আগে এই সমস্যা ছিল না। চাষিরা কাস্তে দিয়ে গোড়া থেকে ধানের গাছ কাটতেন। গোড়ায় যে সামান্য অংশ পড়ে থাকত তা পরবর্তী চাষের জন্য লাঙ্গল চষার সময়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হত। এখন যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা হয়। তাতে গাছের উপরের অংশটুকুই শুধু কাটা হয়। অবশিষ্টাংশ জমিতে থাকে। সমস্যা এখানেই। জয়পুর এলাকার চাষি সৌরভ রায় বলেন, ‘‘বেশিরভাগ চাষি যন্ত্র দিয়ে ধান কাটেন। বাড়তি খরচ করে নাড়া তুলে ফেলতে আগ্রহ দেখান না।’’
গত বছর জেলা কৃষি দফতরের সচেতনতা শিবিরে চাষিদের অনেকে জানিয়েছিলেন, নাড়া জমি থেকে তুলে তাঁরা অন্যত্র ফেলতে পারেন। কিন্তু এর খরচ স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বহন করতে হবে। আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্যে বলেন, ‘‘আমিও চাষি। কিন্তু, চাষিদের এই দাবি মেটানোর মতো তহবিল পঞ্চায়েতের নেই।’’ ১০০ দিনের কাজে এই খরচ অনুমোদনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন জয়ন্ত। কিন্তু জেলা কৃষি দফতরের আধিকারিকরা বিষয়টি এখনও রাজ্যের গোচরে আনতে পারেননি বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
দ্বিতীয় পদ্ধতি হিসেবে জেলার কৃষিকর্তারা জানিয়েছিলেন, ধান কাটা যন্ত্রের সঙ্গে বিশেষ একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। তাতে ধান কাটার সঙ্গেই গাছের অবশিষ্টাংশ জমির সঙ্গে রুটির মতো বেলা হয়ে যাবে। পরে সেটি তুলে নিয়ে চাষিরা কাগজকলে বিক্রি করবেন। কিন্তু, জমি থেকে কীভাবে কাগজকলে তা নিয়ে যাওয়া হবে, সেই সমস্যা দেখা দেওয়ায় পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে সচেতনতা শিবিরের উপরেই জোর দিচ্ছে জেলা কৃষি দফতর। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সচেতনতা শিবির করছে। একটি শিবিরের উদ্যোক্তা জয়িতা কুণ্ডু কুঁতি বলেন, ‘‘কৃষি দফতরকে আরও গঠনমূলক ভূমিকা নিতে হবে। শুধু শিবিরে কাজ হবে না।’’ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল বলেন, ‘‘সচেতনতা শিবির হচ্ছে। কিন্তু চাষিরা কথা শুনছেন না।’’ জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, করোনা আবহের জন্য অনেক কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। নাড়া পোড়ানো বন্ধে ফের তাঁরা কোমর বেঁধে নামবেন।