Advertisement
E-Paper

ভোট নষ্ট নয়, ‘না’-য় ভোট দিয়েই প্রতিবাদ খানপাড়ায়

নেই রাজ্যের দেওয়াল জুড়ে ‘না’। ভাল রাস্তা নেই, জল নেই, নিকাশি নেই। সরকারি ভাতাও অমিল। স্বরূপনগরের খানপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাই ঠিক করেছেন এ বার ভোট হবে ‘নোটা’-য়। গ্রামের দেওয়ালে বড় করে লেখা হয়েছে ‘না’। সকলেই যাতে একযোগে ‘না’ বোতাম টেপেন, তার জন্য দিনরাত এক করে সকলকে সংগঠিত করা হচ্ছে। মিছিল হচ্ছে। গ্রামবাসীর বক্তব্য, নিজেদের ভোট দেওয়ার অধিকার নষ্ট করতে চান না। বরং ‘না’ ভোট দিয়ে তাঁরা জানাতে চান, কোনও রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকেই তাঁদের পছন্দ নয়।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:২৩
না-ভোট দেওয়ার ডাক দিয়ে চলছে দেওয়াল লিখন। ছবি: নির্মল বসু।

না-ভোট দেওয়ার ডাক দিয়ে চলছে দেওয়াল লিখন। ছবি: নির্মল বসু।

নেই রাজ্যের দেওয়াল জুড়ে ‘না’।

ভাল রাস্তা নেই, জল নেই, নিকাশি নেই। সরকারি ভাতাও অমিল।

স্বরূপনগরের খানপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাই ঠিক করেছেন এ বার ভোট হবে ‘নোটা’-য়। গ্রামের দেওয়ালে বড় করে লেখা হয়েছে ‘না’। সকলেই যাতে একযোগে ‘না’ বোতাম টেপেন, তার জন্য দিনরাত এক করে সকলকে সংগঠিত করা হচ্ছে। মিছিল হচ্ছে। গ্রামবাসীর বক্তব্য, নিজেদের ভোট দেওয়ার অধিকার নষ্ট করতে চান না। বরং ‘না’ ভোট দিয়ে তাঁরা জানাতে চান, কোনও রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকেই তাঁদের পছন্দ নয়।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ বিধানসভা এলাকার অন্তর্গত স্বরূপনগরের বিধারী-হাকিমপুর পঞ্চায়েতের খানপাড়ায় ভোটার ৮৪০ জন। ওই পঞ্চায়েতের ২৬টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্টের দখলে ১৬টি, তৃণমূলের দখলে ৯টি, কংগ্রেসের দখলে ১টি আসন। গত ৪০ বছরে মাত্র এক বারই গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছিল তৃণমূল।

হাকিমপুর-তেঁতুলিয়া রোড থেকে বেরিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা বাংলাদেশ সীমান্তের খানপাড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়ে বিথারীর পবনকাটি গ্রামে মিশেছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন বামেরা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সেখানে কোনও উন্নয়ন হয়নি। তিন কিলোমিটার রাস্তার বেশির ভাগটাই এখনও মাটির। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন খানিকটা ইট বসানো হলেও তার বেশির ভাগ অংশই উঠে গিয়েছে। ইটের টুকরো মাটির উপর এমন ভাবে বেরিয়ে রয়েছে, যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাটির দেওয়াল জুড়ে বিরাট করে লেখা ‘না’। গ্রামের বাসিন্দা মির্জা সাদিক আহমেদ, হায়দার গাজিরা বলেন, “আমরা এত দিন সিপিএমকেই সমর্থন করেছি। কিন্তু দেখলাম, সবই ধাপ্পাবাজি। কোনও উন্নয়ন হয়নি। দলের বিরুদ্ধে যেতে চাই না। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের প্রতি আমরা বীতশ্রদ্ধ। কয়েক জনের কথা শুনে চলতে হয় বলে পঞ্চায়েত সদস্য বা প্রধান কোনও কাজ করতে পারেন না।” গ্রামের বর্ষীয়াণ সিপিএম নেতা মির্জা মেপ্তাউদ্দিন আহমেদের দাবি, ভূমিহীন খেতমজুরদের পক্ষে কথা বলায় হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে তাঁকে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

গ্রামের সেরিনা বিবি, মিনা খান, আকিয়া বিবি, সাকিনা বিবি, আনারুল গাজিদের অভিযোগ, “গ্রীষ্মে ভাঙা রাস্তার ধুলোয় ঘরবাড়ি নোংরা হয়। বর্ষায় জল ঢুকে যায় ঘরে। নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই। রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও জিনিস মেলে না।

জব কার্ড আছে, তবু কাজ পেতে টাকা দিতে হয়। এক জনের নামে বিপিএল কার্ড রয়েছে, অথচ ঘর পায় অন্য জন। বিধবা ভাতা বা বার্ধক্য ভাতাও অমিল।”

সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য এবং প্রধানও। পঞ্চায়েত সদস্য সেরিনা বেগম বলেন, “সবে মাত্র পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছি। সাধ্য মতো গ্রামের উন্নয়নের চেষ্টা করছি। গ্রামের মানুষদের বোঝাব, যাতে ওঁরা যেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।” পঞ্চায়েত প্রধান তুহিনা সর্দারেরও বক্তব্য, “কারা কাকে ভোট দেবেন, বলতে পারব না। তবে খানপাড়ার মানুষের দাবি সঠিক। আমরা ওই গ্রামের এক কিলোমিটার রাস্তা কংক্রিট করার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা ধার্য করেছি। ভোটের দিন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। ভোটের পরে কাজ শুরু হবে।”

স্বরূপনগর ব্লক তৃণমূল সভাপতি রমেন সর্দার বলেন, “ওখানে পঞ্চায়েতের প্রতি গ্রামবাসীদের ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরা ‘না’ ভোট দেওয়ার জন্য দেওয়াল লিখেছেন বলে শুনেছি। তবে আমাদের কর্মীরা ওঁদের ভোট দেওয়ার জন্য বোঝাচ্ছেন।”

বুঝিয়ে-সুজিয়ে ভোট আদায়ের দিন যে শেষ, তা কিন্তু এ বার বুঝিয়েই ছাড়তে চাইছে খানপাড়া।

no-vote bongaon-khanpara nirmal basu basirhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy