত্রক দলের প্রতিনিধিরা। রাজ্য সহযোগিতা করছে না বলে দিল্লিতে রিপোর্টও পাঠান তাঁরা। পরে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের নেতা অপূর্ব চন্দ্র অভিযোগ করেন, চাইলেও শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরতে দেওয়া হচ্ছিল না তাঁদের। লকডাউন রয়েছে বলে বাইরে ঘুরে বেড়াতে বারণ করা হয়েছিল।
এর পর বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের কাছে চিঠি আসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লার। তাতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫ নম্বর ধারা এবং সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের কথা স্মরণ করিয়ে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। দিল্লিতেও মুখ খোলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। আর তার পরেই পথে নামতে দেখা যায় কলকাতায় আসা কেন্দ্রীয় দলটিকে। যদিও মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় দলকে নিয়ে কোথাও ঘোরাচ্ছি না। ওঁরা যদি মনে করেন ঘুরবেন। এর বেশি কিছু নয়।’’
পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে দল পাঠিয়েছে কেন্দ্র। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘বাকি তিন রাজ্য কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে যথেষ্ট সাহায্য করলেও কলকাতা ও জলপাইগুড়িতে যে দু’টি দল গিয়েছে, তাদের রাজ্য বা স্থানীয় প্রশাসন কোনও সাহায্য করছে না। যা বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের পরিপন্থী। সেই জন্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্যকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যের দাবি মেনে নয়া কিট নাইসেডের
ভাল্লা তাঁর চিঠিতে বলেছেন, ২০০৫ সালের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ১ নম্বর উপধারা মোতাবেক, ‘বিপর্যয় মোকাবিলার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনবোধে যে-কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।’ তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্টও সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে বলেছে, করোনা-নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রের নির্দেশ সব রাজ্যকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসক মহলে সংক্রমণ অব্যাহত, মেডিক্যালে আক্রান্ত আরও ১ চিকিৎসক ও ৪ নার্স
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠিতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫ নম্বর ধারার উল্লেখ থাকায় শোরগোল পড়ে যায় নবান্নে। কারণ, করোনা-আবহে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় সামলাতে না-পারায় দিল্লি সরকারের পরিবহণসচিবকে এই ধারাতেই সাসপেন্ড করেছে কেন্দ্র।
ভাল্লার চিঠি সম্পর্কে সরাসরি কোনও মন্তব্য না-করলেও মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ‘‘আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা না-বলে কোনও কেন্দ্রীয় দল এ ভাবে ঘুরতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী সে-কথা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছেন। অসহযোগিতার অভিযোগ ঠিক নয়। শৃঙ্খলা দু’তরফকেই দেখাতে হবে।’’ নবান্ন সূত্রের দাবি, দিল্লি থেকে একটি পর্যবেক্ষক দলের সরাসরি শিলিগুড়ি পৌঁছে যাওয়াটা রাজ্য ভাল ভাবে নেয়নি। তবে তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। নথিপত্র দেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানাচ্ছে, আজ বেলা ১১টায় নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের। কিন্তু তা বাতিল হয়। গুরুসদয় দত্ত রোডে বিএসএফের অতিথিশালা থেকে বেরিয়ে সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত গিয়েও অতিথিশালায় ফিরে যান তাঁরা। বেলা ২টোর পরে মুখ্যসচিব নিজে তাঁদের কাছে গিয়ে করোনা-পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে আসেন। তার পরে আসে ভাল্লার চিঠি, এবং পর্যবেক্ষণে বেরোয় কেন্দ্রীয় দল।
কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা পথ দেখিয়ে পর্যবেক্ষকদের নিয়ে যান গড়িয়াহাট, যাদবপুর, ইএম বাইপাস, মুকুন্দপুর, আনোয়ার শাহ রোড, টালিগঞ্জ, চেতলা, নিউ আলিপুর, আলিপুর এবং ভবানীপুরে। তাঁরা কি কেন্দ্রের চিহ্নিত ‘হটস্পট’ উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরেও যাবেন? জবাবে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘এ দিন তাঁরা কলকাতায় ঘুরেছেন। আর কোথায় যাবেন জানি না। জানলে দেখা যাবে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy