হাওড়ার বামনগাছির নিকাশি নালায় মশার লার্ভা। নিজস্ব চিত্র
বছরের প্রথম তিন মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা ও প্রচারের কাজ শুরু করেনি হাওড়া পুরসভা। শুরু হয়নি এই সব রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশক নিধনের কাজ। হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, প্রতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকা হিসেবে কাজের যে ক্যালেন্ডার পাঠায়, এটাই এতদিন পাঠায়নি। তার ফলে প্রায় তিন হাজার কর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে যে সমীক্ষার কাজ করেন, তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সরকারি প্রচারও।
এতেই অশনি সঙ্কেত দেখছে হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, নিয়মানুযায়ী সারা বছর ধরে প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে এই সমীক্ষার কাজ করার কথা। কিন্তু গত তিন মাস সেই কাজ না হওয়ায় পতঙ্গবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রুখতে পুরসভা এ বছর কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী সারা বছর ধরে এই কাজ করার কথা। গত বছরও তাই হওয়ায় হাওড়ায় ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কম ছিল।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত মে থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত পতঙ্গবাহিত রোগ হওয়ার মরসুম বলে ধরে নেওয়া হয়। তাই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনে জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষা প্রচারের কাজ। বছর চারেক আগে হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন পুরসভা এই রোগ মোকাবিলা করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে ঢেলে সাজায়। অস্থায়ী ভাবে প্রায় তিন হাজার মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী-সহ তৈরি করা হয় র্যাপিড অ্যাকশন টিম, ভেক্টর কন্ট্রেল ইউনিট। হাওড়ার সঙ্গে বালি পুরসভা সংযুক্ত হওয়ার পরে মোট ৬৬টি ওয়ার্ডের জন্য নেওয়া হয় ২৮৩ জন সুপারভাইসার এবং তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৈরি হয় ১৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক আশুতোষ কুন্ডু জানান, প্রতি বছর জানুয়ারি থেকেই স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতি সপ্তাহে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখেন, কোথাও জল জমে আছে কি না। খোঁজ নেন কারও জ্বর হচ্ছে কি না। তাঁদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে তথ্যপঞ্জি তৈরি করে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে স্বাস্থ্য দফতরে দৈনন্দিন রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট দেখেই কোন ওয়ার্ডে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ দেয়। আশুতোষবাবু বলেন, ‘‘বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য দফতরের যে ক্যালেন্ডার দেয়, তা মেনেই কাজ হয়। কিন্তু এ বছর তা এখনও পর্যন্ত
আমরা পাইনি। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়মিত লার্ভিসাইড অয়েল (মশা মারার তেল) দেওয়া হচ্ছে।’’
আশুতোষবাবু বললেও বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত তিন মাস পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে প্রচার বা কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ চোখে পড়েনি কারও। যে সব ওয়ার্ডে এই সব রোগ বেশি হয়, সেখানকার মশার ডিম পাড়ার জয়াগা চিহ্নিত করার কাজ এখনও শুরু হয়নি। মশা মারার তেল দিতেও দেখা যায়নি পুরকর্মীদের। অথচ এর মধ্যে কয়েক দিন বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। ওই সব জায়গায় মশার লার্ভা নিধনের কাজও হয়নি।
হাওড়ার পুর কমিশনার তথা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন বিজিন কৃষ্ণ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা আজই স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা পেয়েছি। সেই অনুযায়ী কাজ হবে। আশা করা যায়, আগামী মে মাসের মধ্যে এই রোগ মোকাবিলার জন্য যা করণীয়, তা করতে পারবে পুরসভা।’’ এই কাজে গত তিন মাস পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে চাননি পুর কমিশনার। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর কেন নির্দেশিকা বা ক্যালেন্ডার পাঠাতে দেরি করল, তা ওই দফতরই বলবে। আমরা দ্রুত ভেক্টর কন্ট্রোলের কাজ শুরু করব। সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy