ভোর থেকেই টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছিল। সকালে আমরা যখন সমুদ্রের ধারে গিয়েছিলাম, দেখলাম বৃষ্টি ধরে এলেও সমুদ্রের মাথায় কালো মেঘ ঘনিয়ে রয়েছে। চার বন্ধু নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলাম, বর্ষার শুরুতে উইকএন্ড ট্যুরটা তা হলে মন্দ হল না! তখন কে-ই বা জানত, এমন ভয়াল স্মৃতি নিয়ে ফিরতে হবে!
এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না জানেন! চোখের সামনে একটা ছেলেকে মরে যেতে দেখলাম!
কিছুতেই দৃশ্যগুলো চোখ থেকে সরাতে পারছি না আমরা চার বন্ধু।
চার বন্ধু মানে আমি, সায়নদীপ ভট্টাচার্য, রাজীব চক্রবর্তী আর সুমিত ভট্টাচার্য। শনিবার রাতেই বর্ধমানের তেজগঞ্জ থেকে এসেছি। উইকএন্ডে ঘুরতে এসে কেন যে এমন একটা দৃশ্য দেখতে হল!
তখন ক’টা হবে? রবিবার সকাল ৯টা বা সাড়ে ৯টা। আমরা একটু রেস্ট নিয়ে হোটেলের ঘর থেকে বেরিয়ে দেখলাম, আকাশ তখনও বেশ মেঘলা। ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সমুদ্র উত্তাল। তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখছিলাম, বৃষ্টি থামলেও মেঘ ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে সমুদ্রের ভিতর থেকে। হাওয়ার গতিও বাড়ছে। তীরে, আমাদের হোটেলের একটু দূরেই দেখলাম, প্যারাসেলিংয়ের তোড়জোড় চলছে। অনেকে জলে নেমেও পড়েছে। মেঘের কথা ভুলে ছবি তুলতে মেতে উঠেছিলাম আমরাও।
তত ক্ষণে দেখি, উপরে উঠছে প্যারাসেলিংয়ের রঙিন প্যারাশ্যুটটা। দূর থেকে প্যারাশ্যুটের রঙিন বেলুনটা ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে দেখতে বেশ লাগছিল। হাওয়ায় প্যারাশ্যুটটা ঠিক খুলছিলও না। বন্ধুরা খালি চোখে উড়ন্ত লোকটাকে দেখছিল। হঠাৎ দেখলাম, উড়তে উড়তে হাওয়ার দাপটে প্যারাশ্যুটের কাপড় জড়িয়ে যাচ্ছে তীরের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ‘হাই মাস্ট ল্যাম্পপোস্টে’! ভিউ ফাইন্ডারে দেখছি, লোকটা জড়িয়ে পড়ে পোস্টে ঝুলে ছটফট করছে। লোকটার চিৎকার শুনে তীরের সকলের চোখ তখন পোস্টের উপর দিকে। প্যারাসেলিংয়ের জিপটা মনে হল যেন একটু থামল। তার পর... তার পরে জিপটা জোরে চলতে শুরু করতেই— সব শেষ!
শেষটায় বন্ধুদের কেউ কেউ চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। দেখলাম, জিপটা টান মারার সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ল্যাম্পপোস্টটা। আর লোকটা প্যারাশ্যুটের কাপড়ে জড়িয়ে চাপা পড়ল তার ঠিক নীচেই। আর কী হয়েছে, জানি না। এগিয়ে গিয়ে দেখার সাহসটুকুও হয়নি। চোখের সামনে এমন একটা ঘটতে দেখে, অনেকের মতো আমরাও একটু পরেই হোটেলে ফিরে আসি। ভাল লাগছিল না আর কিছুই। সন্ধেয় বেরিয়ে ভেবেছিলাম, মনটা একটু ভাল হবে। বিশ্বাস করুন, বেশি ক্ষণ আর থাকতে পারিনি সমুদ্রের ধারে। রাতে হোটেলের রুমে বসে সকালের ছবিগুলো ক্যামেরায় দেখছিলাম। দেখতে পারলাম না! উইকএন্ডে ঘুরতে এসে যে এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরব, ভাবিনি কোনও দিন!
এই মন্দারমণি তো দেখতে চাইনি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy