Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির জবাব চাইছে কেন্দ্র

স্কুলশিক্ষক নিয়োগে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের জবাবদিহি চাইবে কেন্দ্র। শুক্রবার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কলকাতা ঘুরে যাওয়ার পরই মোদী সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলকাতায় থাকাকালীন স্মৃতির কাছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বেশ কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

স্কুলশিক্ষক নিয়োগে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের জবাবদিহি চাইবে কেন্দ্র। শুক্রবার মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কলকাতা ঘুরে যাওয়ার পরই মোদী সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলকাতায় থাকাকালীন স্মৃতির কাছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বেশ কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের জবাবদিহি চাওয়া হবে বলে মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে।

লোকসভা ভোটের আগে প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদী নিজেই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। গুজরাতে সফটঅয়্যারের সাহায্য নিয়ে স্বচ্ছ ভাবে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি, ঘোষণা করেছিলেন, “টেট-কেলেঙ্কারিতে যারা জড়িত, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে কোনও ভাবেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না।” নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে স্পষ্ট, বিষয়টি ভুলে যাননি মোদী।

বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দিতে শুক্রবার কলকাতা এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী। সে সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বিএড ও ডিএলএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বিভিন্ন সংগঠন। টেট পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি না পাওয়া বেশ কিছু প্রার্থী এ দিন স্মৃতির সঙ্গে দেখা করে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ভুরি ভুরি তথ্য-প্রমাণ তুলে দেন। বিজেপি সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার সময়েও এই বিষয়টি তোলেন স্মৃতি। তার পরে দিল্লি ফিরে গিয়ে ওই সব অভিযোগপত্র আরও ভাল ভাবে খতিয়ে দেখেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তার পরেই রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চাওয়ার জন্য তাঁর মন্ত্রককে নির্দেশ দেন।

তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের এই পদক্ষেপকে ‘অবাঞ্ছিত’ বলে অভিহিত করছে রাজ্য সরকার। শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য সরকার নিয়ম মেনেই শিক্ষক নিয়োগ করেছে। জবাব চাওয়ার এক্তিয়ারই নেই কেন্দ্রের।” প্রতিমন্ত্রী বলেন, দিল্লি সত্যিই এমন কিছু করলে তাকে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলে ধরা হবে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভাবেই তার মোকাবিলা করা হবে।

স্মৃতির অবশ্য বক্তব্য, “শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম যাতে না হয়, সেটা দেখা কেন্দ্রীয় সরকারের কতর্ব্য!” মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, শিক্ষক নিয়োগে এ রাজ্যে বড় কিছু একটা গোলমাল যে হয়েছে, দিল্লির কাছে খবর ছিল। কিন্তু কলকাতায় এসে সকলের সঙ্গে কথা বলে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর ধারণা হয়েছে, যা ভাবা গিয়েছিল, আসল পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ। সেই কারণেই চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগগুলি সম্পর্কে রাজ্য সরকারের ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের যুক্তি, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হলে জবাবদিহি চাওয়ার এক্তিয়ার কেন্দ্রের অবশ্যই আছে। কারণ, সংবিধানে যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয় শিক্ষা। নতুন স্কুল তৈরি থেকে শিক্ষকের বেতন মেটানো সর্বশিক্ষা অভিযান তহবিল থেকে রাজ্যকে অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক বরাদ্দ দেয় কেন্দ্র। সেই টাকার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না, কেন্দ্রীয় সরকার তা নিশ্চয়ই দেখবে, দরকারে জবাবও চাইবে।

মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, মধ্যপ্রদেশে মেডিক্যালের প্রবেশিকায় দুর্নীতি নিয়ে পুলিশি তদন্ত চলছে। কিন্তু সে রাজ্যে বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রের কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছে। বিরোধী দলগুলি বলছে, শিক্ষা সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। তাই কেন্দ্রের উচিত এই দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে উদ্যোগী হওয়া। ওই কর্তার কথায়, পশ্চিমবঙ্গেও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ করছে বিরোধী দলগুলি, উপযুক্ত তদন্তও দাবি করেছে। রাজ্য সরকার তা কানেও তুলছে না।

বিষয়টি নিয়েকেন্দ্র তৎপর হলে এক্তিয়ার নিয়ে কোনও প্রশ্নই তুলতে পারে না রাজ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

smriti irani tate scandal jagannath chattopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE