Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সবংয়ে ছাত্র হত্যা মামলা

আদালতে ফের ভর্ৎসিত আইও

আগে দু’দফায় সবংয়ের ছাত্র খুনের মামলার তদন্তকারী অফিসারকে (আইও) ভর্ত্‌সনা করেছিল আদালত। ফের একবার আইও-কে কার্যত ভর্ত্‌সনাই করল আদালত। আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বার সরকারপক্ষের আইনজীবী আদালতে বললেন, ‘‘আইও ভুল করে ফেলেছেন।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৬
Share: Save:

আগে দু’দফায় সবংয়ের ছাত্র খুনের মামলার তদন্তকারী অফিসারকে (আইও) ভর্ত্‌সনা করেছিল আদালত। ফের একবার আইও-কে কার্যত ভর্ত্‌সনাই করল আদালত। আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বার সরকারপক্ষের আইনজীবী আদালতে বললেন, ‘‘আইও ভুল করে ফেলেছেন।’’

ছাত্র পরিষদ (সিপি) পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে সবং কলেজে ছাত্র খুনের মামলা শুরু হয়েছিল। পরে সৌমেনকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার চার্জশিট পেশের আগে অবশ্য সৌমেনকে নিয়মিফিক জানানো হয়নি। শুক্রবার সৌমেনের আইনজীবী আদালতে সেই প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেন, এই চার্জশিট অসম্পূর্ণ। তখন সরকার পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, মামলার তদন্তকারী অফিসার সৌমেনকে নোটিস পাঠানোর আবেদন করেছেন। সেই আবেদন শুক্রবার মঞ্জুরও করেন বিচারক। কিন্তু শনিবার সরকারি আইনজীবী দীপক সাহা আদালতে পিটিশন দিয়ে জানান, ওই নির্দেশ সংশোধন করা হোক। তা দেখে বিস্মিত হন মেদিনীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিজেএম মহম্মদ মহিবুল্লা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আইও আবেদন করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতে একটা নির্দেশ হয়েছে। এখন আবার এই পিটিশন কেন?’’ দীপকবাবু বলেন, “আসলে সৌমেনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু হয়েছিল ঠিকই, তবে ও এখন এই মামলায় অভিযুক্ত। গ্রেফতারও হয়েছে। অভিযুক্তকে নোটিস পাঠানোর দরকার নেই।’’

এরপরই ভর্ৎসনার সুরে ভারপ্রাপ্ত সিজেএমের প্রশ্ন, ‘‘আইও যে দিন আবেদন করেছিলেন, সে দিন সৌমেন অভিযুক্তই ছিল। তাহলে আইও ওই আবেদন করেছিলেন কেন?’’ এ বার সরকারি আইনজীবীর স্বীকারোক্তি, ‘‘এ ক্ষেত্রে আইও ভুল করে ফেলেছেন।’’

এই বক্তব্য শুনে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম অসন্তুষ্ট হন। বুঝিয়ে দেন, একদিনের মাথায় দু’রকম বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে সিপি কর্মীদের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন। পুলিশ সুপার সেই মতো কাজ করছেন। এখানে আইও-র কোনও ভূমিকা নেই। পুলিশ সুপারের কথা মতো কাজ করতে গিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন। আজ এক রকম, কাল আর এক রকম কথা বলছেন।’’

সবং-কাণ্ডে ধৃত তিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) কর্মী এবং চার ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মীর হাজিরার দিন ছিল শনিবার। এ দিন দুপুরে সাত জনকেই মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। ফের টিএমসিপি কর্মীদের জামিনের আবেদন জানান আইনজীবী মৃণাল চৌধুরী। তবে এ দিন আর শুনানি হয়নি। কারণ, শুনানি শুরুর আগেই আবেদনপত্র প্রত্যাহার করে নেন মৃণালবাবু। তিনি জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর জামিনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তাই আর এ দিন শুনানি চাওয়া হয়নি। এ দিন সিপি কর্মী পল্টু ওঝা এবং অনুপম আদকের জামিনের আবেদনও নাকচ হয়ে গিয়েছে। ধৃত সাত জনকেই ফের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

গত ৭ অগস্ট সবং সজনীকান্ত কলেজ চত্বরে সিপি কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় মোট ২১ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে ১৯ জনই সিপি-র। দু’জন টিএমসিপি-র। এই মামলায় গোপন জবানবন্দি দিয়েছে সিপি কর্মী অনুপম আদক। এ দিন অবশ্য আইনজীবী মারফত অনুপম আদালতকে লিখিত ভাবে জানান, তাঁর গোপন জবানবন্দি বাতিল করা হোক। কারণ, পুলিশ গোপন জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে। লিখিত আবেদনে অনুপম জানিয়েছেন, ‘১০ সেপ্টেম্বর জেল থেকে আদালতে আসার সময় বিশ্বজিত্‌ মণ্ডল (আইও) গাড়িতে আমার সঙ্গে আসেন। তিনি ভীতি প্রদর্শন করেন এবং নানা প্রলোভন দেখান। তাঁর শেখানো মতো আদালতে জবানবন্দি না- দিলে ফের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নির্মম অত্যাচার করার এবং পরিবারের চরম সর্বনাশ করার হুমকি দেন।’ এরপরই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পুলিশের শেখানো মতো জবানবন্দি দিয়েছেন বলে দাবি অনুপমের।

শনিবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। ৮ জন সিপি কর্মীর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানিও ছিল এ দিন। অবশ্য শুনানি হয়নি। পরবর্তী দিন ধার্য হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর। সিপি-র আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ দিন আদালতে সিডি (কেস ডায়েরি) এবং এলসিআর (লোয়ার কোর্ট রেকর্ড) ছিল না। তাই শুনানি হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Court officer slams
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE