Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

টেনশন কাটাতে কেউ পড়লেন বই, কেউ শুনলেন গান

পরীক্ষা শেষ। এ বার চূড়ান্ত মূহূর্তের অপেক্ষা। কারও সময় কাটছে চূড়ান্ত ব্যস্ততায়, কেউ আছেন খোশমেজাজে। কারও গলায় আবার ধরা পড়ছে কিঞ্চিৎ টেনশন। ভোট গণনার আগের দিন কেমন করে কাটালেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:০০
Share: Save:

পরীক্ষা শেষ। এ বার চূড়ান্ত মূহূর্তের অপেক্ষা। কারও সময় কাটছে চূড়ান্ত ব্যস্ততায়, কেউ আছেন খোশমেজাজে। কারও গলায় আবার ধরা পড়ছে কিঞ্চিৎ টেনশন। ভোট গণনার আগের দিন কেমন করে কাটালেন বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। দিনভর শ্রীরামপুরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। দলের নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায়, দিলীপ যাদবেরা ব্যস্ত ছিলেন গণনার দিন কর্মীদের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন নিয়ে।

জেতার ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী। কোথা থেকে এল এই আত্মবিশ্বাস? কল্যাণের জবাব, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ আর শ্রীরামপুর লোকসভা জুড়ে আমার কাজ, সবাই দেখেছেন। তা ছাড়া, গত আড়াই মাসে মানুষের মুখের প্রতিচ্ছবি যা দেখেছি, তাতে আমিই জিতছি। আর, সিপিএম এখন জনবিচ্ছিন্ন।’’ জানালেন, শুক্রবার দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে গণনাকেন্দ্রে আসবেন।

কল্যাণ যাই বলুন, সিপিএম প্রার্থী তীর্থঙ্কর রায়ের দাবি, তাঁর হাত ধরে শ্রীরামপুরে এ বার সিপিএমই জিতছে। তবে দলীয় কর্মীদের উপর হামলার আশঙ্কায় গণনার আশঙ্কা করছেন তিনি। বললেন, ‘‘গণনাকেন্দ্রের ভিতরেও গোলমাল করার চেষ্টা করা হতে পারে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বলব। জাঙ্গিপাড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাও জরুরি।’’ নিজের কেন্দ্রে ভোট মেটার পরে দলের নির্দেশে পূর্ব মেদিনীপুরে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে টানা প্রচার করেছেন। গত কয়েক দিন ধরে দলের বিক্ষেভ কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছেন। আবার অবসর সময়ে ফেসবুক ঘেঁটেছেন সিপিএমের অপেক্ষাকৃত নবীন প্রজন্মের এই প্রার্থী।


প্রার্থী-মুখ। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

শ্রীরামপুরে ভোট শেষ হতেই বিজেপি প্রার্থী বাপ্পী লাহিড়ী রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি-র প্রার্থীদের হয়ে দলীয় প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। দিন কয়েক আগে প্রচারের কাজ শেষ করে তিনি মুম্বই ফিরে যান। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীর একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামীকাল শ্রীরামপুরে ভোটগণনায় উপস্থিত থাকতে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে উঠছেন। আজ শুক্রবার ১২টা নাগাদ ভোট গণনা কেন্দ্রে তাঁর পৌঁছনোর কথা।

কংগ্রেসের পোড়খাওয়া প্রার্থী আব্দুল মান্নান জানালেন, আলাদা করে কোনও টেনশন হচ্ছে না তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ যা রায় দিয়েছেন, আগামীকালই তো দেখা যাবে।’’ শুক্রবার তিনি অবশ্য গণনাকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘এতবার বিধায়ক হয়েছি। কোনওদিন গণনাকেন্দ্রে ঢুকিনি। শুক্রবার চাতরা ঘোষপাড়ার বাড়িতেই থাকব বলে ঠিক করেছি।’’

গণনার আগের দিন সকালে নিজেকে চাপমুক্ত রাখতে পাড়ার ক্লাবে গিয়েছিলেন হুগলির সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহা। সেখানে আড্ডা দিয়েছেন, তাস খেলেছেন। ভোট মেটার পরে বিভিন্ন পার্টি অফিসে সময় কাটিয়েছেন। ফল যাই হোক, শুক্রবার চুঁচুড়ায় নির্মীয়মাণ প্রশাসনিক ভবনে গণনাকেন্দ্রে ঢোকার সময় মুড়ি-বাদাম সঙ্গে অবশ্যই থাকছে। ভোটের ফল নিয়ে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করতে নারাজ হুগলি জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি প্রদীপবাবু।

পরীক্ষার আগে প্রচুর পড়েও ছাত্রছাত্রীদের যেমন টেনশন থাকে, তাঁরও সেই অনুভূতি হচ্ছে বলে জানালেন হুগলির তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগ। রত্নাদেবীর বক্তব্য, ‘‘কিঞ্চিৎ টেনশন থাকলেও আমি আশাবাদী, মানুষ আমার পাশেই থাকবেন। কেননা, গত পাঁচ বছরের প্রতিটা দিন আমি মানুষের পাশে ছিলাম। অন্য দিনের মতোই শুক্রবার বাড়িতে পুজো করে গণনাকেন্দ্রে যাব।’’ ভোট মেটার পর বাড়িতে বই পড়ে, গান শুনে সময় কাটিয়েছেন।

কী বলছেন বিজেপি প্রার্থী চন্দন মিত্র?

কালকের সম্ভাব্য ফল নিয়ে আমি কোনও চাপবোধ করছি না। আমি অত্যন্ত আশাবাদী মানুষ। ভাল কিছুর-ই প্রত্যাশা করছি। আমার বাড়ির সামনে দিয়েই গঙ্গা বইছে। কাল সকালে মাথায় গঙ্গার জল দিয়ে গঙ্গা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে গণনা কেন্দ্রে পৌঁছব।”

ভোটের পরে হুগলির কংগ্রেস প্রার্থী প্রিতম ঘোষ ব্যাবসাপত্র সামলেছেন মন দিয়ে। বাড়িতে সময় দিয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার তাঁর দম ফেলার ফুরসত ছিল না। দলের কাউন্টিং এজেন্টদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছেন। বললেন, “জেতা-হারা তো বাক্সবন্দি। তবে আমি ভীষণভাবে লড়াইতে আছি।’’

বৃহস্পতিবার সারাদিন বাড়িতেই ছিলেন আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার (আফরিন আলি)। বললেন, “দু’লক্ষ থেকে তিন লক্ষ ভোটে জিতব। কোনও টেনশন নেই। শুধু মার্জিন নিয়ে কিছুটা ভাবনা রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। সিপিএম প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক জানালেন, “ভোটের ফল নিয়ে কোনও উৎকণ্ঠা নেই। জনগণের উপরে গভীর আস্থা রয়েছে। ফল যা-ই হোক, তৃণমূল সন্ত্রাস করবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।”

কংগ্রেস প্রার্থী শম্ভুনাথ মালিক ভোটের ফল নিয়ে একেবারে নির্বিকার। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন সমীক্ষায় আমাকে তো অনেক আগেই হারিয়ে দিয়েছে, চিন্তা এখন একটাই, তণনমূল তো আমাদের মারবে বলেইছে। ভোট জিতলে সিপিএমও মারবে বলেছে। আবার বিজেপিও কেন্দ্রে সরকারে গেলে মারবে বলছে। সবার কাছেই মার খেতে হবে ভেবে দুঃশ্চিন্তায় আছি।

বিজেপি প্রার্থী মধুসূদন বাগ এদিন আরামবাগ শহরময় চষে বেড়িয়েছেন। জানালেন, “উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। কারন আমার হারানোর কিছু নেই, কত শতাংশ ভোট পাওয়া গেল সেটা নিয়ে কৌতূহল আছে।”

আজ শুক্রবার সকাল থেকে অবশ্য গণনা কেন্দ্রে থাকছেন না উলুবেড়িয়া লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী সুলতান আহমেদ। জানালেন, “শুক্রবার কলকাতায় জুম্মার প্রার্থনা সেরে গণনা কেন্দ্রে ঢুকবো।” ৩০ এপ্রিল তাঁর কেন্দ্রে ভোট হয়ে গিয়েছিল। তার পর দলীয় প্রার্থীদের হয়ে বঁসিরহাট, ডায়মন্ডহারবার, জয়নগর প্রভৃতি এলাকায় প্রচার করে বেরিয়েছেন।

কংগ্রেস প্রার্থী অসিত মিত্র বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলেন বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে। বললেন, “শুক্রবার সকালেই আমি গণনা কেন্দ্রে চলে যাব। আমার দলের পোলিং এজেন্টের পাশে আমাকে থাকতে হবে। এই কয়েকদিনে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ঝাড়গ্রামে ভোটের প্রচারে গিয়েছিলাম।”

সিপিএম প্রার্থী সাবিরুদ্দিন মোল্লা গণনা কেন্দ্রে থাকবেন কর্মীদের সঙ্গে। ভোট হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই কয়েকদিন ঘুম থেকে একঘন্টা দেরি করে উঠেছেন। জেতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী সাবির বলেন, “আমি জিতছি। তাই কোনও চাপ নই।’’

বিজেপি প্রার্থী রঞ্জিত কিশোর মোহান্তি এই ক’দিন চাপ কাটাতে কর্মীদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন। অন্য কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচার করেছেন।

হাওড়া কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শ্রীদীপ ভট্টাচার্য জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। বলেন, “চাপ থাকলেও দলের নানা কাজে যুক্ত রয়েছি। বই পড়াতো আছেই। আমার চাপ তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে।”

তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “মাঠে খেলার সময়ে বহু চাপ নিতে হয়েছিল। তাই নির্বাচনে জয় পরাজয় আমার ওপরে প্রভাব ফেলে না। জানি এক ভোটে হলেও আমি জিতব।”

জয়-পরাজয় নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ পাণ্ডে বললেন, “আমি অনেক উত্থান পতন দেখেছি। তাই জয় পরাজয় নিয়ে মাথা ঘামাই না। আশায় আছি হাওড়ার মানুষ কী রায় দেন। তবে আমি জেতার বিষয়ে আশাবাদী।”

প্রচণ্ড চাপে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী জর্জ বেকার। জানালেন, “গণতান্ত্রিক ভাবে ভোট হলে মোদি সুনামির সামনে কেউ ধোপে টিকত না। কিন্তু যে ভাবে রিগিং করে ভোট হয়েছে তাতে আমি যথেষ্টই হতাশ। প্রচণ্ড চাপে শুধু টেলিভিশনের সামনে খবরের চ্যানেল চালিয়ে বসে আছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vote counting kalyan bappi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE