ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্য জোড়া বিতর্কের মধ্যে এ বার সক্রিয় হলেন খোদ রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ডেঙ্গি ও অন্য সংক্রামক রোগ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার দুর্গাপুরে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারকে যা বলার বলেছি। আশা করি ডেঙ্গি প্রতিরোধ ও কার্যকরী চিকিৎসার জন্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।’’ ঘটনাচক্রে এ দিনই ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় রাজ্যের রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
শুক্রবার রাজভবনের প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যে ডেঙ্গি, চিকুগুনিয়া, ম্যালেরিয়া এবং স্কাব টাইফাস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ এই সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অবিলম্বে চিকিৎসা ও রোগ-প্রতিরোধ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। রাজ্যপালের চিঠির জেরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাতের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হল। এ দিনই তীব্র প্রতিক্রিয়ায় পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘মাননীয় রাজ্যপাল মনে হয় বিরোধীদের চোখ দিয়ে দেখছেন। তাই তিনি এত বিচলিত। ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্য সরকার সচেতন এবং যা করার করছে। তাই অন্য রাজ্যের তুলনায় আমাদের রাজ্যে রোগের প্রকোপ ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম।’’
রাজ্যে ডেঙ্গির হানাদারি অবশ্য অব্যাহত। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে চার জন উত্তর ২৪ পরগনার। দু’জন দেগঙ্গার, এক জন স্বরূপনগরের ও অন্য জন বনগাঁর। নদিয়ার হরিণঘাটার এবং কলকাতার কেষ্টপুরের এক বাসিন্দাও মারা গিয়েছেন শুক্রবার। একটি মৃত্যুকেও অবশ্য ডেঙ্গি বলে মানেনি স্বাস্থ্য দফতর।
দেগঙ্গায় জ্বরে মৃত্যু ক্রমেই বাড়ছে। বৃহস্পতিবার রাতে খদ্দ ভাসলিয়া গ্রামের আকলিমা বিবি (৩৫) এবং কলসুরের আকবর মণ্ডল (৩৬) মারা যান। এ দিনই মারা যান স্বরূপনগরের খলসি গ্রামের টুম্পা সরকার (৩৩)। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথম দিকে কিছু শিবির করে জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছিল। পরে জ্বরের প্রকোপ কমছে, বলে সে সব তুলে নেওয়া হয়। শুক্রবার ভোরে মৃত্যু হয়েছে বনগাঁর গোবরাপুরের বাসিন্দা গঙ্গারানি দাসের (৫৪)। এ দিন দুপুরে মারা যান হরিণঘাটার দয়লা-ফতেপুর গ্রামের লক্ষ্মী দে (৫৫) এবং কেষ্টপুরের চণ্ডীবেড়িয়ায় লক্ষ্মী ঘোষ (৩৬)। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি বলে লেখা না হলেও পরিবারের দাবি, বেসরকারি ক্লিনিকে রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি পজিটিভ বলা হয়েছিল।