জাতীয় সড়কের ধারে বেআইনি পার্কিং। ছবি: সুব্রত জানা।
নিজস্ব পার্কিং জোন নেই। নেই সার্ভিস রোড। অথচ যত্রতত্র গড়ে উঠেছে একের পর এক কারখানা।
হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের (মুম্বই রোড) ধারে কারখানাগুলি থেকে আকছার পণ্যবোঝা ই লরি, ট্রাক উঠে পড়ে জাতীয় সড়কে। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গত ৭ জানুয়ারি কুলগাছিয়ার দুর্ঘটনার পিছনেও এটাই কারণ বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওইদিন ভোরে পুরী থেকে বেড়িয়ে ফেরার পথে যাত্রীবোঝাই একটি বাস এসে ধাক্কা মারে লোহার পাত বোঝাই একটি ট্রেলারের পিছনে। কুলগাছিয়ায় একটি কারখানা থেকে লোহার পাত নিয়ে ট্রেলারটি সরাসরি মুম্বই রোডে উঠে পড়েছিল। প্রচণ্ড গতিতে আসা বাসটি ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মারে। বাসের পাঁচ যাত্রী মারা যান। জখম হন ৩১ জন। কুলগাছিয়া, রানিহাটি, ধূলাগড়ি, আলমপুর, জঙ্গলপুর প্রভৃতি জায়গায় মুম্বই রোডের দু’দিকে গড়ে উঠেছে একাধিক কারখানা। এই সব কারখানায় ঢোকার মুখে বা বেরোনোর সময় ট্রাক-ট্রেলারগুলি কোনও নিয়মই মানে না বলে অভিযোগ। রাস্তা থেকে নামার সময়ে তারা আচমকা ইউ টার্ন নিয়ে কারখানায় ঢুকে পড়ে। আবার বেরোনোর সময়েও একইভাবে রাস্তায় আচমকা উঠে পড়ে। সেই সময় অন্য গাড়ি এসে পড়লে সংঘর্ষ বাধে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এই ধরনের দুর্ঘটনা বার বার ঘটলেও পুলিশের কোনও হুঁশ নেই। যে সব কারখানার লরি বা ট্রাকের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে তাদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। জাতীয় সড়ক সংস্থার বক্তব্য, মুম্বই রোড ছয় লেন করার কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তাই বহু জায়গায় সার্ভিস রোড তৈরি হয়নি। তবে কারখানাগুলির সামনে পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি রাজ্য পুলিশের দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
মুম্বই রোডের ধারে কারখানাগুলিতে লরি বা ট্রাক ঢোকা, বেরোনো নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে তা স্বীকার করেছেন হাওড়ার (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুমিতকুমার। তিনি বলেন, ‘‘কারখানাগুলির সামনে মুম্বই রোডের ধারে লরি এবং ট্রাক পার্কিং নিয়ে যে সমস্যা আছে তা দূর করতে সব মহলকে নিয়ে বসে পরিকল্পনা করা হবে।’’
বুধবার সকালে কুলগাছিয়ায় একটি কারাখানায় গিয়ে দেখা গেল, কলকাতামুখী মুম্বই রোডের লেনের কার্যত অর্ধেক দখল করে দাঁড়িয়ে সার সার ট্রেলার, লরি। স্থানীয় লোকজন জানান, ওই কারখানায় ঢোকার আগে এবং বেরোনোর পর লরি-ট্রাক অনেকক্ষণ এই দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে অন্য গাড়ি সমস্যায় পড়ে। সমর বাগ নামে এক অটো চালক বলেন, ‘‘সকালে ৯টা পর্যন্ত এই চত্বর দিয়ে যেতে খুব সমস্যায় পড়ি। রাস্তার প্রায় অর্ধেক জুড়ে ট্রাক-লরি দাঁড়িয়ে থাকে। ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।’’
কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য রাস্তায় লরি দাঁড় করিয়ে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেন। লরি বা ট্রাক কারখানায় ঢোকা-বেরোনোর সময় তাদের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা রাস্তায় পাহারায় থাকেন বলে বলেও কর্তৃপক্ষের দাবি। প্রচুর কারখানা থাকায় আলমপুর এবং জঙ্গলপুর এলাকাকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনাপ্রবণ বলে চিহ্নিত করেছেন। জঙ্গলপুরে বেসরকারি শিল্পতালুকের সামনে ট্রাফিক পুলিশের একটি অস্থায়ী ফাঁড়ি করা হলেও পরে তা তুলে দেওয়া হয়েছে। ডোমজুড়ের নিবড়া থেকে বাগনানের দেউলটি পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তার সর্বত্র একই অবস্থা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও কারখানাগুলির সামনে কোনও পুলিশই থাকে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy