Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ঘরে ফেরাল পুলিশ

বাগদা থানায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অনুপ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বাগদা থানায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অনুপ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগদা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

তিন সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হয়ে যায় ছেলে। নানা জায়গায় খুঁজেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মুর্শিদাবাদ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন বাবা-মা। কিন্তু বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও কোনও খোঁজ না পেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার পুলিশের সাহায্যে বাবা-মায়ের কাছে ফিরল ছেলে।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, মানসিক ভারসাম্যহীন অনুপ মল্লিক গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদের খোশবাগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। মুর্শিদাবাদ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হলেও পুলিশ কোনও সুরাহা করতে পারেনি। গত শুক্রবার সকালে বাগদার ঝুপা এলাকায় একটি মন্দির ঢুকে ‘পাগলামো’ শুরু করে অনুপ। স্থানীয় লোকজন তাঁকে আটকাতে গেলে সে বিগ্রহের ত্রিশূল নিয়ে লোকজনদের তাড়া করে। খবর পয়ে বাগদা থানার পুলিশ গিয়ে তাকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। ওসি গোপাল বিশ্বাস বলেন, “যুবকটিকে থানায় আনার পর অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করলেও নিজের নাম-ধাম বলতে পারেনি। পরে দেখি ওর হাতে উল্কিতে অনুপ লেখা রয়েছে।” ওই দিনই তাকে বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতকে পেট্রাপোলে ভবঘুরেদের যে আশ্রয় রয়েছে সেখানে রাখতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে আট দিনের মধ্যে তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসককে দেখিয়ে পুলিশকে রিপোর্ট দিতে বলেন।

তবে পেট্রাপোলে ভবঘুরেদের ওই আশ্রয়ে পুলিশ অনুপকে রাখতে পারেনি। কারণ হিসাবে তারা জানায়, সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীনদের ওখানে রাখা হয়। ওই দিনই অনুপকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তার সঙ্গে কথাবার্তার পর তদন্তকারী অফিসাররা জানতে পারেন খোশবাগ নামটি। এর পর খোশবাগ কোথায় তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। বাগদা থানাতেই কর্মরত রয়েছেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা দুই পলিশকর্মী। তাঁদের কাছে সব জেনে ওসি অনুপের নাম-ধাম-বিবরণ দিয়ে মুর্শিদাবাদ থানায় মেসেজ পাঠান। শনিবার সকালে মুর্শিদাবাদ থানার সাহায্যে অনুপের সমস্ত খবর জানতে পারে বাগদা থানার পুলিশ। ফোনে তাঁর বাবার সঙ্গে কথা হয়। বাবা চরণ মল্লিক পেশায় দিনমজুর। শনিবার রাতে তিনি বাগদা থানায় আসেন। রবিবার সকালে বনগাঁ হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে শনাক্ত করেন তিনি। পরে অনুপও বিচারকের সামনে বাবাকে চিনতে পারে। ছেলেকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য চরণবাবুকে নির্দেশ দেন বিচারক।

তবে কী ভাবে সে বাগদায় চলে এল তা জানাতে পারেনি অনুপ। চরণবাবু বলেন, “চার ছেলেমেয়ের মধ্যে অনুপই বড়। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছে। আমার সঙ্গে কাজ করত। কিছুদিন ধরেই ওর মানসিক অসুস্থতা বেড়ে গিয়েছিল। হঠাৎই একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। থানায় ডায়েরি করেছি, অনেক খুঁজেছি। কিন্তু কোনও সন্ধান পাচ্ছিলাম না। বাগদা থানার পুলিশ সাহায্য না করলে হয়তো ছেলেকে ফিরেই পেতাম না।” যদিও বাগদা থানার পুলিশের বক্তব্য, তাঁরা বিশেষ কিছুই করেননি। কর্তব্যই পালন করেছেন। ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি মা নমিতাদেবীও। জানালেন, “এ বার থেকে ছেলেকে চোখে চোখে রাখব।” ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থাও করে দেন ওসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bagda menta patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE