নগরায়ণের আঁচ লেগেছে গ্রামীণ হাওড়ায়। পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। সেই সংযোগ দিতে তৈরি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। কিন্তু তাদের সুপারিশ মতো জেলা পরিষদ এখনও এ নিয়ে দু’টি কমিটির মধ্যে একটি তৈরি করতে না পারায় সেই কাজ শুরু হল না। রাস্তার ধারের কল থেকে জল নিয়েই প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
জেলা পরিষদ অবশ্য দাবি করেছে, লোকসভা নির্বাচনের জন্যই এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু করা যায়নি। শীঘ্রই বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের বিষয়ে খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করে ফেলা হবে।
বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের ভূমিকা ঠিক কী হওয়ার কথা?
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে তারা জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়ে প্রতিটি পঞ্চায়েতে একটি করে ‘ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন কমিটি’ এবং জেলা পরিষদভিত্তিকও সেই কমিটি গড়তে নির্দেশ দেয়। জেলা পরিষদের কমিটির সভাপতি থাকবেন জেলা সভাধিপতি, পঞ্চায়েতভিত্তিক কমিটির মাথায় থাকবেন সংশ্লিষ্ট প্রধান। কোনও গ্রামে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দিতে হলে তার পরিকল্পনা করবে পঞ্চায়েতভিত্তিক ওই কমিটি। যেহেতু গ্রাহকদের কাছ থেকে পরিষেবা কর নেওয়া হবে, তাই সেই বিষয়টি গ্রামবাসীদের সঙ্গে আগেভাগে বসে আলোচনা করে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। না হলে পরিষেবা কর দিতে তাঁরা বেঁকে বসতে পারেন। গ্রাম পঞ্চায়েতভিত্তিক ‘ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন কমিটি’ সেই কাজটিই করবে। সেই পরিকল্পনা যাবে জেলাস্তরের কমিটিতে। সেখান থেকে আবার কোন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা প্রয়োজন, সেই সংক্রান্ত সুপারিশ যাবে রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে। তার পরেই বরাদ্দ হবে টাকা। কিন্তু এই ছ’মাসে জেলা পরিষদের কমিটি তৈরি হলেও পঞ্চায়েতভিত্তিক কমিটি গঠন এখনও বিশ বাঁও জলে। সেই কমিটি গঠন না হলে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহের উদ্যোগ বাস্তবায়িত করা যাবে না।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যে জেলা পরিষদকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে দ্রুত গ্রাম পঞ্চায়েতভিত্তিক কমিটি গড়তে উদ্যোগী হওয়ার জন্য জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও তা করা হয়নি। এ নিয়ে জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ বলেন, “আগামী ৩০ জুন জেলার ১৪টি ব্লকের বিডিওদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকেই নির্দেশ দেওয়া হবে ১৫৭টি পঞ্চয়েতের প্রতিটিতে যেন কমিটি গঠন করে ফেলা হয়।”
বর্তমানে গ্রামীণ হাওড়ায় স্ট্যান্ডপোস্টগুলিতে জল সরবরাহের জন্য যে সব পাম্প হাউস রয়েছে, সেগুলি চালানোর জন্য বিদ্যুতের বিল, অপারেটরদের বেতন এবং মেরামতির টাকা সবই খরচ করতে হয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে। জেলার আটটি জলপ্রকল্প আবার রয়েছে জেলা পরিষদের হাতে। এই প্রকল্পগুলি চালানোর খরচ মেটায় জেলা পরিষদ। একটি টাকাও এই সব প্রকল্প থেকে আয় নেই। অথচ, সেগুলি চালানোর জন্য বিপুল খরচ হয়। হিমশিম খায় জেলা পরিষদ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। এই সমস্যার সমাধান করতেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার পথে হাঁটছে। যাতে গ্রাহকদের কাছ থেকে পরিষেবা বাবদ পাওয়া টাকায় পাম্প অপারেটরদের বেতন এবং বিদ্যুতের বিল অন্তত মেটানো যায়।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ নেওয়ার প্রকল্পটি অবশ্য কয়েক বছর আগেও ছিল। তখন দায়িত্ব ছিল বিডিও-র হাতে। তাঁর নেতৃত্বে কমিটি গড়ে গ্রামবাসীরা প্রকল্প তৈরি করতে পারতেন। সেখানেও পরিষেবা বাবদ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকায় স্বাধীন ভাবে প্রকল্প চালানোর কথা বলা ছিল। কোথাও কোথাও এই পদ্ধতিতে প্রকল্প তৈরিও হয়। কিন্তু তার বেশিরভাগই চালু হয়নি। ওই দফতরের এক কর্তা জানান, মানুষের কাছ থেকে যেহেতু টাকা নিয়ে প্রকল্প চালু রাখতে হবে, তাই আমলাতান্ত্রিক উপায়ে কয়েক জনকে নিয়ে ঘরে বসে প্রকল্প তৈরি না করে পঞ্চায়েতকে এই কাজে সামিল করার জন্য এ বার পঞ্চায়েতভিত্তিক ‘ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন কমিটি’ গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy