Advertisement
E-Paper

শেষ দেখে ছাড়বেন, হুঁশিয়ারি অর্জুন সিংহের

পুলিশের হাতে হেনস্থা এবং নিজের দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে তাতে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে শাসক দলেরই বিধায়ক হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, “শেষ দেখে ছাড়ব!” পুলিশি আচরণের প্রতিবাদে শাসক দলের অঙ্গুলি হেলনেই এলাকায় অঘোষিত বন্ধ পালন হচ্ছে। পুলিশ কমিশনারেটের সামনে হচ্ছে বিক্ষোভ। তৃণমূলের তিন বছরের জমানায় এই প্রথম এমন ঘটনার সাক্ষী হল রাজ্য!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০২:৪৬

পুলিশের হাতে হেনস্থা এবং নিজের দলের নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে তাতে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে শাসক দলেরই বিধায়ক হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, “শেষ দেখে ছাড়ব!” পুলিশি আচরণের প্রতিবাদে শাসক দলের অঙ্গুলি হেলনেই এলাকায় অঘোষিত বন্ধ পালন হচ্ছে। পুলিশ কমিশনারেটের সামনে হচ্ছে বিক্ষোভ। তৃণমূলের তিন বছরের জমানায় এই প্রথম এমন ঘটনার সাক্ষী হল রাজ্য!

ভাটপাড়ার এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিক্ষুব্ধ বিধায়কের নাম অর্জুন সিংহ। পুলিশমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহে ভিন্ন তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক শিবির। আরও তাৎপর্যপূর্ণ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৃণমূল বিধায়কের ক্ষোভ প্রশমনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে কোনও চেষ্টা হয়নি! আর অর্জুন টিভি চ্যানেলে গিয়ে পুলিশ-প্রশাসন এবং দলের একাংশকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েই বলেছেন, প্রয়োজনে মামলা করবেন।

গাড়ি তল্লাশির নামে পুলিশ তাঁকে হেনস্থা করেছে বলে বুধবার রাতেই অভিযোগ করেছিলেন ভাটপাড়ার বিধায়ক। বরাহনগর থানা এলাকার টবিন রোডে তাঁর গাড়ি আটকে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এক পুলিশকর্মী রিভলবার উঁচিয়ে গালি দিয়ে তাঁকে গাড়ি থেকে নামতে বলেছিলেন, অর্জুনের অভিযোগ এমনই। ওই ঘটনার জেরে রাতেই কাঁকিনাড়া স্টেশনে রেল অবরোধ করে তাঁর সমর্থকেরা। তার পরে এ দিনও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাটপাড়া পুর-এলাকার কাঁকিনাড়া, শ্যামনগর, আতপুরের দোকান-বাজার বন্ধ থেকেছে। বাস চলেনি, ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়েছে। দফায় দফায় রেল ও পথ অবরোধ হয়েছে। আর দিনের শেষে মুখ্যমন্ত্রীর উপরে দায়িত্ব চাপিয়ে অর্জুন বলেছেন, ‘‘উনি দলের সব নেতাকেই হাতের তালুর মতো চেনেন। আসল কারণটা নিশ্চই খুঁজে বার করতে পারবেন!”

আসল কারণ নিয়ে অর্জুন বা তাঁর অনুগামীরা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তৃণমূল সূত্রেই একটি ব্যাখ্যা উঠে আসছে। লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূল আশাতীত ফল করলেও ভাটপাড়ায় বিজেপি ‘লিড’ পেয়েছে। টিটাগড়েও ভাল ভোট পেয়েছে বিজেপি। ব্যারাকপুর লোকসভার এই দু’টি এলাকায় সব চেয়ে বেশি অবাঙালি ভোটার। সেখানে এ বার বিজেপি-র উত্থান মুখ্যমন্ত্রী-সহ দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ভালো চোখে নেননি। পরিস্থিতিতে নয়া মোড় এনে অর্জুন আবার ভোটের পরেই নিজের এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করে বলেছেন, ‘এত কাজ করেও আপনাদের আস্থা অর্জন করতে পারলাম না! আপনাদের ভোট পেল বিজেপি’। অর্জুনের হেনস্থার নেপথ্যে এই রাজনৈতিক সমীকরণের ছায়া দেখতে পাচ্ছে দলেরই একাংশ।

পুলিশ-প্রশাসনের একাংশেরও ইঙ্গিত, সম্প্রতি অর্জুনের ডানা ছাঁটার নির্দেশ এসেছে উপর মহল থেকে। সেই মতো সপ্তাহখানেক আগে অর্জুন-ঘনিষ্ঠ শিবু যাদবকে গাঁজা পাচারের দায়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মণীশ শুক্ল নামে আরও এক জনকে খুঁজছে পুলিশ। ব্যারাকপুরের এক পুলিশ-কর্তার বক্তব্য, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বাড়ি এই কমিশনারেট এলাকায়। মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায় এই এলাকারই বীজপুরের বিধায়ক। মনীশকে ধরতে উপর থেকে চাপ আসছে। বুধবার টবিন রোডে রুটিন তল্লাশির সময় বিধায়ক ট্রাফিক নির্দেশ না-মানায় কর্তব্যরত পুলিশ ভেবেছিল, মণীশ ওই গাড়িতে আছে। মুকুলবাবু অবশ্য এ দিন বলেছেন, “কেন এমন ঘটনা ঘটল, দল তা নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখবে।”

তাঁর গাড়ি আটকানোর ঘটনার ‘শেষ দেখে ছাড়বেন’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এ দিন দুপুরেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের দফতরে দাবিপত্র দিয়ে এসেছেন বিধায়ক। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার কল্যাণ সরকার বা অন্য পুলিশকর্মীরা কি আমায় বা আমার গাড়ি চেনেন না? নিজের পরিচয় দেওয়ার পরেও ভিড় রাস্তায় আমার দিকে পিস্তল তাক করে অশ্লীল গালাগালি দিয়ে টেনে হিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামানো হয়েছে। লজ্জায় আমার মাথা কাটা গিয়েছে! কার নির্দেশে পুলিশ এ সব ষড়যন্ত্র করছে, তার জবাব দিতে হবে!’’

পুলিশ কমিশনার বিশাল গর্গ অবশ্য এ দিন মুখই খোলেননি। বিধায়ক তাঁর অনুগামীদের নিয়ে চলে যেতেই অধস্তনদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। তার পরে গোয়েন্দাপ্রধান সি সুধাকর বলেন, ‘‘বুধবার রাতে রুটিন তল্লাশির সময় বিধায়কের গাড়ি না থেমে বেরিয়ে যাচ্ছিল। গাড়িতে কোনও স্টিকার ছিল না। পরে বিধায়ককে দুঃখপ্রকাশ করে ছেড়ে দেওয়া হয়।” তবে বিধায়কের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য এক অ্যাস্টিট্যান্ট কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান সুধাকর।

শিবুর গ্রেফতারিকে ‘চক্রান্ত’ আখ্যা দিয়ে ক্ষুব্ধ অর্জুনের অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বলেছেন, “সিপিএম জমানায় এমন ঘটনা ঘটেনি। নিজের দলের সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও খোলা রাস্তায় পুলিশের হাতে সম্মানহানি এ রাজ্যে পুলিশের কি এতই ক্ষমতা?” মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনা খতিয়ে দেখলে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোবে বলেও মনে করেন অর্জুন।

ঘটনাস্থল থেকে বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো বিধায়কের এসএমএসের উত্তর এখনও আসেনি!

arjun singha police harassment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy