Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভোটের সময় আশা দিয়ে ঘুরে যান নেতারা, তবু আঁধারে দক্ষিণ দেয়ারক

একের পর এক ভোট এসেছে। সঙ্গে এসেছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। ভোট দিলে গ্রামে আলো জ্বলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের এমন স্তোকবাক্যে ভরসা রেখে রেখে ক্লান্ত এলাকার মানুষ বুঝে গিয়েছেন ভোটের ময়দানে ও সব আসলে ফাঁকা বুলি।

খুঁটি রয়েছে। নেই তার। দক্ষিণ দেয়ারক গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

খুঁটি রয়েছে। নেই তার। দক্ষিণ দেয়ারক গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১১
Share: Save:

একের পর এক ভোট এসেছে। সঙ্গে এসেছে প্রতিশ্রুতির বন্যা। ভোট দিলে গ্রামে আলো জ্বলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের এমন স্তোকবাক্যে ভরসা রেখে রেখে ক্লান্ত এলাকার মানুষ বুঝে গিয়েছেন ভোটের ময়দানে ও সব আসলে ফাঁকা বুলি। কারণ আজও বিদ্যুতের মুখ দেখেননি দক্ষিণ দেয়ারক গ্রামের মানুষ। তাই এ বার লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীদের সেই পুরনো প্রতিশ্রুতিতে আর কান দিতে নারাজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার এই গ্রামের মানুষ। তাঁদের দাবি আগে বিদ্যুত্‌, পরে ভোট।

ডায়মন্ড হারবার-১ নম্বর ব্লকের দেয়ারক পঞ্চায়েতের প্রায় সবক’টি গ্রামে বিদ্যুত্‌ চলে এলেও দক্ষিণ দেয়ারক গ্রাম থেকে গিয়েছে আঁধারেই। বিদ্যুত্‌ না থাকায় জীবিকার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা। বিদ্যুতের অভাবে জল তোলার শ্যালো মেশিন কাজ না করায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে গ্রামে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রতি বছর ভোটের আগে এসে প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। কিন্তু আজও তাঁদের দিন কাটছে অন্ধকারে।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুনে কি প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলির?

ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল বিধায়ক দীপক হালদারের দাবি, “আমরা ক্ষমতায় আসার পরে ওই গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগের জন্য উদ্যোগী হয়েছি। ২০১২ সালে ওই গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। কিন্তু পাশের গোঠরা গ্রামের দিক থেকে সংযোগ দেওয়ার সময়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বাধা দেয়। ফলে দক্ষিণ দেয়ারক গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে কয়েক মাসের মধ্যে বিদ্যুত্‌ সংযোগের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

ডায়মন্ড হারবারে সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক সমর নাইয়া বলেন, “আমাদের সময়ে ওই গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। তারও লাগানো হয়েছিল। কিন্তু তা চুরি হয়ে যায়।”

গ্রামের প্রায় চার হাজার বাসিন্দার বেশিরভাগই চাষের কাজে যুক্ত। ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে প্রায় বারোশো জনের। গ্রামবাসীর অভিযোগ, গ্রামের উন্নয়ন বলতে কিছুই হয়নি। উস্থি মোড় থেকে ভ্যানে কুলেশ্বর বটতলা মোড় অবধি গিয়ে মিনিট পনেরো হাঁটলে গ্রামে ঢোকার মুখে কিছুটা রাস্তা ঢালাই করা। তার পর থেকে শুরু হয়েছে ইটের রাস্তা। বাসিন্দারা জানান, ২০-২৫ বছর আগে তৈরি ওই রাস্তা বর্তমানে সংস্কারের অভাবে জীর্ণ। বর্ষা কালে হাঁটা দায়। গ্রামে তিনটি নলকূপ থাকলেও সেগুলি প্রায় অকেজো। পানীয় জলের জন্য গ্রামের লোকের ভরসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপ। স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দ হালদার, শ্রীকান্ত সর্দার, সদানন্দ চক্রবর্তীরা জানান, উস্থির বড় খাল থেকে জল সরবরাহের জন্য বছর বারো আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে শ্যালো মেশিন বসানো হয়েছিল। প্রথম দিকে জেনারেটরের সাহায্যে জল তোলা শুরু হলেও মাসখানেক পরেই তা বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত হয়, বিদ্যুত্‌ এলে পাম্প চালিয়ে শ্যালো দিয়ে জল তোলা হবে। কিন্তু বিদ্যুত্‌ না আসায় সেই মেশিন আর চালু হয়নি। জলের অভাবে মার খাচ্ছে সব্জি চাষও।

বিডিও নির্মাল্য বাগচী বলেন, “দক্ষিণ দেয়ারক গ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ দিতে গেলে পাশের গ্রাম থেকে বাধা আসে। আমি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে বলেছি। রাস্তাঘাট ও পানীয় জলের বিষয়ে পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা হচ্ছে।”

বিদ্যুত্‌ সংযোগের অভাবে বিকল্প জীবিকারও সুযোগ নেই গ্রামবাসীদের। গ্রামে গড়ে ওঠেনি কোনও কুটিরশিল্প। এমনকী মোবাইল ফোনে চার্জ দিতে তিন কিলোমিটার পথ উজিয়ে উস্থি বাজার অবধি যেতে হচ্ছে। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, গ্রামের চার দিকে গোঠরা, উত্তর কুলেশ্বর, সর্দারপাড়া, রাধাবল্লভপুর, চৌসা বা নৈনান গ্রামে বিদ্যুত্‌ এলেও তাঁদের গ্রামে বিদ্যুত্‌ নেই। বিদ্যুত্‌ না থাকার জন্য নানা সমস্যার কথা বহু দিন ধরে প্রশাসন থেকে রাজনৈতিক দলগুলিকে জানিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। তাই এ বার তাঁদের দাবি, বিদ্যুত্‌ না পেলে ভোট নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election campaign dilip naskar diamond harbour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE