জলসঙ্কটই সঙ্কটে ফেলল মেয়র পারিষদকে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই গঙ্গা থেকে জল তোলার পাইপলাইনে নকশা ‘মর্জিমাফিক’ বদলে ফেলেছেন হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (জল সরবরাহ) অরুণ রায়চৌধুরী। গঙ্গার জলস্তর নেমে যাওয়ার পাশাপাশি এর জেরেও জলসঙ্কট বেড়েছে হাওড়া শহর জুড়ে। এমনই অভিযোগে তাঁকে দুষলেন খোদ মেয়র রথীন চক্রবর্তী।
মঙ্গলবার মেয়র বলেন, “বিভাগীয় মেয়র পারিষদ নিজে বিষয়টি দেখছিলেন। এ জন্য অনেকটা সময়ও দিয়েছিলেন। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে কি না জানি না। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে তাঁর সুচিন্তিত পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। তা হলে এই সঙ্কট হতো না।”
অভিযোগ মানতে নারাজ অরুণবাবু বলেন, “আমি ইঞ্জিনিয়ার নই। নিজের মর্জিতে আমি এই সিদ্ধান্ত নিইনি। মেয়র পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তাঁর মতে, ওই সিদ্ধান্ত ঠিক। জল সরবরাহের সমস্যা কয়েক দিনের মধ্যে কেটে যাবে বলেও মেয়র পারিষদের দাবি।
গ্রীষ্মে পদ্মপুকুর প্রকল্পের জল উৎপাদন বাড়াতে সম্প্রতি অরুণবাবু ও তাঁর দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা সিদ্ধান্ত নেন, বটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতর প্রকল্পের পাম্পহাউসের মাটির নীচে ত্রুটিপূর্ণ পাইপলাইনের নকশা বদলানো হবে। খরচ ধরা হয় ৪৭ লক্ষ টাকা। প্রায় এক মাস কাজ চলার পরে শেষ পর্যায়ের কাজের জন্য গত ৮ তারিখ মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য হাওড়া শহরে জল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। কিন্তু কার্যত টানা ৭২ ঘণ্টা নির্জলা হয়ে যায় গোটা শহর। গত পনেরো দিনে স্বাভাবিক হওয়া দূরে থাক, পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডেই জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
জলসঙ্কটের জের গিয়ে পড়ে সমস্ত কাউন্সিলরের উপরে। খোদ মেয়রের বাড়িও গত দু’দিন প্রায় নির্জলা হয়ে যায়। উদ্বিগ্ন মেয়র সোমবারই শিবপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি)-র বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চেয়েছিলেন। এ দিন পুর-কমিশনারের ঘরে সমস্ত মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যান এবং পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন তিনি।
বিকেলে মেয়র জানান, জলসঙ্কটের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। আইআইইএসটি-র বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারেরা বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখবেন। রথীনবাবু বলেন, “মনে হচ্ছে, বটানিক্যালে পাইপলাইনের নকশা বদলের সময়ে কোনও ভুল হয়েছে। পাইপে ফুটো রয়ে গিয়েছে কি না বা ভূগর্ভস্থ জলাধারগুলি থেকে জল সরবরাহের সময়ে পাইপলাইনে সমস্যা হচ্ছে কি না, দেখা দরকার।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলসঙ্কটের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর সমস্যা মেটাতে এ দিনের বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, মেয়র পারিষদ (জল সরবরাহ) একা যাতে কোনও সিদ্ধান্ত না নিতে পারেন, তাই মেয়রের নির্দেশে ১৪ সদস্যের দু’টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ওই প্রকল্পের এগ্কিজিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার আশিস সেনকে সরিয়ে আর এক এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার যোগেন্দ্র শর্মাকে সুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে নিয়োগ করা হয়েছে। পুরকর্তাদের বক্তব্য, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদ থেকে আশিসবাবুকে এগ্জিকিউটিভ পদে উন্নীত করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ওই প্রকল্পেই রেখে দেওয়া হয়েছিল। তাই তাঁকে সদর দফতরে সরানো হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy