পবিত্র ঈদ পালন করতে ঘরে ঘরে, পথে-প্রবাসে শিশু থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই যখন মাতোয়ারা, উৎসবের আঁচ তখন পোঁছে গেল কারার লৌহকপাটের আড়ালে ওদের কাছেও। পরিবারের থেকে দূরে থেকেও উলুবেড়িয়া মহকুমা সংশোধনাগারের ভিতরে মঙ্গলবার নমাজ, পরস্পর আলিঙ্গনে ঈদ পালন করলেন মুসলমান কয়েদিরা।
ঘড়িতে সকাল সাড়ে ৮টা। সংশোধনাগারের মুসলমান বন্দিরা দাঁড়িয়ে পড়লেন কাতারে (নমাজ পড়ার জন্য সারি)। স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে এসেছিলেন ইমাম। তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে পবিত্র ঈদের নমাজ আদা (পড়া) করলেন বন্দিরা। সংশোধনাগার সূত্রের খবর, এই ইমামই বহু বছর ধরে এখানে কয়েদিদের ঈদের নমাজ পড়িয়ে আসছেন। সকাল থেকে স্নান সেরে নমাজের জন্য তৈরি হয়ে যায় বন্দিরা। সেই ব্যবস্থা করেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষই। তবে শুধু নমাজ পড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়াই নয়, উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ খানাপিনারও। মেনুতে বিরিয়ানি বা লাচ্ছা পরোটা হয়তো ঠাঁই পায়নি, তবে এ দিন দুপুরে কয়েদিদের পাতে ছিল মাংস, ভাত, চাটনি, পাঁপড়ের মতো মেনু। সঙ্গে ছিল সিমুইয়ের পায়েস। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকল কয়েদির জন্যই ছিল একই ব্যবস্থা। সকলেই মিলেমিশে তৃপ্তিভরে খাওয়া-দাওয়া করেন এদিন।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কয়েদিদের জন্য নিত্য বরাদ্দের বাইরে এ সবের খরচের সংকুলান হয় কী ভাবে? এ ধরনের উৎসবের জন্য সরকারের তরফে বিশেষ কোনও ভাতার ব্যবস্থা আছে?
সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সাফ জবাব, যে সব মুসলমান কয়েদি রোজার উপবাস পালন করেন তাঁদের ইফতারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকলেও ঈদের জন্য কোনও ভাতার ব্যবস্থা নেই। তবে উৎসবের জন্য কয়েদি এবং সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ মেনুর ব্যবস্থা করা হয়।
সেটা কী রকম?
সংশোধনাগারের কর্তারা জানালেন, এখানে রবিবার কয়েদিদের মাংস খেতে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু উৎসব যেহেতুু মঙ্গলবার, তাই আগের রবিবার কয়েদিরা তাদের জন্য বরাদ্দ মাংস খায়নি। সেটাই ঈদের দিন তাদের দেওয়া হল। এ ছাড়া রবিবারের বিশেষ প্রাতঃরাশও তারা খায়নি। সেই বরাদ্দও সিমুই তৈরির জন্য রাখা হয়েছিল। এর পাশাপাশি সংশোধনাগারের তরফেও কিছু বরাদ্দ করা হয় উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতে। এ দিন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের জন্য আরও একটি ছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। তা হল, অনেক কয়েদির বাড়ি থেকে সিমুই বা অন্য পছন্দসই পদ রান্না করে আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যা অন্য সময় দেওয়া হয় না। তবে একটি শর্তে কয়েদিদের বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে। সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের সামনেই খাবার যিনি এনেছেন তাঁকে তা আগে চেখে দেখতে হয়েছে। যদিও এটাকে কোনও শর্ত বলতে নারাজ কয়েদিদের বাড়ির লোকজন। তাঁদের কথায়, যে ভাবেই হোক বাড়ির লোকের মুখে এই উৎসবে কিছু তুলে দিতে পেরে তাঁরা তৃপ্ত।
তাঁদের সেই তৃপ্তি এদিন ছড়িয়ে পড়েছিল সংশোধনাগারের সমস্ত কয়েদিদের মুখেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy