আট মাস আগে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পান্ডুয়ার একটি মেলায় মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ‘মরণকূপের খেলা’। ফের একটি মেলায় ওই খেলার আসর বসেছে। কোনও নিরাপত্তার বালাই না-রেখে ফের ঝুঁকিপূর্ণ ওই খেলা নিয়ে বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষুব্ধ। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন।
‘মরণকূপ’ আসলে বেশ কয়েক ফুট উঁচু, একটি বিশাল কাঠের খাঁচা। তার ভিতরে চক্রাকারে চারটি মোটরবাইক একসঙ্গে তীব্র গতিতে, বিকট আওয়াজে ঘোরে। বাইকগুলিতে না-আছে ব্রেক, না ক্লাচ, হেডলাইট, নম্বরপ্লেট। সাইলেন্সর পাইপের অর্ধেকটা কাটা। বাইক আরোহীদের কারও মাথাতেই হেলমেট থাকে না। এমনকী, বাইকে চালকের পা রাখার জায়গাটুকুও নেই। তাঁরা পা মুড়ে বসেন। মরণকূপের কিনারায় দাঁড়িয়ে মাথা হেঁট করে খেলা দেখতে হয় দর্শকদের।
মনসাপুজো উপলক্ষে পান্ডুয়ার তিন্না হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত তিন দিনের মেলায় ওই খেলার আসর বসেছে। বুধবার থেকে শুরু হয়েছে মেলা। ১০ টাকার টিকিটে বহু মানুষ ওই খেলা দেখতে ভিড় করছেন। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পান্ডুয়ায় মেলাতলা মাঠে মাঘমেলা উপলক্ষ্যে ওই খেলার আসর বসেছিল। কয়েক দিন চলার পরে প্রশাসন বন্ধ করে দেয়। তবে, আগের বার যে দলটি খেলা দেখাতে এসেছিল, তারা এ বার আসেনি। এ বারের দলটি এসেছে বসিরহাট থেকে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খেলার আয়োজন করতে হলে অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু আয়োজকেরা কোনও অনুমতিই নেননি। মেলা কমিটির পক্ষে স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘প্রায় ৫০ বছর ধরে মনসা পুজো উপলক্ষে মেলা বসে। এ বছরই প্রথম ওই খেলার আয়োজন করা হয়েছে। জানি না এর জন্য আলাদা ভাবে সরকারি অনুমতি লাগে।’’ তিন্না হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিয়কান্তি নিয়োগী বলেন, ‘‘বহু বছর ধরেই স্কুলের মাঠে মেলা হয়। তাই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। ওই খেলা নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’’
দর্শকদের অনেকেই জানিয়েছেন, যে গতিতে বাইকগুলি মরণকূপের নীচ থেকে ঘুরতে ঘুরতে উপরে ওঠে, তাতে সময়ের হেরফেরে যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ, কোনও নিরাপত্তা থাকে না। প্রশাসনের কেন নজরদারি নেই, প্রশ্ন তাঁদের। তবে, চুঁচুড়া (সদর) মহকুমাশাসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই খেলার জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। পুলিশকে অবিলম্বে ওই খেলা বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।’’ তবে, বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত খেলা চলেছে।
ওই খেলার দলটির প্রধান শেখ রৌশন অন্যত্র খেলা দেখাতে গিয়ে গত বছর ডান হাত ভেঙেছেন। এখনও ওই হাত পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ঠিক হলে তিনি যে ফের ‘মরণকূপে’ নামবেন, সে কথা জানাতে ভোলেননি। রৌশন বলেন, ‘‘এটাই আমাদের রুটিরুজি। মরণকূপে তাই যেতেই হয়। এই খেলা দেখাতে যে অনুমতি লাগে, সে কথা কেউ কখনও বলেননি।’’
অবশ্য শুধু পান্ডুয়া নয়, এ রাজ্যের গ্রাম-মফস্সলে মেলা বা পালা-পার্বণে ওই ঝুঁকির খেলার আয়োজন চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। অনেক সময় আবার মোটরবাইকের সঙ্গে ছোট গাড়িও তীব্র গতিতে ঘুরতে থাকে। প্রশাসন পান্ডুয়ার খেলা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু অন্যত্র কী হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy