Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সবংয়ে ছাত্র খুনের বছর পার

বিচারের আশায় তৃণমূলের পাশে কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবার

ঘটনায় অভিযুক্ত শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। তাও সবং কলেজে নিহত ছাত্র পরিষদ কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালনে আয়োজনে খামতি রাখল না তৃণমূল।

সবংয়ে তৃণমূল আয়োজিত স্মরণসভায় কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা ভানুভূষণ জানা (একেবারে ডান দিকে)। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

সবংয়ে তৃণমূল আয়োজিত স্মরণসভায় কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা ভানুভূষণ জানা (একেবারে ডান দিকে)। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৩
Share: Save:

ঘটনায় অভিযুক্ত শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। তাও সবং কলেজে নিহত ছাত্র পরিষদ কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালনে আয়োজনে খামতি রাখল না তৃণমূল। রবিবার সবংয়ের দণ্ডরা পঞ্চায়েতের চাঁদখুড়িতে তৃণমূল আয়োজিত স্মরণসভাতেই হাজির ছিলেন নিহত কৃষ্ণপ্রসাদ জানার পরিজনেরা।

গত বছর ৭ অগস্ট সবং সজনীকান্ত কলেজ চত্বরে খুন হন কৃষ্ণপ্রসাদ। ছাত্র পরিষদের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর তিন সদস্য। পরে পুলিশ দাবি করে, ছাত্র পরিষদের কোন্দলেই মারা গিয়েছেন কৃষ্ণপ্রসাদ। ছাত্র পরিষদের চারজনকে গ্রেফতারও করা হয়। ধৃত ৭ জনের মধ্যে ৬ জনই পরে জামিন পান। ঘটনার পরে সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছিল কংগ্রেস। কৃষ্ণপ্রসাদের পরিজনদেরও তখন কংগ্রেসের অনশন মঞ্চে দেখা গিয়েছিল। তবে গত বিধানসভা ভোটের আগে পরিস্থিতি পাল্টায়। কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা ভানুভূষণ জানা-সহ বাড়ির অন্যরা তৃণমূলের মিছিলে সামিল হন।

এ দিনও তৃণমূল আয়োজিত স্মরণসভার মঞ্চে ছিলেন কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা ভানুভূষণবাবু, বড়দা নারায়ণ, মেজদা চন্দন ও সেজদা হরিপদ জানা। পরে হরিপদর হাতে ‘অধিকার’ প্রকল্পের ৭৫ হাজার টাকার চেক এবং ভানুভূষণবাবুকে কৃষি পেনশনের মাসিক এক হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। ছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ প্রমুখ।

কিন্তু কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের নিহত এক কর্মীকে তৃণমূলের তরফে স্মরণ করা কেন? তৃণমূলের জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির ব্যাখ্যা, “কৃষ্ণপ্রসাদ ছাত্র ছিলেন। তাই একজন ছাত্রকে শ্রদ্ধা জানাতেই এই আয়োজন। তাছাড়া, ওঁর পরিবারও আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ওঁরা বিশ্বাস করেন কংগ্রেস কৃষ্ণপ্রসাদের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করেছে।” কৃষ্ণপ্রসাদের সেজদা হরিপদও একই সুরে বলেন, “ভাইয়ের হত্যার সুবিচারের আশায় আগে কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলাম। কিন্তু আমাদের নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। সেই সুবিচারের আশাতেই তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছি।”

ছাত্র পরিষদের তরফেও কৃষ্ণপ্রসাদের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ দিন সবং কলেজ গেটের বাইরে ও মেদিনীপুরে জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে স্মরণসভা হয়। তবে কোথাওই কৃষ্ণপ্রসাদের পরিজনদের ডাকা হয়নি। ছাত্র পরিষদের সবং কলেজ শাখার সভাপতি শ্যামল ওঝা বলেন, “কৃষ্ণপ্রসাদের মৃত্যু ভুলে ওঁর পরিবার তৃণমূলের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তাই আমরা ডাকলেও আসতেন না।” বিধায়ক মানসবাবুরও বক্তব্য, ‘‘কৃষ্ণপ্রসাদকে ওঁর পরিবার ভুলে গিয়েছে। তবে মৃত্যু দিনে পরিবার নিয়ে কিছু বলে কৃষ্ণপ্রসাদকে কলঙ্কিত করতে চাই না।’’ যদিও কৃষ্ণপ্রসাদের সেজদা হরিপদের যুক্তি, ‘‘কেউ সাহায্য দিতে চাইলে তো আর ফিরিয়ে দেওয়া যায় না।’’

এ দিন তৃণমূলের সভায় দণ্ডরা পঞ্চায়েতের প্রধান মাধব পাত্র-সহ সিপিএমের ৮ সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। এর ফলে, সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Justice Krishnaprasad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE