Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাস্তার ধারে পাথরকুচির গাদা, ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল যুবকের

রাস্তার ধারে যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে ইমারতি দ্রব্য। তার ফলে দুর্ঘটনায় পড়েছেন পথচারীরা। মৃত্যুও হচ্ছে তাঁদের। বৃহস্পতিবার সকালে উলুবেড়িয়ার কালীনগর চৌরাস্তার মোড়ে এমনই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন এক যুবক।

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাস্তা জুড়ে পড়ে বালি।ছবি: সুব্রত জানা।

আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রাস্তা জুড়ে পড়ে বালি।ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০১:২৬
Share: Save:

রাস্তার ধারে যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে ইমারতি দ্রব্য। তার ফলে দুর্ঘটনায় পড়েছেন পথচারীরা। মৃত্যুও হচ্ছে তাঁদের। বৃহস্পতিবার সকালে উলুবেড়িয়ার কালীনগর চৌরাস্তার মোড়ে এমনই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন এক যুবক।

পুলিশ জানায়, পালপাড়ার বাসিন্দা ষষ্ঠী চক্রবর্তী (২১) এ দিন উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোড ধরে উলুবেড়িয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। উল্টোদিক থেকে আসছিল একটি ট্রাক। রাস্তার ধারে ডাঁই করে রাখা ছিল পাথরকুচি। ট্রাক দেখে তিনি ফুটপাথের দিকে সরে যেতে গেলে পাথরকুচির উপরে মোটরবাইকটি উঠে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি ছিটকে পড়েন ট্রাকের মুখে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ষষ্ঠীর। এ দিনই সন্ধ্যায় উলুবেড়িয়ার যদুরবেড়িয়া-রথতলায় উলুবেড়িয়া আমতা রোডে দুর্ঘটনায় পড়েন আরও এক যুবক। রাস্তার ধারে ফেলে রাখা বালির জন্য তিনি ফুটপাথের দিকে সরে যেতে পারেননি। ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন তিনি। তাঁকে উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

হাওড়া জেলা জুড়েই এই ধরনের ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে। এর আগেও একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। নগরায়ণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে পাকা বাড়ির সংখ্যা। পাড়ার পাড়ায় গড়ে উঠেছে ইমারতি দ্রব্যের দোকান। বাগনান, আমতা, শ্যামপুর, পাঁচলা সর্বত্রই রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে অধিকাংশ ইমারতি দ্রব্যের দোকান। বালি ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে বালি এনে রাস্তার ধারেই ফেলে রাখেন। পরে ভ্যান রিকশায় চাপিয়ে সেই বালি নিয়ে যাওয়া হয় নির্মাণের জায়গায়।

দুর্ঘটনার পরে স্টোন চিপস সরিয়ে দিচ্ছেন ক্ষুব্ধ জনতা।

ইমারতি দ্রব্যের দোকান বা বালি ব্যবসায়ীদের এই কাজের ফলে রাস্তার ধারে ফুটপাথ বলে কিছুই আর থাকছে না বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ফলে সাইকেল আরোহী বা মোটরবাইক আরোহীরা ফুটপাতের দিকে সরে আসতে পারেন না। একই সমস্যা হয় পথচারীদের ক্ষেত্রেও।

বাগনান-বাকসি রোডে কাজিবেড়িয়া মোড়ের বছর দুই আগে একটি দুর্ঘটনায় মারা যান এক পথচারী। অভিযোগ ছিল, রাস্তার ধারে সার দিয়ে রাখা ছিল ইট। ট্রাক সামনে এসে পড়ায় ওই পথচারী আর ফুটপাথের দিকে সরে যেতে পারেননি। ট্রাকের ধাক্কায় তিনি মারা যান। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা ছড়ায়। রাস্তার ধারে এ ভাবে ইমারতি দ্রব্য রাখার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা পথ অবরোধ করেন।

প্রায় একই সময়ে পাঁচলায় মুম্বই রোডের ধারে মারা যান এক সাইকেল আরোহী। অভিযোগ, রাস্তার ধারে ডাঁই করে রাখা ছিল বালি। একটি ট্রাক ফুটপাতের দিকে চেপে আসায় ওই সাইকেল আরোহী বালির উপরেই ছিটকে পড়েন।

ট্রাকের চাকা তাঁকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ওই ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ বালি ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবারে কালীনগর মোড়ের কাছের ঘটনার পরেই ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। বিক্ষোভ দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তার ধারে ইমারতি দ্রব্য রাখার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানান।

পুলিশও অবশ্য স্বীকার করেছে রাস্তার ধারে এ ভাবে ইট, বালি ফেলে রাখার জন্য সমস্যা হয়। এ বার থেকে এ সব রুখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “রাস্তার ধারে ইমারতি দ্রব্য ফেলে রাখা যাবে না। আমরা অভিযান চালাব। বেআইনি ভাবে যে সব ব্যবসায়ী এ সব কাণ্ড করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কিন্তু শেষমেশ কতগুলি প্রাণের বিনিময়ে তৎপর হবে পুলিশ-প্রশাসন, কবেই বা হুঁশ ফিরবে ব্যবসায়ীদের, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uluberia road accident died illegal roadblocks
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE