Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
gariahat murder case

Gariahat Murder Case: খুন করে ঢাকুরিয়া স্টেশনে আসেন ভিকিরা, সেখানেই মিঠুকে দেন রক্তমাখা জামাকাপড়

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জোড়া খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী মিঠুর বড় ছেলে ভিকি। তাঁকে যদিও এখনও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জোড়া খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী মিঠুর বড় ছেলে ভিকি

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জোড়া খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী মিঠুর বড় ছেলে ভিকি গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ১৮:১৫
Share: Save:

গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডের জোড়া খুনের ঘটনার রহস্য সমাধান হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন কলকাতার নগরপাল সৌমেন মিত্র। রহস্য উন্মোচন হলেও অভিযুক্তদের কয়েক জনকে গ্রেফতার করা বাকি। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় এক জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডায়মন্ড হারবার থেকে গ্রেফতার হওয়া সেই মিঠু হালদারকে বৃহস্পতিবার ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুর আদালতের বিচারক। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জোড়া খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী মিঠুর বড় ছেলে ভিকি। তাঁকে যদিও এখনও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। খোঁজ চলছে আরও তিন-চার জনের। মিঠু-ভিকির পাশাপাশি তাঁরাও এই খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত বলেই তদন্তকারীদের দাবি।

গত রবিবার কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে খুন হন কর্পোরেট-কর্তা সুবীর চাকী এবং তাঁর গাড়িচালক রবীন মণ্ডল। সেই খুনের তদন্তে নেমে বুধবার ডায়মন্ড হারবার থেকে মিঠুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মিঠুকে বিকেলের মধ্যেই কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। তাঁকে টানা জেরা করার পর এই খুনের ঘটনায় তাঁর বড় ছেলে ভিকির ভূমিকার কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মিঠু পেশায় পরিচারিকা। তাঁর ছেলে ভিকি জমি-বাড়ির দালালি করতেন। ভিকির নামে যদিও পুলিশের কাছে পুরনো অভিযোগ রয়েছে। ডায়মন্ড হারবারে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন মিঠু। সেই বাড়ির মালিক মিঠুকে রক্তমাখা জামাকাপড় কাচতে দেখেন। সেই সময় তাঁর সন্দেহ হয়। জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, একটা দুর্ঘটনায় জামাকাপড়ে রক্ত লেগে গিয়েছে। কিন্তু তাতেই সন্দেহ বাড়ির মালিকের। ঘটনাচক্রে এর পরেই বুধবার মিঠুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মিঠুকে কলকাতায় নিয়ে এসে জেরা করার পরে তদন্তকারীরা বুঝতে পারেন, তিনিই খুনি-দলের অন্যতম পাণ্ডা। এর পরেই একের পর এক তথ্য জানতে পারেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকুলিয়া রোডের বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরে মিঠু-ভিকিদের নজরে পড়েন সুবীর। সেই সময় ভিকি এলাকায় জমির দালালি করে বেশ কিছু টাকাপয়সা করেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে ভিকি ভেবেছিলেন, সুবীরের কাঁকুলিয়া রোডের বাড়ি তিনি কিনতে পারবেন। তার পর সেই বাড়ি ফের বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করবেন। সেই মতো যোগাযোগ করেন সুবীরের সঙ্গে। কিন্তু বাড়ির দাম দেড় কোটি টাকা চাওয়ায় ভিকি পিছিয়ে যান। আর তখনই তাঁর মাথায় আসে, বিত্তশালী সুবীরকে ফাঁদে ফেলে কিছু টাকা আদায় করবেন। সে কথা তিনি মিঠুকেও জানান। এ সব ঘটনা মাসকয়েক আগের। কিছু দিন আগে কলকাতার একটি জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ নিয়ে চলে আসেন ভিকি। শহরেই থাকছিলেন তিনি। পাশাপাশি ছকছিলেন সুবীরকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ সুবীর নিউটাউনের বাড়ি থেকে কাঁকুলিয়া রোডের উদ্দেশে রওনা দেন। এই কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে করোনাকালের আগে তাঁর বৃদ্ধা মা থাকতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে মা-কে নিউটাউনের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন সুবীর। আর তার পরেই এই বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। রবিবার বাড়ি দেখতে এক খদ্দেরের আসার কথা ছিল। গাড়িচালক রবীনকে নিয়ে তিনি কয়েকটি জায়গা ঘুরে কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে আসেন। পাঁচটা নাগাদ মা-কে ফোনও করেন। কিন্তু তখনও জানেন না খদ্দের হিসাবে যাঁর আসার কথা, তিনি আসলে ভিকি। অন্য পরিচয় এবং অন্য ফোন নম্বর থেকে যোগাযোগ করেন ভিকি।

কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে আসার পর রবীন উপরে চলে যান। দোতলায় ছিলেন সুবীর। ডোরবেল শুনে সুবীর নিজেই দরজা খোলেন। ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েন ভিকিরা। এর পরেই ভিকি এবং তাঁর সঙ্গীরা জোর করে সুবীরের হাত থেকে ব্রেসলেট-সহ সোনার অলঙ্কার খুলে নেন। নিয়ে নেন মানি পার্সও। তবে সেই পার্সে কত টাকা ছিল, তা এখনও গোয়েন্দারা জানতে পারেননি। এর পর টাকার জন্য সুবীরের উপর জোর করতে থাকেন। তদন্তকারীদের অনুমান, পরিবর্তিত নামে সুবীরবাবুকে ডেকে এনে লুঠ করাই ছিল ভিকি এবং তার বন্ধুদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু সুবীর তাঁদের শেষ মুহূর্তে চিনে ফেলায় খুনের পরিকল্পনা করেন ভিকি। সুবীরকে একটি ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। চিৎকার শুনে উপর থেকে নীচে নেমে আসার চেষ্টা করে রবীন। তাঁকেও সেখানে ওই ছুরি দিয়ে কোপানো হয় বলেই তদন্তকারীদের দাবি।

ঘটনাস্থলে ভিকি থাকলেও মিঠু ছিলেন না বলে গোয়েন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে তিনি কাঁকুলিয়া রোডের আশেপাশেই ছিলেন। এবং সর্ব ক্ষণ ভিকিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভাব্য বিভিন্ন কারণকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্লেষণ করে সন্দেহভাজনদের তালিকা তৈরি করা হয়। তাঁরা ঘটনার সময় কোথায় ছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। একটি নির্দিষ্ট এলাকায়, একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোন কোন নম্বর থেকে কোথায়, কোথায় ফোন করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘টাওয়ার ডাম্পিং’। সেখান থেকেও কিছু জোরালো সূত্র মেলে। তার পরেই মিঠু এবং ভিকির উপর নজরদারি শুরু হয়। পরে মিঠুকে গ্রেফতার করলেও ভিকি এখনও অধরা। চলতি বছরেই ওই বাড়িতে রং এবং জলের লাইনে মেরামতির কাজ করিয়েছিলেন সুবীর। সেই সূত্রে কিছু মিস্ত্রির ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পাঁচ জন ছিল বলেই প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

তদন্তাকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জোড়া খুনের পর ভিকিরা চলে যায় ঢাকুরিয়া স্টেশনে। তবে তাঁরা কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বালিগঞ্জ স্টেশনে নেমেছিল বলেই গোয়েন্দাদের দাবি। মঙ্গলবার পুলিশের সন্ধানী কুকুর কাঁকুলিয়ার বাড়ি থেকে সটান বালিগঞ্জ স্টেশনে চলে যায়। তখনও পুলিশের অনুমান ছিল, যে বা যারা খুন করেছে, তারা শহরতলির ট্রেন ধরেছে। ঢাকুরিয়া স্টেশনে তখন ভিকিদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মিঠু। তাঁর হাতেই রক্তমাখা জামাকাপড় দিয়ে ভিকি চলে যান নিজের কর্মস্থলে। সেখানে নাইট ডিউটিও করেন ভিকি। আর মিঠু চলে যান ডায়মন্ড হারবার। সেখান থেকেই বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

কী ভাবে এবং কেন খুন হয়েছিলেন সুবীর-রবীন তার কিনারা করে ফেলেছেন গোয়েন্দারা। তবে এখনও অভিযুক্তদের সকলকে পাকড়াও করতে পারেননি তাঁরা। চলছে তল্লাশি। সেই আবহেই বৃহস্পতিবার নগরপাল বললেন, ‘‘আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ এবং অন্য আধিকারিকেরা মিলে গড়িয়াহাটের জোড়া খুনের ঘটনার সমাধান করেছেন। আরও কয়েক জনকে গ্রেফতার করা বাকি রয়েছে। সবাই গ্রেফতার হলে আমরা জানিয়ে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gariahat murder case police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE