Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

হুকিংয়ের চেষ্টার প্রতিবাদ, প্রাক্তন সেনার স্ত্রীকে অ্যাসিড

প্রতিবেশী তথা আত্মীয়ের হুকিংয়ের চেষ্টার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই ‘অপরাধে’ অ্যাসিড হামলার শিকার হতে হল এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর স্ত্রীকে। বুধবার রাতে হাওড়ার বাউড়িয়ার এই ঘটনায় অভিযুক্ত এক দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুড়ে গিয়েছে পিঠ

পুড়ে গিয়েছে পিঠ

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাউড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০১
Share: Save:

প্রতিবেশী তথা আত্মীয়ের হুকিংয়ের চেষ্টার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। সেই ‘অপরাধে’ অ্যাসিড হামলার শিকার হতে হল এক প্রাক্তন সেনাকর্মীর স্ত্রীকে। বুধবার রাতে হাওড়ার বাউড়িয়ার এই ঘটনায় অভিযুক্ত এক দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, অ্যাসিড হামলায় দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। দোকানে দোকানে অ্যাসিড বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞাও জারি রয়েছে। তবু রাজ্যে মহিলাদের উপরে অ্যাসিড হানার বিরাম নেই। দিন কয়েক আগে এই হাওড়ারই উলুবেড়িয়ায় এক বধূর উপরে অ্যাসিড হামলার অভিযোগ ওঠে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ বার সেই তালিকায় যুক্ত হল বাউড়িয়ার ঘটনা।

বুধবার রাতে নির্মলা সিংহ নামে বছর পঞ্চান্নর যে প্রৌঢ়ার উপরে অ্যাসিড হামলা হয়, তিনি বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার সিপাই কোয়ার্টারে থাকেন। মেয়ে পল্লবীর সঙ্গে বাজার সেরে নিজের ঘরে ঢুকতে যাওয়ার আগে আবাসনেই আক্রান্ত হন তিনি। অ্যাসিডে জখম নির্মলাদেবীকে আলিপুর সেনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। অ্যাসিডে তাঁর পিঠের বাঁ দিক এবং বাঁ হাতের একাংশ পুড়ে যায়। তাঁর মেয়ে পল্লবীর অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ নির্মলাদেবীর আত্মীয় সুনীল সিংহ এবং তার স্ত্রী গীতাকে গ্রেফতার করে। তবে, সুনীলের ছেলে অভিযুক্ত সুমিতকে পুলিশ ধরতে পারেনি।

পুলিশ জানায়, পলাতক সুমিতের খোঁজে তল্লাশি চলছে। পরিবারটি কোথা থেকে অ্যাসিড পেল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, হুকিংয়ের চেষ্টার প্রতিবাদের জেরেই এই অ্যাসিড হামলা। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন নির্মলাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ পুজোর সময়ে আমরা কয়েক জন ওদের হুকিংয়ের চেষ্টার প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই রাগ থেকেই ওরা এমন করল।’’

ধৃত গীতা সিংহ এবং ধৃত সুনীল সিংহ। ছবি: সুব্রত জানা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দোতলা ওই আবাসনে খানআটেক পরিবারের বাস। নির্মলাদেবীর স্বামী ব্রিজকিশোর সিংহ প্রাক্তন সেনাকর্মী। অবসরের পরে তিনি ফোর্ট গ্লস্টার কেব্‌ল কারখানায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ নেন। সুনীল তাঁর ভাগ্নে। সুনীলও ওই কারখানায় কাজ করত। বিল দিতে না পারায় দুর্গাপুজোর দিন কুড়ি আগে ওই আবাসনের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সমস্যা মেটাতে অন্য পরিবারগুলি বিল মিটিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিলেও সুনীলরা নেয়নি। এ নিয়ে থানা-পুলিশও হয়। অভিযোগ, এর পরেই সুনীলরা হুকিংয়ের চেষ্টা করে। আবাসনের বাকি পরিবারগুলি বাধা দেয়। বেশি প্রতিবাদ করে ব্রিজকিশোরের পরিবারই।

নির্মলাদেবী বলেন, ‘‘বুধবার রাতে ঘরে ঢুকতে যাওয়ার আগেই সুনীলের বউ কিছু একটা ছোড়ে। সুনীলরাও সেখানে ছিল। আমি চিৎকার করতেই ফের কিছু ছোড়া হয়। গা জ্বালা করতে শুরু করে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। পরে শুনলাম অ্যাসিড।’’

ওই আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের অভিযোগ, সুনীল বদমেজাজি। সামান্য কারণে সে সকলের সঙ্গে বচসায় জড়ায়। মদ খেয়ে গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করলে চড়াও হয়। নির্মলাদেবীর উপরে অ্যাসিড হামলার পরে সুনীল ও তার পরিবারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন আবাসনের সকলে। জেলার এসপিকে ফোন করে বিদ্যুৎমন্ত্রী অভিযুক্তদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hooking Acid Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE