Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

যুবককে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার স্ত্রী ও সৎ ছেলে

ভাড়াটে দুষ্কৃতী দিয়ে ঘুমন্ত এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করে বস্তায় ভরে দেহ লোপাটের অভিযোগে স্ত্রী এবং সৎ ছেলেকে গ্রেফতার করল হুগলির হরিপাল পুলিশ। দুই দুষ্কৃতীও পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। সৎ মেয়ের উপরে কু-নজর পড়েছে এমন সন্দেহ থেকেই ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয় বলে পুলিশের অনুমান। জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক জন দুষ্কৃতী পলাতক। তার খোঁজ চলছে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
হরিপাল শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

ভাড়াটে দুষ্কৃতী দিয়ে ঘুমন্ত এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করে বস্তায় ভরে দেহ লোপাটের অভিযোগে স্ত্রী এবং সৎ ছেলেকে গ্রেফতার করল হুগলির হরিপাল পুলিশ। দুই দুষ্কৃতীও পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। সৎ মেয়ের উপরে কু-নজর পড়েছে এমন সন্দেহ থেকেই ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয় বলে পুলিশের অনুমান।

জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক জন দুষ্কৃতী পলাতক। তার খোঁজ চলছে।”

পুলিশ জানায়, গত ১৫ জুলাই হরিপালের অভিরামপুরের একটি পুকুরের পাড় থেকে একটি বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতের সর্বাঙ্গে ছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর চিহ্ন। ওই দিন অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে জানা যায়, নিহতের নাম মোহন্ত আদক। পেশায় রাজমিস্ত্রী। বয়স ৩৪ বছর। বাড়ি সিঙ্গুরের নাদা এলাকায়। সৎ ছেলে উৎপল তাঁকে শনাক্ত করেন। কিন্তু কী কারণে মোহন্তবাবুকে খুন করা হতে পারে, সে ব্যাপারে বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে বিশেষ কোনও তথ্য তদন্তকারীরা পুলিশ অফিসাররা।

ঘটনার চার মাস পরে, বুধবার সন্ধ্যায় হরিপাল থানার ওসি বঙ্কিম বিশ্বাস মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে সুনীল রুইদাস নামে এক দুষ্কৃতীকে চন্দননগর থেকে গ্রেফতার করেন। পুলিশের দাবি, ধৃতের কাছ থেকে নিহতের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়। জেরায় খুনের কথা কবুল করে ওই দুষ্কৃতী জানায়, উৎপল এবং তাঁর মা কাজলদেবীই ওই ঘটনার মূল চক্রী।

পুলিশের দাবি, ধৃত দুষ্কৃতীর বয়ান অনুযায়ী, মোহন্তবাবুকে খুনের জন্য উৎপল সুনীল-সহ চাঁপাডাঙার চার দুষ্কৃতীকে ভাড়া করে। ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকায় রফা হয়। ১৪ জুলাই রাতে শেষ তারকেশ্বর-হাওড়া লোকালে চেপে তারা নালিকুল স্টেশনে নামে। উৎপল অটোচালক। রাত ১২টা নাগাদ সে স্টেশন থেকে অটোয় চাপিয়ে ওই চার দুষ্কৃতীকে বাড়িতে নিয়ে যায়। মোহন্তবাবু খাওয়াদাওয়া সেরে ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুমন্ত অবস্থাতেই ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। দুষ্কৃতীরা নিজেদের সঙ্গে ছুরি এনেছিল। উৎপল এবং তার মা-ও আগেভাগে ছুরি এবং কাটারি জোগাড় করে রেখেছিল। দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি তারাও হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি। তারাও মোহন্তবাবুর বুকের উপর চেপে তাঁর সারা শরীরে এলোপাথাড়ি কোপায়। এর পর দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মিলে ঠাণ্ডা মাথায় দেহটি প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে ফেলে বস্তায় ভরে তারা। রাতের অন্ধকারে উৎপল অটোয় চাপিয়ে মৃতদেহ অভিরামপুরের ওই পুকুরের ধারে ফেলে দিয়ে আসে। ‘অপারেশন’ শেষ হলে দুষ্কৃতীদের মালিয়া স্টেশনে নামিয়ে দেয় সে। ভোরের প্রথম ট্রেন ধরে দুষ্কৃতীরা ফিরে যায়।

সুনীলকে জেরার পরেই বুধবার রাতে উৎপলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গভীর রাতে চাঁপাডাঙা থেকে মেঘনাদ বাগ ওরফে কালো নামে আরও এক দুষ্কৃতীকে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় কাজলদেবীকে। এ দিন ধৃতদের চন্দননগর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের ৬ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, এ দিন সন্ধ্যায় সেখ সোহেল নামে আরও এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাপ্পা নামে অপর এক দুষ্কৃতীর খোঁজ চলছে। তদন্তকারী এক পুলিশ অফিসার জানান, রফা অনুযায়ী সব টাকা দুষ্কৃতীদের দেয়নি উৎপলরা। ৩০-৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল।”

কেন খুন করা হল মোহন্তবাবুকে?

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, কাজলদেবী মোহন্তবাবুর থেকে বয়সে অন্তত ১০-১২ বছরের বড়। প্রায় পনেরো বছর আগে তার প্রথম স্বামী মারা যান। এর পরে মোহন্তবাবুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। উৎপল এবং তাঁর দিদি কাজলদেবীর প্রথম পক্ষের সন্তান। মেয়েটি পুলিশ কনস্টেবল। তিনি মোহন্তবাবুর থেকে কয়েক বছরের ছোট। ধৃত মা-ছেলের সঙ্গে কথা বলার পরে পুলিশের অনুমান, সৎ মেয়ের উপরে মোহন্তবাবুর কু-নজর পড়েছে, এই সন্দেহ তাদের মনে জাঁকিয়ে বসেছিল। সেই কারণেই তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে তারা। মেয়েটি অবশ্য খুনের কথা জানতেন না বলেই পুলিশ মনে করছে। ঘটনার দিন তিনি কর্মস্থলে ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE