শাসক দলের কিছু নেতা-সাংসদ ছাড়াও রাজ্যের এক আইপিএস অফিসারকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে। নিজেদের এমন এক জন অফিসারের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশ কী ভাবে তদন্ত করবে, প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার নারদ মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এই প্রশ্ন করেন আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার আইনজীবী কিশোর দত্তকে।
কিশোরবাবু সওয়ালে বলেন, টাকা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েল পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জানাননি। যদিও দেশের ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে সেটাই করা উচিত ছিল। কিশোরবাবুর বক্তব্য শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, ‘‘ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে পুলিশ কি ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে নিজে থেকে অভিযোগ দায়ের করেছিল? ওই ঘটনা আদালতগ্রাহ্য অপরাধ কি না, পুলিশ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তা জানতে চেয়েছিল কি?’’
কিশোরবাবু আদালতকে জানান, অভিযোগ লিপিবদ্ধ হবে কি না, সেই ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশই। কিন্তু পুলিশ যদি তা না-করে থাকে, সে-ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দিতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটও পুলিশকে নির্দেশ দেননি।
নারদ-প্রধানের ওই হুল অভিযানের নিরপেক্ষ তদন্তের বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই চাপান-উতোর চলছে আদালতে। বিচারপতি মাত্রে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্য সরকার জানিয়েছে, টাকা নেওয়ার ঘটনার তদন্ত হবে। সরকার যদি তদন্ত করতে পারে, নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে ওই ঘটনার তদন্ত করতে অসুবিধা ঠিক কোথায়? ‘নিরপেক্ষ’ শব্দটির উপরে বারবার জোর দিয়ে আসছে উচ্চ আদালত। এ দিনের শুনানিতেও সেই প্রসঙ্গ ওঠে।
নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজে অন্য কয়েক জন নেতা-সাংসদের পাশাপাশি টাকা নিতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকেও। তাঁর আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত এ দিন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছেন, টাকা নেওয়ার ঘটনায় নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে কেন তদন্ত করানো হবে না। আদালত মনে করছে, নিরপেক্ষ তদন্তের অর্থ সিবিআই-কে সেই দায়িত্ব দেওয়া। এর মানে, রাজ্য পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে আদালত সন্দিহান।
আদালতের কাছে পার্থবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ধরা যাক, টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের তদন্ত কি সিবিআই বা দিল্লি পুলিশ করবে? করলে তারা সে-ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকবে তো?’’ পার্থবাবুর সওয়াল ছিল, দেশের সাংবিধানিক কাঠামোয় রাজ্য পুলিশের কাজকর্মের পরিধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। কোনও এক জন পুলিশকর্মী যদি নিরপেক্ষ না-হন, সে-ক্ষেত্রে অন্য পুলিশকর্মীদের দিয়ে তদন্ত করানোর নির্দেশ দিতেই পারে আদালত। সামগ্রিক ভাবে গোটা পুলিশবাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত হবে না।
আজ, বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy