কেউ আসেন দুই গাঁ পেরিয়ে, আবার কেউ ভিন রাজ্যের! এক চিলতে ঘর, অন্ধকারকে সঙ্গে নিয়েই কাটে কয়েক মাসের কর্মজীবন। বড়রা মাটি তুলে ইট বানান, আগুনের আঁচে সেগুলো শক্ত করেন। ছোটদের কাজ নরম নকশা রোদে শুকনো।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রিপোর্ট জানাচ্ছে, এ রাজ্যের ইটভাটায় কাজ করা পরিবারের শিশুরা সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। পাশাপাশি হেনস্থা, পাচার এবং নাবালিকা বিয়ের মতো ঘটনাও বেশি হয় ইটভাটাগুলিতে।
এ রাজ্যের অধিকাংশ ইটভাটায় কাজের সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভিন রাজ্যের অসংখ্য মানুষ মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলাগুলির ইটভাটায় কাজ করতে যান। ইটভাটার ভিতরেই থাকে কর্মীদের পরিবার। ফলে, গ্রামে ঘুরে আশা প্রকল্পের কর্মীরা টিকাকরণের কাজ চালালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাদ পড়ে ইটভাটাগুলি। বছরে সাত মাস এক জায়গা এবং বাকি সময় অন্য জায়গায় থাকার জেরে বিভিন্ন পরিষেবা থেকেও বাদ পড়ছে ইটভাটায় থাকা শিশুরা।
সম্প্রতি কিছুটা ছবি বদলেছে। আশা প্রকল্পের কর্মীরা ইটভাটাতেও কাজ শুরু করেছেন। ইটভাটার শিশুদের সংক্রমণ রুখতে তাঁরা গ্রামের বাড়ি-বাড়ি ঘুরে টিকা দেওয়ার পাশাপাশি ইটভাটাতে নজরদারি শুরু করেছেন। টিকাকরণের প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর কাজ শুরু হয়েছে।
মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলায় ইটভাটায় থাকা পরিবারগুলির শিশুদের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি মায়েদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরও চালানো হচ্ছে। কোন বয়সে কী টিকা দিতে হয়, কোথায় সেটা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে তাঁদের বোঝানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শিশু কল্যাণ সমিতি গঠনের প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে রয়েছে বঙ্গ
বালি, কাদার মধ্যে অধিকাংশ সময় কাটানোয় ইটভাটায় থাকা শিশুদের পেট ও ফুসফুসের অসুখের ঝুঁকিও থাকে। সে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শিক্ষার অধিকার থেকেও অধিকাংশ শিশু বঞ্চিত থাকছে। বছরে ছয় থেকে সাত মাস অন্য জায়গায় থাকার জেরে যে গ্রামের স্কুলে তারা পড়াশোনা করত, সেখানে আর তাদের পড়া হয় না। নতুন করে ইটভাটার কাছের স্কুলে ভর্তিও হয় না। যার জেরে
বাড়ে স্কুলছুটের সংখ্যা। সম্প্রতি এ নিয়েও পরিকল্পনা শুরু করেছে শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। ইটভাটার কাছের স্কুলে ওই শিশুদের পড়াশোনা চালানো এবং ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা কী ভাবে করা যায়, সে নিয়ে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
ইটভাটার শিশুদের নিয়ে কাজ করা প্রায় দশটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একজোটে জানুয়ারি মাসে রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কাছে তাদের সমস্যা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। মায়েদের সচেতনতা বাড়িয়ে কী ভাবে অবস্থার পরিবর্তন করা যায়, সে নিয়ে একটি পরিকল্পনাও জমা দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে অনন্যাদেবী বলেন, ‘‘ইটভাটার শিশুদের সমস্যার সব দিক নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। এ রাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্যের শিশুদের অধিকারকেও মর্যাদা দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy