উধাও হয়ে যাওয়া এই ফলক নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ছবি: নির্মল বসু।
মাস খানেক আগে নতুন করে শিলান্যাস করা হয়েছিল হাসনাবাদ সেতুর। কিন্তু হঠাৎই শিলান্যাসের ফলক উধাও হয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে ভোটের আগে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে।
২০০৬ সালে হাসনাবাদে কাটাখালি নদীর উপরে সেতুর প্রথম শিলান্যাস করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর বাম আমলে নদীর মধ্যে কেবল দু’টি পিলার বা স্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। বছর খানেক আগে সেতুর একটি পিলারে ত্রুটি ধরা পড়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা কয়েকবার এসে পিলারের অবস্থা সরেজমিন পরিদশর্ন করার পরে দু’টি পিলারই ভেঙে ফেলে নতুন করে সেতু তৈরির কথা বলেন। এর পরেই বর্তমান তৃণমূল সরকার আগের বাম সরকারের বিরুদ্ধে সেতু তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, পুরনো পিলার দু’টি ভেঙে ফেলে নতুন করে সেতু তৈরি করা হবে। সে জন্য ফের আগের চেয়ে আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে নতুন করে সেতুর শিলান্যাসও করা হয়। কিন্তু দিন কয়েক আগে শিলান্যাসের সেই ফলক উধাও হয়ে যাওয়ায় সেতুর কাজ আদৌ শুরু হবে কি না তা নিয়ে এলাকার মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ভোটের আগে এই ঘটনায় পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে পড়েছে বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপি।
বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “২০০৬ সালে সেতুর শিলান্যাস করে বামেরা এখানকার মানুষকে ভাঁওতা দিয়েছে। একই ভাবে বর্তমান রাজ্য সরকারেরও সেই মনোভাব থাকায় সেতুর ফলক উধাও হয়ে গিয়েছে।” সিপিআই প্রার্থী নুরুল হুদার বক্তব্য, ‘‘সেতুর কাজ শুরু হবে বলে নিবার্চনে ফায়দা তুলতে তৃণমূল শিলান্যাস করল। অথচ কাজই শুরু হল না। এখন শুনছি শিলান্যাসের ফলকটাই নেই।”
কংগ্রেস প্রার্থী কাজী আব্দুল রহিম (দিলু) বলেন, “বসিরহাটের মানুষ ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন হাসনাবাদ সেতু নিয়ে সিপিএম-তৃণমূল সমান। সিপিএমের বুদ্ধবাবু সেতুর শিলান্যাস করার পরে যেমন ফলক উধাও হয়ে গিয়েছিল, তেমন এখনও শুনছি তৃণমূলের বসানো ফলক উধাও হয়ে গিয়েছে। মানুষই বুঝে নিন, ওরা সত্যিই সেতু চায়, না কি বার বার শিলান্যাস করে সেতুর খরচের অঙ্ক বাড়িয়ে চলেছে।”
তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিস আলি বলেন, “তৃণমূলের আমলে নতুন করে সেতু তৈরির কথা জানতে পেরে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস মানুষের মধ্যে নানা ভাবে মিথ্যা প্রচার শুরু করেছে।”
সুন্দরবন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তুলসী চক্রবর্তী বলেন, “হাসনাবাদ সেতু এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। শিলান্যাসের ফলক উধাও হয়ে যাওয়ায় তা নিয়ে যে সব রটনা শুরু হয়েছে তাতে সেতু হবে কি না তা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি দূর করতে ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে।”
তবে শিলান্যাসের ফলক উধাও নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চললেও এ বিষয়ে বসিরহাট মহকুমা পূর্ত ও সড়ক দফতরের সহকারী বাস্তুকার রানা তারাং জানান, নতুন করে শিলান্যাসের পরে ফলক যাতে ভেঙে বা নষ্ট না হয়ে যায় সে জন্য তা খুলে রাখা হয়েছে। সেতু তৈরি হলে তা সেতুর গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy