খোলা শ্মশানের পরিবর্তে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লির দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। মেয়াদ শেষ হওয়ার মুখে তৃণমূল শাসিত উলুবেড়িয়া পুরসভা দাবি করল, স্থান নির্বাচন হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। কিন্তু তাতে এলাকাবাসীর সংশয় যাচ্ছে না। কেননা, পাঁচ বছর ধরে তাঁরা প্রায় একই রকম আশ্বাস শুনছেন বলে জানিয়েছেন। কেউ কেউ পুরসভার ওই দাবিকে ‘কুমিরছানা দেখানো’ বলেও মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, এ জন্য এখনও দরপত্রই ডাকা হয়নি।
উলুবেড়িয়ার বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বছর পাঁচেক আমলে। বাম শাসিত পুরবোর্ডের আমলে। ২০১০ সালে বামফ্রন্টকে সরিয়ে পুরসভায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। চলতি বছরের ১০ জুলাই শেষ হয়ে চলেছে পুরবোর্ডের মেয়াদ। সম্প্রতি বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির বিষয় অনুমোদিত হয়েছে বলে পুর কর্তৃপক্ষের দাবি। পুরসভার চেয়ারম্যান দেবদাস ঘোষ বলেন, “চেঙ্গাইলের চককাশিতে শীঘ্রই চুল্লি তৈরির কাজ শুরু করা হবে। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁরা চুল্লি তৈরিতে কোনও আপত্তি করবেন না বলে জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান পারিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্তটি অনুমোদিত হয়েছে।”
উলুবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা বর্তমানে দেহ দাহ করেন শতমুখী শ্মশান, নাকুবাবুর শ্মশান, গঙ্গারামপুর শ্মশান বা জেলেপাড়া শ্মশানে। অধিকাংশ শ্মশানে কোনও পরিকাঠামো নেই। কয়েকটি জায়গায় খালি ছাউনি বা দাহ করার জায়গা রয়েছে। উলুবেড়িয়া হাসপাতালের বেওয়ারিশ দেহ পোড়ানো হয় জগদীশপুরে গঙ্গার ধারে। ফলে, এলাকায় দূষণ ছড়ায় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার আগের বাম পরিচালিত পুরবোর্ড বৈদ্যুতিক চুল্লি করার জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। কাজটি করার কথা ছিল কেএমডিএ-র। প্রাথমিক ভাবে তারা পুরনো হাসপাতালের কাছে একটি জায়গা নির্বাচন করেছিল। কিন্তু কাজ শুরু করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুরসভা। স্থানীয় মানুষ জানিয়ে দেন, এই এলাকায় বৈদ্যুতিক চুল্লি হলে পরিবেশ দূষণ হবে। এর পরে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় বাম পরিচালিত পুরবোর্ড।
তার পর থেকে পাঁচ বছর ধরে শুধু জায়গা খুঁজে বেড়িয়েছে বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। টাকা এসেও পড়ে রয়েছে পুরসভার তহবিলে। আগের দফায় চুল্লি না হওয়ায় জন্য তৃণমূল যেমন বামেদের দোষে, তেমনই বর্তমান পুরবোর্ডের আমলেও এ পর্যন্ত ওই চুল্লি না হওয়ার জন্য শাসক দলকেই দুষছে বামেরা। তৃণমূল নেতাদের দাবি, ক্ষমতায় এসেই চুল্লি তৈরিতে তাঁরা নজর দেন। প্রথমে ঠিক হয় শতমুখী শ্মশানে চুল্লি বসানো হবে। কিন্তু যাতায়াতের রাস্তা ঠিকমতো না থাকায় সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়।
চককাশীতে চুল্লি বসানোর জন্য জায়গা দেখা হলেও পাঁচ বছর আগের বরাদ্দ হওয়া দেড় কোটি টাকায় সেই কাজ আদৌ কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করেছেন, “চুল্লির খরচ দেড় কোটি থেকে বাড়িয়ে দু’কোটি টাকা করা হয়েছে। বাড়তি টাকা তারা দেবে বলে কেএমডিএ জানিয়েছে। কোনও অসুবিধা হবে না।”
বাসিন্দারা বলছেন, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy