শেষরক্ষা হল না!
বৃহস্পতিবার দুপুরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতেই হল রজত মজুমদারকে। যদিও বুধবার রাতে অসুস্থতা আরও বেড়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। এ দিন সকালে ডাক্তারদের উদ্দেশে তাঁর কাতর অনুরোধ ছিল, “শরীর খুব খারাপ। আমাকে দয়া করে ছুটি দেবেন না।”
কিন্তু হাসপাতাল সূত্রের খবর সিবিআই যেখানে জড়িত, সেখানে তাঁরা কোনও ঝুঁকি নেননি। তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করেও রোগ খুঁজে না পেয়ে পত্রপাঠ ছুটি দিয়ে দিয়েছেন রজতকে। এর আগে মন্ত্রী মদন মিত্রের ক্ষেত্রেও অনেকটা একই ঘটনা ঘটেছিল। মদনবাবু অসুখ সারার পরেও ছুটি নিতে চাইছিলেন না। সিবিআইয়ের কোপে পড়ার ভয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁর অনুরোধ রক্ষা করতে পারেননি।
এ দিন দুপুরে এনআরএস-এর মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা জানান, হাসপাতালে রাখার অবস্থা নয় রজতবাবুর। তার পরেই ছুটি হয়ে যায় তাঁর। বিকেলে হাসপাতাল থেকেই রজতকে আদালতে তোলে সিবিআই। সেখান থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে তাঁরা। আলিপুর আদালতে দাঁড়িয়েই হোক বা সিবিআই দফতরে ঢোকার সময়েই হোক, রজতবাবুকে দেখে বা তাঁর কথাবার্তা শুনে অসুস্থতার লক্ষণ চোখে পড়েনি।
মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই অবশ্য বুকে ব্যথার কথা বলছিলেন রজত। বুধবার রাত থেকে মাথা এবং মেরুদন্ডে ব্যথার কথাও বলতে শুরু করেছিলেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ভর্তি হওয়ার পর থেকে এই ভিআইপি রোগীকে নিয়ে নাজেহাল হচ্ছিলেন ডাক্তাররা। স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করছেন, ঘুমও নেহাত খারাপ হচ্ছে না, ইসিজি রিপোর্ট-রক্তের রিপোর্ট স্বাভাবিক, এমআরআই রিপোর্টে বয়সজনিত ক্ষয় ছাড়া আর কিছু ধরা পড়েনি কোন যুক্তিতে এমন ‘রোগী’কে আইসিসিইউ-এর গুরুত্বপূর্ণ শয্যায় রেখে দেওয়া হবে, ডাক্তাররা তার যুক্তিগ্রাহ্য কোনও কারণ বার করতে পারেননি। বুধবার সকালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হলেও তার বৈঠক টালবাহানা করে একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বোর্ডের চিকিৎসকেরা মিলিত হন। মিনিট পনেরোর আলোচনাতেই সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, এ দিনই ছুটি দেওয়া হবে রজতবাবুকে।
তবে মদন মিত্রের মতো এ ক্ষেত্রেও সিবিআই-এর কোপে পড়ার ভয়টাই মুখ্য হয়ে উঠেছিল বলে জানা গিয়েছে। এ দিন সকালেই সিবিআই-এর এক অফিসার কথা-প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “হাসপাতাল যদি ছুটি না দেয়, তা হলে আমরা আলাদা মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে রজতবাবুকে পরীক্ষা করাব। যদি ধরা পড়ে উনি অসুস্থ নন, তা হলে ওঁর তো সমস্যা হবেই! তদন্তের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ডাক্তারদেরও জবাবদিহি করতে হবে।”
এনআরএসে এই ‘বার্তা’ সময়েই পৌঁছেছিল। তাই ৩৬ ঘণ্টার বেশি হাসপাতালের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শয্যায় থাকার সুযোগ হল না রজত মজুমদারের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy