Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাওড়ায় আরও অস্ত্র কারখানা, ইঙ্গিত দিল বিহার পুলিশ

শুধু একটি কারখানা নয়, বেআইনি অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির আরও অনেক কারখানা রমরমিয়ে চলছে হাওড়ায়। বিহার পুলিশের কাছ থেকে এ কথা জানল হাওড়া সিটি পুলিশ। রবিবার হাওড়ার শানপুরের লেদ কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের যন্ত্রাংশ উদ্ধার হওয়ার পরে বিহার পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়ায় এই ধরনের আরও গোটা দশেক কারখানা রয়েছে।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৬:০২
Share: Save:

শুধু একটি কারখানা নয়, বেআইনি অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির আরও অনেক কারখানা রমরমিয়ে চলছে হাওড়ায়। বিহার পুলিশের কাছ থেকে এ কথা জানল হাওড়া সিটি পুলিশ।

রবিবার হাওড়ার শানপুরের লেদ কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের যন্ত্রাংশ উদ্ধার হওয়ার পরে বিহার পুলিশ জানিয়েছে, হাওড়ায় এই ধরনের আরও গোটা দশেক কারখানা রয়েছে। যে কারখানাগুলি থেকে নিয়মিত অস্ত্রের যন্ত্রাংশ মুঙ্গেরে সরবরাহ করা হয়। বিহার পুলিশের কাছে এই তথ্য জানতে পারার পরেই কার্যত নড়েচড়ে বসছে হাওড়া সিটি পুলিশ। সোমবারই জরুরি বৈঠক ডেকে প্রত্যেকটি থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে ওই কারখানাগুলি খুঁজে বার করতে।

কিন্তু হাওড়ায় যে আরও অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে, তা বিহার পুলিশের কাছ থেকে জানতে হবে কেন?

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “এটা ঠিকই আমাদের গোয়েন্দাদের কাছে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল না। এ জন্য আমরা ওই ধরনের কারখানা আদৌ আছে কি না, তা দেখতে শিল্পাঞ্চলের থানাগুলিকে তল্লাশির নির্দেশ দিয়েছি।”

গত ১ তারিখ মুঙ্গেরে শেখ সরফরাজ নামে এক অস্ত্র সরবরাহকারীকে গ্রেফতার করে বিহার পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হাওড়া শানপুরে ওই অস্ত্র-কারখানার কথা জানা যায়। এর পরেই ধৃতকে নিয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানে রবিবার দুপুরে শানপুরের একটি লেদ কারখানায় হানা দিয়ে প্রায় দেড় হাজার রিভলভার তৈরির করার মতো যন্ত্রাংশ উদ্ধার করে পটনার স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় হাওড়া জুড়ে। বিশেষ করে যিনি ওই কারখানাটি ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি সিপিএমের স্থানীয় জোনাল কমিটির নেতা হওয়ায় এবং তাঁর স্ত্রী হাওড়া পুরসভার দু’দফায় সিপিএমের কাউন্সিলর হওয়ায় ঘটনাটি অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, স্বপন পাখিরা নামে ওই সিপিএম নেতা এবং তাঁর স্ত্রী প্রণতি পাখিরার ভূমিকা নিয়েও।

তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, শেখ সরফরাজের হাওড়ায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সে লিলুয়া থানা এলাকার বামনগাছিতে একটি ঘরও ভাড়া নিয়েছিল। হাওড়ায় আসলে সেখানেই সে থাকত। সেই বাড়িটিও চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কিন্তু এক জন মুঙ্গেরের বেআইনি অস্ত্র সরবরাহকারীর হাওড়ায় বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কতটা প্রয়োজন ছিল, তা নিয়েও সন্দেহ দানা বেঁধেছে তদন্তকারীদের মধ্যে। এর মধ্যে হাওড়ায় এই ধরনের আরও ১০টি কারখানায় অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরি হয় বলে বিহার পুলিশের কাছ থেকে জানার পরে তদন্তকারীদের ধারণা, এতগুলি কারখানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্যই শেখ সরফরাজ লিলুয়া এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। ওই কারখানাগুলি কোন এলাকায় রয়েছে, তা দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য তাই তল্লাশি শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। সোমবার বিশেষ ক্রাইম কনফারেন্স ডেকে হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের মূল লক্ষ শানপুরের ওই কারখানার ভাড়াটেকে গ্রেফতার করা। তবেই জানা যেতে পারে এই ঘটনার সঙ্গে আর কে কে জড়িত বা হাওড়ায় আর কোথায় এ ধরনের কারখানা রয়েছে। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়া সিটি পুলিশের একটি দল ওই যুবককে ধরতে রবিবার রাতেই উদয়নারায়ণপুরের বাড়িতে হানা দিলে পুলিশ তার কোনও সন্ধান পায়নি। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “ওই যুবককে গ্রেফতারের পরেই হাওড়ায় মুঙ্গেরের অন্য ‘কানেকশন’গুলি জানা যাবে বলে মনে হয়। ওই যুবকের খোঁজ চলছে। গ্রেফতার করার পরেই তাকে বিহার পুলিশের হাতে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debasish das arms factory howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE