কী বলেছে কেন্দ্র? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বার্তায় বলা হয়েছে, মাওবাদীদের সর্বশেষ পার্টি কংগ্রেসে শহরে সংগঠন বিস্তারে নানান কৌশল গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনা মেনেই মাওবাদীরা শহরে গণআন্দোলনে নামছে। ‘আরবান পার্সপেক্টিভ: আওয়ার ওয়ার্ক ইন আরবান এরিয়াস’ নামে বাজেয়াপ্ত হওয়া মাওবাদী পুস্তিকা থেকে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি জেনেছে, শহরে খেটে খাওয়া মানুষদের এক ছাতার তলায় আনার লক্ষ্যে কৃষক, শ্রমিক, দলিতদের সংগঠিত করা হচ্ছে। কৃষক-দলিত ঐক্য গড়ে বিশ্বায়ন ও ‘হিন্দু ফ্যাসিবাদ’-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার পরিকল্পনা করছে মাওবাদীরা। শহরে প্রভাব বাড়াতে সমাজের বিশিষ্ট জন, সরকারি অফিসার, আধা-সেনা, পুলিশে যোগাযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে তাদের পুস্তিকায়। শহরে মাওবাদী মতবাদ যাঁরা প্রচার করবেন তাঁদের আদর্শগত জ্ঞান ও দক্ষতার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এটা হলে শহরে স্বাধীন ভাবে গণ আন্দোলন যেমন গড়ে তোলা যাবে, তেমনই গ্রামে গেরিলা লড়াইয়ের ক্যাডারও জোগাড় করা সম্ভব হবে বলে ওই নথি থেকে জেনেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি।
আরও পড়ুন: সারদায় ফের জেরা কুণালকে
মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ‘‘পুণের ভীমা কোরেগাঁও বা ভাঙড়ের আন্দোলন সেই পরিকল্পনা মেনেই হয়েছে। পুণেতে সরাসরি মাওবাদীদের হাত প্রমাণিত হলেও ভাঙড়ে এখনই মাওবাদী যোগ প্রমাণিত হয়নি।’’
২০১২-এ কেন্দ্র ১২৮টি সংগঠনকে মাওবাদীদের ‘মুখোশ’ বলে চিহ্নিত করেছিল। তাতে ছিল বাংলারও বেশ কয়েকটি সংগঠন। তার মধ্যে নন্দীগ্রাম-লালগড় আন্দোলনের সময় গড়ে ওঠা পুলিশি সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটি ও মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতি এখন ততটা সক্রিয় নয়। এখনকার তালিকায় এপিডিআর, বন্দিমুক্তি কমিটি-সহ মোট ১০টি সংগঠনের নাম হয়েছে।
এপিডিআরের রঞ্জিত শূরের মন্তব্য, ‘‘আমরা নকশাল নই। ৫০ বছর ধরে রাষ্ট্রের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে আইনি সহায়তা দিচ্ছি। এটা যদি মাওবাদী কার্যকলাপ হয়, তা হলে কিছু বলার নেই।’’ তালিকায় নাম থাকা সাম্প্রদায়িকতা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক মঞ্চের আহ্বায়ক পূর্ণেন্দুশেখর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিবাদে ভয় পেয়েছে। তাই আমাদেরও ভয় দেখাতে চাইছে।’’
পারসিকিউটেড প্রিজনার্স সলিডারিটি কমিটির আহ্বায়ক কল্যাণীর আইআইএসইআর-এর অধ্যাপক পার্থসারথি রায়ও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আদিবাসী-দলিতদের আইনি সহায়তা করি। অন্যায় হলে প্রতিবাদ করি। এর সঙ্গে মাওবাদের যোগ নেই।’’ খড়গপুর আইআইটি’র ভগৎ সিংহ অম্বেডকর স্টাডি সার্কেলের নাম আছে কেন্দ্রীয় তালিকায়। তার নেতা রোহন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘স্টা়ডি সার্কেল সাম্প্রদায়িকতা, শিক্ষায় গৈরিকীকরণ, বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করে। বিরোধী কণ্ঠস্বর হলেই, সংখ্যালঘু-দলিতদের অধিকারের কথা বললেই মোদী সরকার মাওবাদী তকমা দিয়ে দিচ্ছে।’’