চলছে আনন্দ পাঠশালার ক্লাস। নিজস্ব চিত্র
খোলা আকাশের নীচে মাদুর পেতে বসে পড়ুয়ারা। ধানের গাদায় ঝুলছে ব্ল্যাকবোর্ড। চলছে একের পর এক ক্লাস। নিত্য নতুন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা। এই দৃশ্য হুগলির পাণ্ডুয়া ব্লকের সিমলাগড়ের। কোভিড বিধি মেনে অতিমারি পর্বে বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিয়ে এ ভাবেই পঠনপাঠন চালাচ্ছেন সিমলাগড়ের চাঁপাহাটি সিদ্ধেশ্বরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মহামায়া বিশ্বাস।
শুধু পড়াশোনাই নয়, তার পাশাপাশি ছবি আঁকা, সেলাই, রাখি তৈরির মতো হাতের কাজও শিখছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। করোনা-পর্বে নতুন এক ‘মডেল’-এর জন্ম দিয়েছেন হুগলির চুঁচুড়ার বাসিন্দা মহামায়া। নাম দিয়েছেন ‘আনন্দ পাঠশালা’। উদ্দেশ্য, এই সময়ে যেন কেউ স্কুলছুট না হয়। মহামায়া বলছেন, ‘‘অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ার সময় গ্রাম আর শহরের স্কুলের মধ্যে বৈষম্যটা খুব বেশি করে নজরে এল। এখানে ৯০ শতাংশ পড়ুয়া প্রান্তিক। তাদের অনলাইনে পাওয়া সম্ভব নয়। তখন আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সকলের সঙ্গে কথা বলে গত অগস্ট মাস থেকে এই আনন্দ পাঠশালা চালু করলাম। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আমরা পাঠশালা বন্ধ রেখেছিলাম।’’ মহামায়ার কথায়, ‘‘শিক্ষায় বাধা পড়লে অনেক পড়ুয়া হারিয়ে যাবে। যাতে কেউ হারিয়ে না যায় তাই এই ভাবে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছি। স্কুলে সংস্কৃতির ক্লাসও চালু করেছি আমরা। সেখানে হারিয়ে যাওয়া শিল্পকলা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।’’
‘আনন্দ পাঠশালা’র চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সৃজা কর্মকার বলছে, ‘‘এখানে পড়াশোনা করতে ভাল লাগে। কারণ, পড়াশোনার পাশাপাশি আমরা রাখি বানাই। ওগুলো বিক্রি করে প্রায় দু’হাজার টাকা পেয়েছি। ওই টাকা দিয়ে আমরা অসহায় মানুষদের সাহায্য করব। আমরা পটচিত্রও বানাচ্ছি। এই ভাবে স্কুল চললে বেশ ভালই হবে।’’
স্কুলের ব্যাগটা আর ভারী লাগে না ওই বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের। চার দেওয়ালের ঘেরাটোপহীন ‘আনন্দ পাঠশালা’ ভিন্ন পথ দেখিয়েছে তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy