Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কল্যাণীর ঘটনায় গ্রেফতার চার

মারপিট সমর্থন নয়, বলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় দু’জন মহিলা-সহ চার জনকে ধরল পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সে কথা ঘোষণা করে বলেন, “কল্যাণীতে যারাই করুক, তারা খুব খারাপ কাজ করেছে। পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। চার জনকে গ্রেফতার করেছে।”

এই সেই মারমুখিনী। আদালতের পথে ধৃত যমুনা দিন্দা।—নিজস্ব চিত্র।

এই সেই মারমুখিনী। আদালতের পথে ধৃত যমুনা দিন্দা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় দু’জন মহিলা-সহ চার জনকে ধরল পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সে কথা ঘোষণা করে বলেন, “কল্যাণীতে যারাই করুক, তারা খুব খারাপ কাজ করেছে। পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। চার জনকে গ্রেফতার করেছে।”

ঘটনার তদন্তে তিনি নিজেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কল্যাণীতে পাঠিয়েছিলেন বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কখনওই মারপিট সমর্থন করি না। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষাকর্মী বা ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও বিষয়ে মতবিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু ভাল ভাবে মাথা ঠান্ডা করে তা মীমাংসা করতে হবে। কথায় কথায় মারপিট করবেন না, এটা আমি সবাইকেই বলছি।”

মঙ্গলবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের নামে তৃণমূলি শিক্ষাবন্ধুরা যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, দল তা সমর্থন করে না বলে সে দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন পার্থবাবু। বুধবার তিনি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হন। একই সঙ্গে দোষীরা ছাড় পাবে না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। এ দিন পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করার পরে কল্যাণী নিয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। শিক্ষামন্ত্রী ইতিমধ্যেই তাঁকে রিপোর্ট দিয়েছেন বলে জানিয়ে মমতা বলেন, “আবার বলছি, কল্যাণীর ঘটনা আমি সমর্থন করি না। কেউ যদি বাড়াবাড়ি (একসেস) করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ রাজ্যে শিক্ষাঙ্গনে শাসক দলের হামলার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। মমতা এক সময়ে এ সবই ‘ছোট ঘটনা’ বলে উল্লেখ করতেন। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনে লাগাতার নৈরাজ্য যে ক্রমশ মাত্রা ছাড়াচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেটা এখন প্রশাসনও বুঝতে পারছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর। পার্থবাবু বারবার অধ্যক্ষ-উপাচার্যদের শক্ত হাতে হাল ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তার পরেও ঘটনার বিরাম নেই। সম্প্রতি ফেসবুকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করার জেরে ঘাটালের রবীন্দ্র শতবার্ষিকী কলেজের শিক্ষকের গায়ে হাত তুলেছিল তৃণমূলি ছাত্ররা। পরে তারা ক্ষমা চায়। কল্যাণীর ঘটনাতেও টিভিতে পরিস্থিতি দেখার পরেই পার্থবাবু তৎপর হয়েছিলেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখার কথা বললেন, কথায় কথায় মারপিট না করার নির্দেশ দিলেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেই তাঁকে এ কথা বলতে হল। এবং এ কথা বলে তিনি কার্যত রাজ্যের অরাজক অবস্থার কথাই স্বীকার করে নিলেন বলেও বিরোধীদের মত।

পুলিশ এ দিন জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে কিশোর বাসফোর (এফআইএর-এ নাম আছে) ও শেফালি মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। হরষিত বারুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন-কর্মী এবং যমুনা দিন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শ্রীকান্ত দিন্দার স্ত্রী। বুধবার রাতে বাড়ি থেকেই ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে অবৈধ ভাবে জমায়েত, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ-সহ একাধিক মামলা হয়েছে। কল্যাণী আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক এ দিন তাঁদের চার দিন পুলিশ-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলে এসেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। তার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ঘটনার পরে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের নামে ‘ডায়েরি’ হয়েছিল শুধু। পার্থবাবুর কড়া বার্তা পেয়ে সাত জনের নামে এফআইআর করা হয়। তার মধ্যে অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি-ইন-চার্জ প্রতাপকুমার সাঁতরাকে মারধর করেছিলেন যে মহিলা, সেই যমুনা দিন্দার নাম ছিল না। তবে এ দিন পুলিশ তাঁকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করেছে। যমুনাদেবী নিজের পরিচয় দিয়েছেন তৃণমূল-কর্মী হিসেবেই। তাঁর দাবি, “প্রতাপ সাঁতরা আমার সঙ্গে গত বছর দুর্ব্যবহার করেছিলেন। মঙ্গলবার ওঁকে সামনে দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি।” ধৃত আর এক মহিলা শেফালি মণ্ডলের ভাইঝি আলপনা দাসের দাবি, “আমার পিসি অসুস্থ। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারেন না। ওঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।”

কিন্তু ঘটনা হল, যে সাত জনের নামে এফআইআর হয়েছিল, তাদের মধ্যে মাত্র এক জনই এ দিন ধরা পড়েছে। ধৃত বাকি তিন জনের নাম এফআইআর-এ ছিল না। আবার এফআইআর-এ অন্য যে ছ’জনের নাম ছিল, তাঁরা ধরা পড়েননি। ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অঞ্জন দত্ত, সম্পাদক বিকাশ আচার্য, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রসেনজিৎ মণ্ডল, রামেশ্বর রায়, নিত্যরঞ্জন মালো এবং ভোলা বাসফোর এঁরা কেউই ধরা পড়েননি। বিজেপি-র জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দীর দাবি, “কোনও ঘটনাতেই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ অভিযুক্তদের রাজ্য পুলিশ খুঁজে পায় না। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।” প্রায় একই বক্তব্য সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র। এঁদের অভিযোগ, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলেই বাকি ছ’জনকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।

কী রকম? বিরোধীদের দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে অঞ্জন দত্তকে এ দিন এলাকায় দেখা গিয়েছে। মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে অবশ্য ফোন ধরেননি অঞ্জনবাবু। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “টিভির ফুটেজ দেখে চার জনকে ধরা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে।” জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেছেন, “ঘটনার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ চার জনকে ধরেছে, এটা নজিরবিহীন।” ‘সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি’র সভাপতি দেবব্রত সরকার স্বীকার করেছেন, যমুনাদেবী ছাড়া ধৃত অন্য তিন জন তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalyani jamuna dinda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE