Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
হাওড়ায় অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে

ক্ষতিপূরণের ফর্ম বিলিতে দলবাজি

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু হাওড়া জেলায় সেই ক্ষতিপূরণের ফর্ম বিলি নিয়ে দলবাজির অভিযোগ উঠছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বেছে বেছে দলীয় সমর্থক চাষিদেরই ওই ফর্ম দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত থেকে। ফলে, বহু ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সেই ফর্ম পাচ্ছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু হাওড়া জেলায় সেই ক্ষতিপূরণের ফর্ম বিলি নিয়ে দলবাজির অভিযোগ উঠছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের অভিযোগ, বেছে বেছে দলীয় সমর্থক চাষিদেরই ওই ফর্ম দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত থেকে। ফলে, বহু ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সেই ফর্ম পাচ্ছেন না। ফলে, তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির তথ্যও জমা দিতে পারছেন না। একই অভিযোগ রয়েছে সিপিএমেরও। শাসকদল অভিযোগ মানেনি।

অতিবৃষ্টি ও বন্যায় হাওড়া জেলায় মোট ৪৩ হাজার হেক্টর জমির আমন চাষের বীজতলা, ফুল ও সব্জি চাষ নষ্ট হয়েছে। ফলে, কার্যত মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। কারণ, বোরো চাষেও তাঁদের লোকসান হয়েছিল। আমন চাষে তাঁরা সেই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু সেই আশায় জল ঢেলে দেয় প্রকৃতি। সরকারি ভাবে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিতে উদ্যোগী হয় সরকার।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিপূরণের ফর্ম পূরণ করে চাষিদের তা জমা দিতে হবে। তা যাচাই করেই চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ওই ফর্ম ইতিমধ্যেই ব্লক প্রশাসনগুলি মারফত পঞ্চায়েতগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে প্রধান ও সদস্যদেরই তা বিলি করার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে ওই ফর্ম বিলির ক্ষেত্রে দলবাজি হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। তাঁদের দাবি, বেশির ভাগ জায়গাতেই পঞ্চায়েতের বিরোধী সদস্যদের ফর্ম দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত সমিতি ফর্ম বিলি করছে। তাঁরা কিছু জানেন না। আবার কিছু পঞ্চায়েত বিরোধী সদস্যদের ফর্ম দিলেও তা তৃণমূল সদস্যদের থেকে অপেক্ষাকৃত কম।

আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, ‘‘জেলা জুড়েই ক্ষতিপূরণের ফর্ম বিলি নিয়ে শাসকদল দলবাজি করছে। জেলা কৃষি আধিকারিককে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ জেলা কৃষি অধিকর্তা মানসরঞ্জন প্রধানের দাবি, ‘‘লিখিত কোনও অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’’ জেলা (শহর) তৃণমূল সভাপতি তথা কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে যাতে সব ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকেই ওই ফর্ম বিলি করা হয়। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ ধরনের অভিযোগ উঠলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অরূপবাবু ওই নির্দেশের কথা জানালেও হাওড়ার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী সদস্যদের গলায় শোনা যাচ্ছে অন্য সুর। শ্যামপুর-২ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত শশাটি পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য আসমা খাতুন এবং কংগ্রেস সদস্য কাশীনাথ সাউ বলেন, ‘‘দিন দশেক ধরে ফর্ম বিলি হচ্ছে। আমাদের কিছু জানানোই হয়নি। পরে জানতে পেরে পঞ্চায়েতে গেলে বলা হচ্ছে, আমরা এ ব্যাপারে কিছু জানি না। পঞ্চায়েত সমিতি বিষয়টি দেখছে।’’

ওই পঞ্চায়েতের প্রধান সবিতা ঘোষ বৃহস্পতিবার স্বীকার করেন, ওই ফর্ম পঞ্চায়েত থেকে সদস্যদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদের ফর্ম না পাওয়ার অভিযোগটি শুনে তিনি উপপ্রধান আশুতোষ মল্লিককে ফোন দিয়ে দেন। আশুতোষবাবু আবার দাবি করেন, ‘‘ফর্ম দেওয়ার খবর জানা নেই। পঞ্চায়েত সমিতি ফর্ম দিচ্ছে।’’ এমন চাপান-উতোর শোনা গিয়েছে আরও কয়েকটি পঞ্চায়েতেও।

শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জুলফিকার আলি মোল্লা বলেন, ‘‘ফর্ম দেওয়ার কথা পঞ্চায়েতেরই। পঞ্চায়েতে ফর্ম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী ব্যাপার খোঁজ নিয়ে দেখছি। দলমত নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ওই ফর্ম দিতে বলা হয়েছে।’’

পঞ্চায়েতে গিয়েও ফর্ম না মেলায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা আর হতাশা গোপন করছেন না। শশাটির রামনগরের চাষি গৌতম সাউ দেড় বিঘা জমিতে আমনের বীজতলা করেছিলেন। সবটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যদের থেকে ফর্ম পাচ্ছি না। পঞ্চায়েতে গেলেও মিলছে না। আদৌ ক্ষতিপূরণ পাব কিনা, জানি না। একই অবস্থা ওই পঞ্চায়েতেরই সুলতানপুরের চাষি শেখ আলি হোসেনের। তাঁর ৮ বিঘা জমির আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তিনিও ক্ষতিপূরণের ফর্ম পাচ্ছেন না। বাছরি পঞ্চায়েতের চাষি মধুসূদন চক্রবর্তীরও দু’বিঘা জমির চাষ নষ্ট হয়েছে। তিনিও ফর্ম পাচ্ছেন না। আবার বাগনান-২ ব্লকের ওরফুলি পঞ্চায়েতের এক ফুলচাষির বিঘা তিনেক জমির ফুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরও ক্ষোভ, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যকে ফর্মের কথা বললে তিনি বলছেন, কৃষি আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে। আবার কৃষি দফতরের অফিসে গেলে সেখান থেকে বলা হচ্ছে পঞ্চায়েতে যেতে। কিছুই বুঝতে পারছি না, কোথায় গেলে ওই ফর্ম পাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE