বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ের ক্ষেত্রে আজ, বুধবার থেকে জরিমানা এবং সুদ মকুবের ‘ওয়েভার স্কিম’ চালু করছে হাওড়া পুরসভা। প্রাথমিক ভাবে হাওড়া পুরসভায় আগামী ছ’মাস পর্যন্ত ওয়েভার স্কিম চালু রাখার অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রের খবর, পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্কিমের মেয়াদ আরও ক’মাস বাড়ানো হতে পারে। প্রসঙ্গত, বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ের জন্য হাওড়া পুরসভায় এই প্রথম ‘ওয়েভার স্কিম’ চালু হচ্ছে।
মঙ্গলবার নবান্নে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বকেয়া সম্পত্তিকর দাতাদের জরিমানা এবং সুদ মকুবের (ওয়েভার স্কিম) জন্য হাওড়া পুর-কর্তৃপক্ষ রাজ্যের অর্থ এবং পুর দফতরে আবেদন করেন। অর্থ এবং পুর দফতর সেই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ছ’মাসের জন্য ‘ওয়েভার স্কিম’ চালু রাখার অনুমোদন দিয়েছে।” পুরমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন নবান্নে উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী এবং ডেপুটি মেয়র মিনতি অধিকারী।
হাওড়া পুরসভার মেয়রের অভিযোগ, বিগত বাম বোর্ড বছরের পর বছর এক দিকে যেমন করের পুনর্মূল্যায়ন করেনি, তেমনই কর আদায়ের ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত ভাবে উদ্যোগী হয়নি। উল্টে পুরসভার অর্থ সঙ্কটের দোহাই দিয়ে পরিষেবার কাজ শিকেয় তুলে দিয়েছিল। মেয়র জানান, এই মুহূর্তে পুরসভার বকেয়া সম্পত্তিকরের পরিমাণ আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা। বকেয়া করের জরিমানা এবং সুদ মিলিয়ে পাওনার পরিমাণ প্রায় ৩৫০ কোটি। মূল বকেয়া কর, জরিমানা ও সুদ মিলিয়ে পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা।
পুরমন্ত্রী জানান, ওয়েভার স্কিমের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার দায়িত্ব নিয়েছে হাওড়া পুরসভা। পুরকর্তারা জানান, করদাতাদের সুবিধার জন্য প্রয়োজনে বরো কমিটির দফতরেও বকেয়া কর জমা নেওয়ার ব্যবস্থা হবে।
এ দিন নবান্ন থেকে ফিরে হাওড়া পুরসভায় বসে মেয়র অভিযোগ করেন, আগের পুর-বোর্ড চেয়েছিল ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে পুরসভার আর্থিক সঙ্গতিকে একেবারে পঙ্গু করে দিতে। এ জন্য কয়েক বছর আগে পুরসভার কম্পিউটার দফতরের ‘সাভার্র’ ইচ্ছাকৃত ভাবে খারাপ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে হাজার হাজার বাড়ির সম্পত্তিকরের গুরুত্বপূর্ণ নথি আটকে গিয়েচিল কম্পিউটারের মধ্যে। এ জম্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে করের বিল পাঠানো থেকে শুরু করে মিউটেশনের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বকেয়া পড়ে যায় কয়েকশো কোটি টাকা।
রথীনবাবু বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি বাম বোর্ডের আমলে বহু বহুতল বাড়ির সম্পত্তিকরের বিল একটা টিনের চালের একতলা বাড়ি হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল। আবার অনেক বসতবাড়ি, অফিস, কারখানা বা গুদামের কোটি কোটি টাকা কর বকেয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে বাম বোর্ড তাঁদের কাছ থেকে কর আদায় করতে উৎসাহ দেখায়নি।”
মেয়র জানান, এত দিন নিয়মিত করের বিল দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বহু মানুষ ইচ্ছা করলেও কর জমা দিতে পারেননি। অনেকেরই বকেয়া করের সঙ্গে সুদ ও জরিমানা যোগ হয়ে অনেক টাকা বকেয়া থেকে গিয়েছে। কিন্তু এই স্কিম চালু হওয়ায় বহু সাধারণ মানুষের উপকার হবে। পুরসভাও নাগরিকদের সমস্ত রকমের সাহায্য করবে।
বর্তমান মেয়রের সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে বিগত বাম বোর্ডের তরফে হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র মমতা জায়সবাল বলেন, “এই সরকার সম্পূর্ণ মিথ্যার উপরে গড়ে উঠেছে। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার জানা ছিল না যে, ৪০০-৫০০ কোটি টাকার কর বকেয়া আছে। আমরাও ওয়েভার স্কিমের জন্য বারবার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এই সরকার সৌজন্যমূলক উত্তরও দেয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy