কয়েক দিন ধরে ভোরের দিকে আকাশে মেঘ থাকছে। সূর্যোদয় দেখাই যাচ্ছে না। সকালের হাওয়াটাও ক’দিন যেন হাওয়া হয়ে গিয়েছে! বেলা বাড়তেই মনে হচ্ছে, চামড়া থেকে কেউ যেন শুষে নিচ্ছে রস।
ঋতু-স্বভাব ভুলে আবহাওয়ার হঠাৎ এমন পরিবর্তন কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, শীতের পরে বঙ্গোপসাগরের বাংলা-ওড়িশা উপকূলে থাকা কোনও উচ্চচাপ বলয় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বাতাসে জলীয় বাষ্প জোগায়। কিন্তু হঠাৎই তা সরে যাওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্পের ঘাটতি পড়ছে। তার ফলেই বদলে গিয়েছে গরমের চরিত্র।
বাংলা-ওড়িশা উপকূলের উচ্চচাপ বলয় হঠাৎ সরে গেল কেন?
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের ব্যাখ্যা, উচ্চচাপ বলয়ের এই আকস্মিক অন্তর্ধানের জন্য দায়ী ভূমধ্যসাগর থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়া (পশ্চিমি ঝঞ্ঝা)। কয়েক দিন আগেই ঝঞ্ঝার প্রভাবে কাশ্মীরে বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়েছে। তার ফলে বায়ুমণ্ডলের মধ্য ও উপরের স্তরে বইছে জোরালো উত্তর-পশ্চিমি হাওয়া। সেই জোরালো হাওয়ার দাপটে সরে বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় সরে গিয়েছে। দখিনা বাতাসের বদলে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে হাওয়া বইছে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে। তাই রোদের তেজ বাড়লেও প্যাচপেচে গরমের বদলে মিলছে শুকনো গরম।
তা হলে আবার ভোরের দিকে আকাশে মেঘ জমছে কী ভাবে?
আবহবিদদের একাংশের ব্যাখ্যা, বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। তার ফলে কিছুটা জলীয় বাষ্প ঢুকছে। সেটাই ঘনীভূত হয়ে ভোরের দিকে আকাশে মেঘ তৈরি করছে। আবার সূর্য উঠলেই তা কেটে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশ থেকে শীত এ বার বিদায় নিয়েছে ফেব্রুয়ারিতেই। তার পরে মার্চের শেষ পর্বে এসে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা এবং তার প্রভাবে হাওয়ার দিক-বদলকে অবশ্য অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন না মৌসম ভবনের আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, মার্চের এই সময়ে ঋতু বদলায়। আবহাওয়ার পরিস্থিতিও তাই টালমাটাল থাকে। এই সময়ে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার আচমকা আক্রমণে উচ্চচাপ বলয়ের সরে যাওয়াটা তাই অস্বাভাবিক নয়। ‘‘গরম জাঁকিয়ে বসলে উচ্চচাপ বলয়ও থিতু হবে,’’ মন্তব্য মৌসম ভবনের এক কর্তার। ওই উচ্চচাপ বলয় ফিরে না-এলে বাতাসে জলীয় বাষ্প ঢুকবে না, তৈরি হতে পারবে না কালবৈশাখীর উল্লম্ব মেঘও।
আম-বাঙালির প্রশ্ন, শুকনো গরম আর ক’দিন সইতে হবে?
এই শুকনো গরম আরও দিন তিনেক চলবে। তার পরে নতুন একটি উচ্চচাপের হাত ধরে আর্দ্রতা ফের বাড়তে পারে, পূর্বাভাস আলিপুরের।