মঙ্গলবার পর্যন্ত ত্রিবেণীতে চলবে কুম্ভ মেলা। নিজস্ব চিত্র।
উত্তরপ্রদেশ নয়, কুম্ভমেলার আয়োজন এ বার বাংলায়। মেলা ঘিরে সাজ সাজ রব হুগলির ত্রিবেণীতে। ৭০৩ বছর পর আবার ত্রিবেণী সঙ্গমে শুরু হয়েছে এই মেলা। রবিবার ছিল মেলার প্রথম দিন। সকাল থেকে সন্ধ্যা— ত্রিবেণীতীর্থে যেন জনজোয়ার নেমেছে। মেলার আয়োজকদের দাবি, প্রথম দিনেই ১০-১২ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। সোমবার রয়েছে ‘শাহী স্নান’। ফলে সোমবার ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন মেলার আয়োজকরা।
হুগলির সপ্তগ্রামে রয়েছে ত্রিবেণী। যা গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী— এই তিন নদীর মিলনস্থল। কালের নিয়মে যমুনার অস্তিত্ব সঙ্কটে। সরস্বতী নদীর জল শুকিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। তবে তাতে ত্রিবেণী সঙ্গমের মাহাত্ম্য কমেনি। এক সময় সপ্তগ্রাম ছিল বাংলার বাণিজ্য বন্দর। এই তিন নদীকে কেন্দ্র করে চলত ব্যবসা-বাণিজ্য। কলকাতার অনেক আগে সপ্তগ্রাম ছিল বাণিজ্য বন্দর। বহু বছর আগে ত্রিবেণী হয়ে উঠেছিল সনাতন হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র। ত্রিবেণী সঙ্গমকে বলা হয় ‘মুক্তবেনী’।
চতুর্দশ শতকের আগে ত্রিবেণীতে সাধু-সন্তদের মেলা বসত। সেখানে পূণ্যস্নান করতে ভিড় জমাতেন বহু সাধু-সন্তরা। সেই মিলন মেলা এক সময় কুম্ভ মেলা বলে পরিচিত ছিল। তবে কালের নিয়মে সেই কুম্ভ মেলা পথ হারায়। ৭০৩ বছর পর গত বছর থেকে ত্রিবেণীতে আবার এই মেলার আয়োজন শুরু করে বাঁশবেড়িয়া পুরসভা এবং ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতি। গত বছর করোনার কারণে ছোট করেই সাড়া হয়েছিল মেলা। অতিমারি পর্ব কাটতেই এই বছর কুম্ভ মেলা ঘিরে তাই জাঁকজমক ভাবে সেজে উঠেছে ত্রিবেণী।
পৌষ সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়। গত মাসেই সেই তীর্থক্ষেত্রে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু পুণ্যার্থী। আর মাঘ সংক্রান্তিতে হয় এই কুম্ভ মেলা। রবিবার থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। রোজ গঙ্গারতিরও আয়োজন করা হয়েছে ত্রিবেণীতে। সোমবার মেলার দ্বিতীয় দিনে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল ‘শাহী স্নান’। সোমবার সকাল ৯টায় শুরু হবে সাধুদের শোভাযাত্রা। সকাল ১১টায় সপ্তর্ষি ঘাটে শুরু হবে সাধুদের ‘শাহী স্নান’। এর পরই পুণ্যার্থীরা পুণ্যস্নান করবেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় সাধু ভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। দুপুর ১টায় পুণ্যার্থীদের প্রসাদ বিতরণ করা হবে। দুপুর ২টোয় মহা রুদ্রযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৪টে থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে গঙ্গারতি।
মেলা ঘিরে ত্রিবেণীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি পুণ্যার্থীদের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয়, সে দিকেও নজর দিয়েছে প্রশাসন। বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী বলেন, ‘‘ত্রিবেণীতে যে কুম্ভ মেলা হত তা ইতিহাস ঘেঁটে খুঁজে বার করেন বাঁশবেড়িয়ারই কয়েকজন গবেষক। সেই অনুযায়ী ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতি তৈরি করা হয়। ১৪ ফ্রেব্রুরারি পর্যন্ত চলবে এই কুম্ভমেলা। ১৩ তারিখ হবে শাহী স্নান। প্রথমে সপ্তর্ষি ঘাটে সাধুরা স্নান করবেন।পরে অন্যান্য ঘাট সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’’
গঙ্গায় স্নানের সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কিছু অংশ জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি ঘাটগুলিতে সর্বদা নজরদারি চালানো হচ্ছে। মহামণ্ডলেশ্বর পরমহংস স্বামী পরমাত্মানন্দজি মহারাজ শনিবার মাহেশ জগন্নাথ মন্দিরে যান। তিনি বলেন, ‘‘৭০৩ বছর পর দ্বিতীয় বর্ষে কুম্ভ মেলা হচ্ছে এই কুম্ভ বাঙালির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy