ফোনে মায়ের কথা বলা হয়ে গেলে পাশে শুয়ে থাকা ছোট ছেলে সন্তু আবদার করেছিল, মা কোলে নাও। খানিকটা ঝাঁঝিয়ে উঠে মা বলেন, আমি মরে গেলে কে তোকে কোলে নেবে? তারপর এ পাশ ও পাশ করতে করতে চোখ লেগে এসেছিল সন্তুর। সকালে উঠে সে দেখতে পায়, বাড়ি থেকে খানিক দূরে মায়ের মৃতদেহ পড়ে আছে। বাবার নিথর দেহও পড়ে তার পাশে। মঙ্গলবার সকালে এ ভাবেই এক ঝটকায় অনাথ হয়ে পড়ল সন্তু আর তার কয়েক বছরের বড় দাদা সুমন।
ঘটনাটি গোপালনগর থানার গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের স্বামীজি কলোনি এলাকার। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম সুবোধ (৩৬) ও সুভাষিণী চৌধুরী (৩০)। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সুভাষিণীদেবীর বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কের জেরে এই কাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। সুবোধবাবুর ভাই স্বপনের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তের জন্য। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। তবে দ্রুত খুনের কিনারা করা হবে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুবোধবাবু বাড়িতেই একটি মুদির দোকান চালাতেন। চাষবাসও করতেন। বড় ছেলে সুমন পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। ছোট সন্তু তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। সোমবার সুমন তার কাকা স্বপনের সঙ্গে নদিয়ার মদনপুরে বেড়াতে গিয়েছিল। সন্তু এ দিন কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘রাত ৮টার সময়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তার আগে বাবার মোবাইলে মায়ের কাছে একটি ফোন এসেছিল। মাকে মেরে ফেলার কথা বলেছিল সে। কয়েক দিন আগে মায়ের ফোন বাড়ি থেকে চুরি হয়ে যায়। তাই বাবার ফোনটি মায়ের কাছে ছিল।” মা ফোন রাখার পরে তার সঙ্গে বাকি কথোপকথনের কথা জানিয়েছে সে নিজেই। কাঁদতে কাঁদতে বলে, “মা কাল ও কথা বলল। আজ থেকে সত্যি আর কখনও কোলে নেবে না আমাকে।”