তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর (বাঁ দিকে)। (ডান দিকে) জেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রামসদয় কলেজ ।
আর পাঁচটা শহরের ক্ষেত্রে যেটা হয়, দৈর্ঘ্য-প্রস্থে শহর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর বাইরের মানুষ সেখানে এসে বসতি করেন। ফলে তৈরি হয় একটা মিশ্র জীবনধারা। আমতার ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটা ঘটেনি। একান্ত নিজস্বতা নিয়েই বয়ে চলেছে এ শহরের জীবনধারা। বহিরাগতদের পা না পড়ায় অবাঞ্ছিত অনেক কিছু থেকেই নিজেকে আড়াল করেছে এ শহর। উদাহরণ হিসাবে স্থানীয় সমাজ সচেতন মানুষজন তুলে ধরেন শহরের যৌনপল্লির কথা। বহু আগে গড়ে ওঠা এই যৌনপল্লির অতীতের রমরমা আর নেই। অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ ফিরে গিয়েছেন স্বাভাবিক জীবনে। সমাজ সচেতন মানুষজনের কথায়, যে কোনও যৌনপল্লির বিস্তারের পিছনে নেপথ্য কারণ হল সেখানে বহিরাগতদের অবারিত আগমন। আমতায় তা ঘটেনি। ফলে কমে গিয়েছে যৌনপল্লির রমরমা।
তবে সব সংস্কার তো আর নিজে থেকে হয় না। অন্য শহরের মতো এখানেও উপযুক্ত নাগরিক পরিষেবার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন আমতার মানুষ। যার মধ্যে রয়েছে নতুন একটি বাসস্ট্যান্ড, কলাতলা থেকে সিনেমাতলা পর্যন্ত শহরের মূল রাস্তায় যানজটের সমস্যা মেটাতে বাইপাস তৈরি, নিকাশি সমস্যা মেটাতে নালাগুলির নিয়মিত সংস্কার। আমতা শহরকে পুরসভার মর্যাদা দেওয়া, আমতাকে মহকুমার মর্যাদা দেওয়ার মতো দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমতাকে পুরসভা করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। পুরসভা গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। একইসঙ্গে পুরসভা গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্কও তৈরি হয়েছে।
আমতা শহর সীমাবদ্ধ কার্যত দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে, আমতা ও সিরাজবাটি। কিন্তু পুরসভা গঠনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে আমতা ১ ব্লকের অধীন ১০টি পঞ্চায়েতকে। বিতর্ক উঠেছে এই সিদ্ধান্ত নিয়েই। এইসব পঞ্চায়েত এলাকায় এমন বহু গ্রাম আছে যেখানে এখনও পর্যন্ত ইটপাতা রাস্তাই তৈরি হয়নি। আবার এমন বহু গ্রামও আছে যেখানে চাষি ও মৎস্যজীবীরা হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে সার, বীজ, মাছ ধরার জাল, হাঁড়ির মতো সামগ্রীর জন্য। তাঁদের আশঙ্কা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে তাঁরা এইসব সরকারি প্রকল্পের সুবিধা আর পাবেন না। পুরসভয় অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পাওয়ার পরে রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে স্থানীয় ক্লাব এবং সমাজসেবী সংস্থাগুলি জনগণের মত জানতে গণ কনভেনশনেরও আয়োজন করেছিল। সেখানেই স্থানীয় গরিব মানুষ এবং চাষিদের কাছ থেকে উঠে এসেছিল এ সব প্রশ্ন। তবে অসুবিধার আশঙ্কাগুলি জিইয়ে রেখেও বৃহত্তর পরিসরে পুরসভা গঠনের পক্ষেই অবশ্য মত দিয়েছেন নাগরিকদের একটা বড় অংশ। আমতা সিটিজেনস ফোরামের পক্ষে ফটিক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরসভা গঠিত হলে উন্নয়ন খাতে বাজেট বরাদ্দ অনেকটাই বেড়ে যায়। ভবিষ্যতে এতে সবার ভালই হবে।’’
বাইপাস রাস্তা, নিকাশি খালের সংস্কার ইত্যাদি নিয়ে ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য, সীমিত আর্থিক বরাদ্দে খুব বেশি কাজ করা যায় না। তবে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা আশাবাদী, পুরসভা গঠিত হলে অনেকটাই বেশি বরাদ্দ হাতে পাওয়া যাবে। তাতে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা সম্ভব। অন্যদিকে নতুন একটি বাসস্ট্যান্ডের জন্য জমি দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা।
আমতাকে মহকুমা করার দাবি অবশ্য বেশ পুরনো। ইংরেজ আমল থেকেই আমতায় রয়েছে আদালত। দেওয়ানি ও ফৌজদারি দুই ধরনের মামলাই হয় সেখানে। রয়েছে মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ও মহকুমা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এলাকার মানুষ জানান, আমতা-১ ব্লকের লাগোয়া উদয়নারায়ণপুর ও জয়পুর। বর্তমানে এই তিনটি ব্লকের বাসিন্দাদের নানা প্রয়োজনে মহকুমা সদর উলুবেড়িয়ায় যাতায়াত করতে দিন কাবার হয়ে যায়। আমতা পৃথক মহকুমা গঠিত হলে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশও এই বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে। তাঁদের মতো, আমতা আদালতকে এসিজেএম আদালতে পরিণত করা, পৃথক মহকুমাশাসকের দফতর গঠন করা, মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের দফতর তৈরি হলেই আমতাকে পৃথক মহকুমা মর্যাদা দেওয়া যায়।
ফটিকবাবু বলেন, ‘‘এক সময় তো এখানে আদালত, মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর, মহকুমা গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছিল। এটা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, এখানে পৃথক মহকুমা গড়ার ইচ্ছা প্রশাসনের ছিল। সে সব বিষয়কে মাথায় রেখেই মহকুমা গঠনের দাবিতে আমরা মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন মহলে চিঠি দিয়েছি।’’
(শেষ)
ছবি: সুব্রত জানা।
কেমন লাগছে আমার শহর? আপনার নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-আমতা’।
অথবা চিঠি পাঠান,
‘আমার শহর’,
হাওড়া ও হুগলি বিভাগ,
জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা- ৭০০০০১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy