Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
১০০ দিনের কাজ-এ ক্ষুব্ধ রাজ্য
Rain

বর্ষায় দু’মাস বন্ধ মাটি কাটার কাজ

বর্ষার এই দু’মাসের জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিল কেন্দ্র

পুকুর খনন। ফাইল চিত্র

পুকুর খনন। ফাইল চিত্র

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০২:২৮
Share: Save:

গত বছরের মতো এ বারও জুলাই-অগস্ট— বর্ষার এই দু’মাসের জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর মনে করে, বর্ষায় মাটি কাটার কাজ করা অর্থহীন। কারণ, মাঠঘাট জলে ডুবে থাকে। সে জন্য দেশ জুড়েই এই দু’মাসের জন্য মাটির কাজ বন্ধ রাখা হয়। এই অবস্থায় প্রকল্পের কাজ চা‌লিয়ে গেলে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে।

গত বছর কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছিল রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। এ বারেও একই ভাবে কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ দফতরের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বর্ষার প্রকোপ সব রাজ্যে সমান নয়। জুলাই-অগস্ট মাসে এ রাজ্যে কখনই টানা বৃষ্টি হয় না। ফলে, মাটির কাজ করার সুযোগ থাকে। পুজোর মরসুমের আগে গরিব মানুষের হাতে বাড়তি টাকা আসে এই প্রকল্পে কাজ করে। কাজ বন্ধ হওয়ার ফলে তাঁরা উৎসবের মরসুমে বাড়তি উপার্জন থেকে বঞ্চিত হবেন। ওই প্রকল্পে বার্ষিক গড় শ্রমদিবস তৈরির ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে।

রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একটি প্রকল্পে টানা দু’মাস কাজ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে লক্ষ লক্ষ জবকার্ডধারী উপার্জনের সুযোগ হারাবেন। এই প্রকল্পে কাজ পাওয়া জবকার্ডধারীদের আইনসঙ্গত অধিকার। কোনও সরকার সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে চিঠি দেব কেন্দ্রকে।’’

১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে নানা ধরনের কাজ করা হলেও মাটি কাটার কাজেই বরাদ্দ সবচেয়ে বেশি। এই কাজে সবচেয়ে বেশি জবকার্ডধারী কাজ দেওয়া যায়। রাস্তা উঁচু করা, রাস্তা তৈরি করা, নিচু জমি উঁচু করা প্রভৃতি কাজ এই প্রকল্পে হয়। কয়েক বছর ধরে সেচ দফতরের নদীবাঁধ মেরামতিও হয়ে ওই প্রকল্পে। সবই মাটির কাজ।

ওই প্রকল্পে নিয়ম—কোনও কাজ কতজন শ্রমিক পাবেন, তার খরচ সংক্রান্ত বিবরণ সংবলিত সাইনবোর্ড এবং বিশ্ববাংলার লোগো কাজের জায়গায় ঝুলিয়ে দিতে হবে। তারপরে সেই সাইনবোর্ড ও লোগোর ছবি তুলে মোবাইলের নির্দিষ্ট অ্যাপ-এ ‘আপলোড’ করতে হবে। যে সব শ্রমিক কাজ করবেন তাঁদের কত টাকা প্রাপ্য হয় তার খুঁটিনাটিও ধারাবাহিক ভাবে অ্যাপ-এ দিতে হবে। কাজ শেষ হয়ে গেলে সেটাও জানিয়ে দিতে হবে। তারপরে ওই অ্যাপ-এ দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শ্রমিকদের মজুরি ব্যাঙ্কে জমা পড়বে। ১ জুলাই থেকে এই অ্যাপ-এ মাটি কাটা কাজ সংক্রান্ত বিভাগটি ‘ব্লক’ করে দেওয়া হয়েছে। তবে, এই প্রকল্পে পুকুর সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়নি।

সেই প্রসঙ্গ তুলে পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, ‘‘বর্ষাকালে মাটি কাটা না-গেলেও পুকুর সংস্কার করা যাবে! হাস্যকর অবস্থা। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে কোনও চিন্তাভাবনা না-করেই মাটি কাটার কাজ বন্ধ করা হয়েছে।’’

বর্ষার মরসুমে মাটি কাটার কাজ চালিয়ে গেলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর যে দুর্নীতির আশঙ্কা করছে, তা অমূলক বলে মনে করছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে প্রতিটি কাজে বাড়তি নজরদারি থাকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের। বৃষ্টি হলে আমরা নিজেরাই তো কাজ বন্ধ করে দিই। তার জন্য টানা কাজ বন্ধ করার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Flood Monsoon Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE