Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নবান্নর হুকুমে পরীক্ষা আজ, উদ্বিগ্ন পড়ুয়ারা

গোলপার্কের বাসিন্দা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট থ্রি-র এক ছাত্রীর পরীক্ষার আসন পড়েছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের একটি কলেজে। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টোয় তাঁর পরিবেশবিদ্যার পরীক্ষা। সাধারণ ধর্মঘটের দিন কী করে সময়মতো মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছবেন, ভেবেই পাচ্ছেন না ওই ছাত্রীর বাবা। বললেন, ‘‘রাস্তাঘাটের কী অবস্থা হবে, সেটাই তো বুঝছি না। কিছু না পেলে হেঁটেই যেতে হবে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

গোলপার্কের বাসিন্দা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট থ্রি-র এক ছাত্রীর পরীক্ষার আসন পড়েছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের একটি কলেজে। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টোয় তাঁর পরিবেশবিদ্যার পরীক্ষা। সাধারণ ধর্মঘটের দিন কী করে সময়মতো মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছবেন, ভেবেই পাচ্ছেন না ওই ছাত্রীর বাবা। বললেন, ‘‘রাস্তাঘাটের কী অবস্থা হবে, সেটাই তো বুঝছি না। কিছু না পেলে হেঁটেই যেতে হবে।’’

যাদবপুরের এক বাসিন্দা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তাঁরও আজ পরীক্ষা। সময়মতো পৌঁছতে যাতে বেগ পেতে না হয়, সে জন্য বুধবার বরাহনগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন তিনি। প্রথমে বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা শুনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন ওই ছাত্র। বুধবার দুপুরে জানতে পারেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন।

কেন?

নবান্নের নির্দেশিকার জেরেই আজ, বৃহস্পতিবারের কোনও পরীক্ষা স্থগিত রাখতে পারেনি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। ২৮ এপ্রিল জারি করা একটি নির্দেশিকায় নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের দিন সব রাজ্য সরকারি দফতর এবং সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হবে। এই সব সংস্থায় কর্মরতদের এ দিন উপস্থিত থাকতেই হবে। কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাঁর ছুটি মঞ্জুর করা হবে না। এই নির্দেশিকা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও পাঠানো হয়েছে। তার পরে সরকারের বিপক্ষে গিয়ে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই আর পরীক্ষা পিছোনোর ঝুঁকি নেয়নি। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় বিশ্বভারতী অবশ্য পরীক্ষা বাতিল করতে অসুবিধায় পড়েনি। এ দিন নির্ধারিত কোনও পরীক্ষাই হবে না বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

তবে কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনার জেরে পরীক্ষার্থীরা আটকে পড়লে ভবিষ্যতে তাঁদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। কী সেই ব্যবস্থা, তা অবশ্য পরিষ্কার করেনি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই। তবে ছাত্রস্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে ভবিষ্যতে ফের এই পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ধর্মঘটের জন্য যাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারবেন না, তাঁদের জন্য ফের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা না হলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

কিন্তু অতীতে তো ধর্মঘটের জন্য পরীক্ষা পিছিয়েছে। এমনকী, এ বছরই পুরসভা নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগে তড়িঘড়ি জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার দিন বদলের ঘোষণা করেছিল বোর্ড। তা হলে ধর্মঘটের দিন পরীক্ষা রেখে পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তায় ফেলার কারণ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। সূর্যবাবুও বুধবার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পুরভোটের জন্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাপিছিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ এখন তিনি পরীক্ষা নিতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন!’’ সূর্যবাবুর দাবি, হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর কথা মাথায় রেখে তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছিলেন যাতে পরীক্ষা পিছোনো হয়। কিন্তু সে কথায় কান দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘উল্টে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, তারা তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে।’’

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আগেই পরীক্ষার পরিবর্তিত দিন ওয়েবসাইটে জানিয়েছিল। বিকাশ ভবনের একটি সূত্রের খবর, সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করে আগেভাগে দিন বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপরে রুষ্ট হন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নবান্নের নির্দেশিকা এবং মন্ত্রীর ক্ষোভের আঁচ পেয়ে পরীক্ষার দিন অপরিবর্তিত রাখা হবে বলে নতুন করে জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আবার বুধবার সকালেই নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবারের পরীক্ষা হবে আগামী ২৩ মে। নবান্নের নির্দেশিকার ভিত্তিতে এ দিন দুপুরে ফের একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কর্তৃপক্ষ জানান, পরীক্ষা হবে আজই। দিন পরিবর্তন করা হবে না। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ও পরীক্ষা পিছিয়ে পরে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দিন বদল নিয়ে মন্ত্রী আদৌ মাথা ঘামাবেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। যদিও পার্থবাবুর দাবি, ‘‘কারা পরীক্ষা পিছিয়েছিল, তা-ও আমার জানা নেই, কারা এগিয়েছে, তা-ও জানি না। আমি তো পরীক্ষা নেওয়ার মালিক নই। এটুকু বলতে পারি, বৃহস্পতিবার বাংলা সচল থাকবে।’’

রবীন্দ্রভারতী বা যাদবপুরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েকশো। কিন্তু পরীক্ষার্থীর সংখ্যার বিচারে আজ, বৃহস্পতিবারের অন্যতম বড় পরীক্ষা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থীর পার্ট থ্রি পরিবেশবিদ্যার পরীক্ষা আজ। বুধবার কর্তৃপক্ষ জানান, পরীক্ষা হবে আজই। দিন পরিবর্তন করা হবে না।

কিন্তু ধর্মঘটের দিন কেউ পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে না পারলে কী হবে? উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে ছাত্রস্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ সেই সিদ্ধান্ত কী হতে পারে, তা জানাতে চাননি উপাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘কুটা’ উপাচার্যকে জানিয়েছে, এই ব্যবস্থাগুলি আগাম ঘোষণা করতে হবে।

বাম আমলেও বিভিন্ন সময়ে বিরোধীদের ডাকা ধর্মঘটে প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখা, পরীক্ষা পরিবর্তন না করার নির্দেশ দেওয়া হতো বলে জানাচ্ছেন এক প্রাক্তন উপাচার্য। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সাধারণত তা হতো মৌখিক ভাবে। আবার অনেক সময়ই ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে পরীক্ষার দিন বদলও করা হতো। কিন্তু নবান্ন থেকে একেবারে লিখিত নির্দেশিকা জারি হওয়ায় এ বার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্য কোনও উপায় নেই বলেই জানাচ্ছেন কর্তারা।

সূর্যবাবুর অবশ্য দাবি, অতীতে কখনও পরীক্ষা নিয়ে জোরাজুরি করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরীক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ছাড় দিতে চাই। কিন্তু তাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার নিশ্চয়তা দেব কী করে?’’ তাঁর দাবি, যাঁরা পরীক্ষা দিতে যেতে পারবেন না, তাঁদের দায় সরকারকেনিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য এই দায় চাপিয়েছেন বিরোধীদের উপরেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা কী ভাবে পরীক্ষা দিতে যাবেন, সেটা যাঁরা ধর্মঘট ডেকেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।’’

সাধারণ ধর্মঘটের পাশাপাশি সিটু-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দিন ২৪ ঘণ্টার পরিবহণ ধর্মঘটও ডাকা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা স্বীকার করে সিটু-র রাজ্য সম্পাদক দীপক দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পরীক্ষা কেন্দ্রে ধর্মঘট হবে না।’’ পরীক্ষার্থীদের তিনি পরামর্শ দেন, তাঁরা যেন পরীক্ষা-কেন্দ্রের কাছে কারও বাড়িতে গিয়ে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE