Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘বেনোজল’, বিজেপির বিক্ষোভে দলেরই লাঠি

ক্ষমতায় আসার বহু বছর পরে সিপিএম বলেছিল, দলে বেনো জল ঢুকেছে। রাজ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন লালন করতে করতেই বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব মেনে নিলেন, তাঁদের দলে বেনো জলের অনুপ্রবেশ ঘটে গিয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘিরে অসন্তোষের জেরে বিজেপি-তে কয়েক দিন ধরে যে প্রবল বিক্ষোভ এবং বিশ্ৃঙ্খলা চলছে, তার জেরেই দলীয় নেতৃত্বের এমন উপলব্ধি। বেনো জলের স্বীকারোক্তির পাশাপাশিই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য মঙ্গলবার বার্তা দিয়েছেন, “কোনও বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বেনো জল পরিষ্কার করা হবে। বিক্ষোভের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা যাঁরা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে বিক্ষোভ সামাল দিচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

বিজেপির রাজ্য দফতরের সামনে বিক্ষোভ সামাল দিচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৪:০১
Share: Save:

ক্ষমতায় আসার বহু বছর পরে সিপিএম বলেছিল, দলে বেনো জল ঢুকেছে। রাজ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন লালন করতে করতেই বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব মেনে নিলেন, তাঁদের দলে বেনো জলের অনুপ্রবেশ ঘটে গিয়েছে। প্রার্থী তালিকা ঘিরে অসন্তোষের জেরে বিজেপি-তে কয়েক দিন ধরে যে প্রবল বিক্ষোভ এবং বিশ্ৃঙ্খলা চলছে, তার জেরেই দলীয় নেতৃত্বের এমন উপলব্ধি।

বেনো জলের স্বীকারোক্তির পাশাপাশিই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য মঙ্গলবার বার্তা দিয়েছেন, “কোনও বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বেনো জল পরিষ্কার করা হবে। বিক্ষোভের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা যাঁরা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুরভোট মিটে গেলে আগামী বিধানসভা ভোটের আগেই দলে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজে হাত দেওয়া হবে বলে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য।

বিজেপি কলকাতা পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর থেকে প্রতি দিনই দলের রাজ্য দফতরের সামনে বিক্ষোভ চলছে। বিভিন্ন জেলার পুরসভাগুলির প্রার্থী তালিকা নিয়েও একই ছবি। দলের রাজ্য দফতরের সামনে এ দিন কর্মী বিক্ষোভে দলীয় পতাকা পদদলিত হয়েছে। পতাকায় আগুনও দিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। গোলমাল লাঠিচার্জ অবধি গড়ায়। জোড়াসাঁকো থানার পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধদের উপরে লাঠি চালান দলীয় কর্মীদেরই একাংশ। নজিরবিহীন এই সব গণ্ডগোল সম্পর্কে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের এক নেতার কটাক্ষ, “রাজ্যে বিধানসভা বা লোকসভা ভোটের তুলনায় পুরসভা ভোট খুবই ছোট। এখন এই দল ক্ষমতায় নেই। তাতেই এই অবস্থা! মানুষই বুঝে নিন, এরা কেমন দল!”

বস্তুত, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখেই এ দিন দফায় দফায় বৈঠক করেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। উচ্ছৃঙ্খলতা সামাল দিতে কড়া ব্যবস্থার ঘোষণা করা হয়। তার পরেও দলের দফতরের বাইরে কিছু কর্মী-সমর্থকদের বিশৃঙ্খলার জেরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সন্ধ্যায় বহিষ্কার করা হয় বিশাল জায়সবাল, মানব শর্মা এবং মহম্মদ অলি নামে তিন জনকে। রাহুলবাবুর ব্যাখ্যা, দলীয় কর্মীরা যাতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের মনের কথা জানাতে পারেন, সে জন্য অনেক দূর পর্যন্ত বিক্ষোভ মেনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা মাত্রা ছাড়ালে দল কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। রাহুলবাবুর আরও অভিযোগ, “সিপিএম এবং তৃণমূলের কিছু লোক ভিড়ের মধ্যে ঢুকে বিক্ষোভের মধ্যে বিশৃঙ্খলা করছে। সে ব্যাপারে আমরা কড়া পদক্ষেপের চিন্তাভাবনা করছি।”

কলকাতা-সহ প্রায় সর্বত্রই বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড নেতৃত্বের পাঠানো নামকে অগ্রাহ্য করে জেলা বা রাজ্য নেতৃত্ব নিজেদের মতো করে প্রার্থী ঠিক করেছেন। সেই প্রার্থীদের এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা নেই। দীর্ঘদিনের বিজেপি কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পক্ষান্তরে রাজ্য নেতৃত্বের বক্তব্য, অসন্তোষ থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য এত বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা যায় না। মুর্শিদাবাদ দক্ষিণ জেলার সভানেত্রী মালা ভট্টাচার্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার সময়ে দলের যে তিন জন কর্মী তাঁকে হেনস্থা করেছিলেন, তাঁদেরও বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান রাহুলবাবু। তিনি বলেন, “এর ফলে কান্দিতে যদি আমরা চার-পাঁচটা আসনে লড়তে না পারি, পারব না! কিন্তু বিশৃঙ্খলা মানা হবে না।”

বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশ অবশ্য এ দিন পর্যন্ত সতর্ক-বার্তা কানে তোলেননি। দক্ষিণ দমদম পুরসভার ৩ এবং ৫ নম্বর এবং কলকাতার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় কর্মীরা বিজেপি-র রাজ্য দফতরে বিক্ষোভ দেখান। বিজেপি ৩৮ নম্বরে প্রথমে বিশালকে প্রার্থী করেও বিক্ষোভের জেরে মনোনয়নের শেষ দিন তাঁর জায়গায় মদনলাল গুপ্তকে টিকিট দেয়। বিশাল আবার এ দিন তাঁর দলবল নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য দফতরে পাল্টা চড়াও হন। রাজ্য দফতরের এক তলায় কার্যত অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা! দলের সাধারণ সম্পাদক রবীন চট্টোপাধ্যায়কে আক্রমণ করা হয়। গোলমাল নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ডাকেন রাজ্য নেতারা। পরে রাজ্যের আর এক সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাহুল শিবিরের কর্মীরা লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেন। দলীয় সূত্রের খবর, বিশাল প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার হয়ে কয়েক দিন পুলিশ হেফাজতে কাটিয়ে এসেছেন। সেটা জানতে পারার পরেই তাঁর টিকিট কেটে দেওয়া হয়।

জেলাতেও এ দিন বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। খড়্গপুর পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে ফের রাহুলবাবু এবং দলের শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা-র কুশপুতুল পোড়ানো হয়। শিলিগুড়িতে ব্রিজকিশোর সিংহ নামে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এক জন দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার অভিযোগ করেন। নানা জায়গা থেকেই উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের সম্পর্কে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, একটি ওয়ার্ডের জন্য ২০ জন প্রত্যাশী থাকলেও টিকিট পাবেন এক জনই। বাকিরা সকলেই কিন্তু বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন না। ভিড়ের মধ্যে গোলমাল করছেন কয়েক জন। তাঁদের বিরুদ্ধেই এখন কড়া হতে চাইছে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE