Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নিখোঁজ অসুস্থ মহিলার ধড়-মুণ্ড মিলল দু’জায়গায়

সন্ধ্যাবেলায় স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসে গল্পগুজব করেছিলেন। এর পরে স্বামী পাড়ায় বেরিয়ে যান ‘আড্ডা’ দিতে। ঘন্টা দুয়েক পরে ফিরে দেখেন স্ত্রী বাড়িতে নেই। বাতের যন্ত্রণায় অসুস্থ যে মহিলা কারও সাহায্য ছাড়া খুব একটা বাইরে বেরোতেন না, তিনি আশপাশের আত্মীয়ের বাড়িতেও নেই! তা হলে কোথায় গেলেন তিনি?

মেনকা বিশ্বাস

মেনকা বিশ্বাস

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০৩:০১
Share: Save:

সন্ধ্যাবেলায় স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসে গল্পগুজব করেছিলেন। এর পরে স্বামী পাড়ায় বেরিয়ে যান ‘আড্ডা’ দিতে। ঘন্টা দুয়েক পরে ফিরে দেখেন স্ত্রী বাড়িতে নেই। বাতের যন্ত্রণায় অসুস্থ যে মহিলা কারও সাহায্য ছাড়া খুব একটা বাইরে বেরোতেন না, তিনি আশপাশের আত্মীয়ের বাড়িতেও নেই!

তা হলে কোথায় গেলেন তিনি?

ঘটনার পাঁচ দিন পরে খোঁজ মিলল ওই মহিলার। তবে জীবিত নয়, মৃত অবস্থায়। তা-ও মিলল তাঁর শরীরের কিছু অংশ মাত্র। পুলিশ জানায়, ওই মহিলাকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন খণ্ড ফেলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু লিলুয়ার বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর ওই মহিলাকে কে বা কারা কেনই বা খুন করল তা নিয়ে রহস্য ক্রমশ দানা বাঁধছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৩ তারিখ, বৃহস্পতিবার রাতে লিলুয়ার ডি রোডের বাড়ি থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান মেনকা বিশ্বাস। সেই রাতেই লিলুয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তাঁর স্বামী সুনীল বিশ্বাস। পরের দিন, শুক্রবার ভোরে দক্ষিণেশ্বর ফেরি ঘাটের কাছে মাঝিরা প্লাস্টিক ও একটি বিছানার চাদরের কিছুটা অংশ দিয়ে জড়ানো অবস্থায় এক মহিলার কাটামুণ্ড দেখতে পায়। পরে বেলঘরিয়া থানার পুলিশ গিয়ে সেটি উদ্ধার করে। কপালে সিঁদুর ও কানে সোনার দুল দেখে পুলিশ বুঝতে পারে সেটি কোনও বিবাহিত মহিলার। পুলিশ জানায়, ওই কাটামুণ্ডর ছবি কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়। পাশাপাশি, মঙ্গলবার মেনকাদেবীর বাড়ির লোকও বেলঘরিয়া থানায় যোগাযোগ করেন। কাটামুণ্ডটি দেখে সেটি মেনকাদেবীর বলে শনাক্তও করেন তাঁরা।

এর মধ্যে মঙ্গলবারই লিলুয়ার ভট্টনগরের একটি ভেড়ি থেকে এক মহিলার বুক ও পেটের কাটা অংশ উদ্ধার হয়। সেটিও একই ভাবে একটি প্লাস্টিকের ভিতর বিছানার চাদরের কিছুটা অংশ দিয়ে মোড়া ছিল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, দু’টি অংশই একই চাদরের। এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীদের প্রাথমিক ভাবে ধারণা হয়, দেহাংশগুলি একই মহিলার এবং তা মেনকাদেবীরই। তবে এ ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে পুলিশ বুধবার এক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে দু’টি দেহাংশেরই একসঙ্গে ময়নাতদন্ত করায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, লিলুয়ারই কোনও নির্জন জায়গায় ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, মৃতা মহিলার স্বামী সুনীলবাবু স্থানীয় একটি কারখানার কর্মী। তিনি এবং তাঁর পাঁচ ভাইয়ের পরিবার ডি রোডে পাশাপাশি বাড়িতে থাকেন। পরস্পরের মধ্যে খুব সদ্ভাবও রয়েছে। তবে যে দিন মেনকাদেবী নিখোঁজ হন, সে দিন তাঁকে বাড়ি থেকে কেউ বেরোতে দেখেননি বলেই দাবি করেছেন পরিজনেরা। পুলিশ জানায়, ওই দম্পতির দুই মেয়ে বিবাহিত। এক জন থাকেন দানেশ শেখ লেনে, অন্য জন ডি রোডের কাছেই। এ দিন ডি রোডের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পড়শিদের জটলা। স্ত্রীর এমন পরিণতিতে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন সুনীলবাবু।

মেনকাদেবীর বড় মেয়ে শুক্লা ঘোষ বলেন, “আমাদের কোনও শক্র নেই। তা ছাড়া, মা খুবই অসুস্থ ছিলেন। বাতের জন্য ভাল করে হাঁটাচলা পর্যন্ত করতে পারতেন না। তাঁকে কেন নৃশংস ভাবে খুন করা হল, কে বা কারা করল তা আমরা বুঝতে পারছি না।”

তবে সুনীলবাবু ও শুক্লাদেবীর অভিযোগ, নিখোঁজ ডায়েরি করার পরে পুলিশ খুব একটা সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। এমনকী গত ১৪ তারিখ দক্ষিণেশ্বরে এক মহিলার কাটামুণ্ড উদ্ধারের পরে পুলিশ তাঁদের খবরও দেয়নি। নিজেদের উদ্যোগে বেলঘরিয়া থানায় গিয়ে ওই মুণ্ডটি তাঁরা শনাক্ত করে আসেন বলে দাবি করেছেন পরিজনেরা।

হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রথম দিন থেকেই গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। ঘটনার পরেই স্নিফার ডগ নেওয়া হয় ঘটনাস্থলে। গোয়েন্দা দফতরকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। তবে তদন্তে উঠে আসছে বেশ কিছু প্রশ্নও।

হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “কিছু সূত্র হাতে এসেছে। সব দিকই খতিয়ে দেখছি। তদন্তের জন্য ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE