Advertisement
E-Paper

বেআইনি বাড়ি-কারখানা ৬৬টি মৌজায়, ব্যবস্থা জেলা পরিষদের

কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র আওতাধীন গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বা কারখানা করতে হলে জেলা পরিষদের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু জেলা পরিষদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পঞ্চায়েতের কাছ থেকে বেআইনি ভাবে অনুমতি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে হাওড়ার পাঁচটি ব্লকের ৬৬টি মৌজায় একের পর এক বাড়ি ও কারখানা গড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০০:০৪

কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)-র আওতাধীন গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বা কারখানা করতে হলে জেলা পরিষদের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন বাধ্যতামূলক। কিন্তু জেলা পরিষদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পঞ্চায়েতের কাছ থেকে বেআইনি ভাবে অনুমতি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে হাওড়ার পাঁচটি ব্লকের ৬৬টি মৌজায় একের পর এক বাড়ি ও কারখানা গড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ফলে, এ জন্য আয় বাড়ছে না জেলা পরিষদের। সেই খামতি পূরণ করতে এ বার বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করল জেলা পরিষদ।

জেলা পরিষদের দাবি, বেআইনি ভাবে নির্মিত বাড়ি ও কারখানা ভবনগুলিকে নিয়ে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরিমানাও করা হচ্ছে।

জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য বলেন, “বেআইনি নির্মাণ রুখতেই হবে। এ জন্য যা করণীয় তা করা হবে। সমস্যা দূর করতে নিয়ম করেছি, বাড়ি তৈরির অনুমতি চেয়ে যে সব দরখাস্ত জমা পড়বে সেগুলি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করা হবে। যাঁদের কাগজপত্র ঠিক থাকবে, সেই সব বাড়ির অনুমতি সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হবে।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বালি-জগাছা, সাঁকরাইল, ডোমজুড়, পাঁচলা এবং উলুবেড়িয়া-২— এই পাঁচটি ব্লকের মোট ৬৬টি মৌজা বছর দশেক আগে কেএমডিএ-র আওতাভুক্ত হয়। এই সব মৌজায় বাড়ি তৈরি করতে হলে জেলা পরিষদের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন বাধ্যতামূলক। বাড়ি তৈরির অনুমতি চেয়ে যে সব আবেদনপত্র জমা পড়ে, তার নকশা জেলা বাস্তুকার খতিয়ে দেখেন। জমির মিউটেশন এবং চরিত্র বদল হয়েছে কিনা, নিয়ম মেনে নিকাশি ও রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়া হয়েছে কিনা, সে সব যাচাই করা হয়। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তবেই বাড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া হয়। একই নিয়ম প্রযোজ্য কারখানাগুলির ক্ষেত্রেও। এ জন্য জমি বা কারখানার মালিককে নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়।

কিন্তু প্রায় গোড়া থেকেই ওই নিয়ম খাতায়-কলমে রয়ে গিয়েছে বলে মানছেন জেলা পরিষদের কর্তাদের একাংশই। তাঁদের বক্তব্য, জেলা পরিষদের পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। বেআইনি বাড়িগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যে লোকবল দরকার তা নেই। তা ছাড়া, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বেআইনি বাড়িগুলির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য পুলিশ বা অন্যান্য সহায়তাও মেলে না বলে তাঁদের অভিযোগ। এই অভিযোগ উড়িয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ কখনই যথাযথ ভাবে আবেদন করে না।

হাওড়া

• বাড়ি তৈরির অনুমতি চেয়ে যে সব আবেদনপত্র জমা পড়ে জেলা পরিষদে, তার নকশা জেলা বাস্তুকার খতিয়ে দেখেন।

• জমির মিউটেশন এবং চরিত্র বদল হয়েছে কিনা, নিকাশি ও রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়া হয়েছে কিনা, যাচাই করা হয়।

• সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বাড়ি তৈরির অনুমতি মেলে।

• একই নিয়ম প্রযোজ্য কারখানাগুলির ক্ষেত্রেও। এ জন্য জমি বা কারখানার মালিককে নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হয়।

একটি সমীক্ষা চালানোর পরে জেলা পরিষদ জানিয়েছে, বাড়ি বা কারখানা তৈরির অনুমতি দিতে তাদের দেরি হলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতই তা বেআইনি ভাবে দিয়ে দিচ্ছে এবং এ বাবদ ফি নিচ্ছে। কিন্তু ওই সব ভবন কেএমডিএ-র নির্দিষ্ট বিধি মেনে হচ্ছে না। যদিও, এ ব্যাপারে কোনও পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেনি জেলা পরিষদ।

মাঝারি ও ছোট শিল্প-কারখানাগুলি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পায়। এ বিষয়ে সুপারিশের জন্য জেলা শিল্পকেন্দ্রে একটি কমিটি থাকার কথা। ভর্তুকি পাওয়ার অন্যতম শর্ত, কারখানা-ভবন প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে তৈরি হয়েছে কি না, তা দেখা। ওই কমিটির তত্ত্বাবধানেই তা দেখার কথা। কমিটির সভাপতি হওয়ার কথা জেলা সভাধিপতির। কিন্তু তৃণমূলের নেতৃত্বে জেলা পরিষদে নতুন বোর্ড গঠিত হওয়ার পরে প্রায় ছ’মাস কেটে গেলেও এখনও ওই কমিটিই তৈরি হয়নি। ফলে, হয়নি কমিটির কোনও বৈঠকও। অবশ্য আগের বামশাসিত জেলা পরিষদের শেষ এক বছরও কোনও বৈঠক হয়নি বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে আগের বামশাসিত জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে জেলায় নতুন শিল্প তো আসেইনি, তা-হলে আর ভর্তুকির প্রশ্নে বৈঠক হবে কী করে?’’ পক্ষান্তরে, জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কারখানা প্রচুর এসেছে। তাদের কাছ থেকে আগে বেআইনি ভাবে ক্ষীর খেয়েছেন আগের বামশাসিত জেলা পরিষদের কর্তারা। আমরা বহু বেআইনি ভাবে নির্মিত কারখানাকে ধরেছি। অনেকের বেআইনি অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’’ জেলা শিল্পকেন্দ্রের এক কর্তা জানিয়েছেন, শীঘ্রই জেলা সভাধিপতির নেতৃত্বাধীন কমিটি গড়তে উদ্যোগী হওয়ার জন্য জেলা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হবে।

illegal construction howrah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy