ছবি: তাপস ঘোষ
‘বলিছে সোনার ঘড়ি.....’
ছোটবেলার সেই ছড়ার মতো এই ঘড়ি অবশ্য টিক টিক টিক নয়, ঢং ঢং শব্দে জানান দিয়ে চলেছে তার অস্তিত্ব। শতবর্ষ পার করেও তার বিরাম নেই। সময় মেনে পথ চলা মানুষের কাছে এখনও বড় ভরসা।
হুগলির ইতিহাস প্রাচীন সদর শহর চুঁচুড়ার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে এই ঘড়ি। ১৯০১ থেকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত ছিল বড়লাট সপ্তম এডওয়ার্ড-এর শাসনকাল। তারই স্মৃতিতে ১৯১৪ সালে এই ঘড়ি বসানো হয় এখানে। সেই সময় অবশ্য এই অঞ্চলের নাম ছিল টাউন গার্ড রোড ঝাউতলা। ঐতিহাসিক ঘড়ির সঙ্গে সময় কাটাতে কাটাতে এক সময় মানুষের ভালবাসায় এলাকার নামই বদলে যায়। হয়ে যায় ঘড়ির মোড়। এখন যেখানে বাস, মিনিবাস, অটো, টোটো, রিকশা চলাচল করে তখন ঘড়িকে ঘিরে এই রাস্তায় চলত ফিটন। রাস্তার মোড়ে ১৬ স্কোয়ার ফুট জায়গায় ৩০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে এই ঘড়ি। ঢালাই লোহার স্তম্ভের উপর চারদিকে ঘড়ির চারটি ডায়াল। ঘড়ির মূল যন্ত্রাংশ পিতল ও ইস্পাতের। প্রতি আধঘণ্টা অন্তর তার ঢং ঢং আওয়াজ শুনে আজও নিজের হাতের ঘড়ি মিলিয়ে নেন না এমন মানুষ মেলা ভার।
এত বছর একটানা পেরিয়ে এলেও অবশ্য একবারই দিন পনেরোর জন্য থেমে গিয়েছিল ঐতিহাসিক এই ঘ়ড়ি। ২০০৯ সালে আয়লার সময়। ব্রিটিশ রাজত্বে ঘড়ি মেরামতির দায়িত্ব পালন করত ‘কুক অ্যান্ড কেলভি’ সংস্থা। ক্রমে দেশ স্বাধীন হল। মেরামতির দায়িত্ব পেল কলকাতার বিবি দত্ত কোম্পানি। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ঘড়ির স্বাস্থ্য রক্ষার ভার ছিল তাঁদের হাতে। পরবর্তীতে চুঁচুড়ার এম এস হোসেন অ্যান্ড কোম্পানি পায় ঘড়ির দেখভালের দায়িত্ব। এখনও পর্যন্ত তাঁরাই ঘড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার তত্ত্বাবধানে প্রতি চার বছর অন্তর ঘড়ির সার্বিক মেরামতি হয়। আনুমানিক খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। বর্তমান যুগে ব্যাটারি চালিত ঘড়িতে দম দিতে হয় না। কিন্তু প্রাচীন এই ঘড়িতে চারদিন অন্তর দম দিতে হয়।
ঘড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা এম এস হোসেন অ্যান্ড কোম্পানির তরফে সৈয়দ মহম্মদ হোসেন বলেন, ‘‘বংশানুক্রমে ১৯০৩ সাল থেকে চুঁচুড়া শহরে ঘড়ির ব্যবসা। ৪০ বছরেরও ওপর এই ঘড়ি পরিচর্যার দায়িত্ব পালন করছে আমাদের সংস্থা। প্রতি চার বছর অন্তর একবার মেরামতি করা হয়। তা ছাড়া ঘড়ির দম দেওয়া এবং সময় সংক্রান্ত কোনও ত্রুটি দেখা দিলে আমরাই সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। ঐতিহাসিক এই ঘড়ি সারানোর দায়িত্ব পাওয়াটা গর্বের তো বটেই। মনে হয় যেন ইতিহাসকে ছুঁয়ে আছি।’’
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাচীন এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে এক ঐতিহ্য বহন করছে এই ঘড়ি। ওই এলাকা দিয়ে গিয়েছেন অথচ ওই ঘড়ি দেখে নিজের হাতঘড়ি মেলালনি এমন মানুষ বোধহয় নেই। শহরের গর্বের জিনিস এটি। অবশ্য দ্রষ্টব্যও বটে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy