Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্‌ধ হল না, প্রভাব কি কমছে গুরুঙ্গের

অথচ মাত্র ক’দিন আগেও গুরুঙ্গের ঘোষণাই ছিল শেষ কথা। পাহাড়ে অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধ প্রত্যাহার করে বিবৃতি দিয়েছিলেন বিনয় তামাঙ্গ। কিন্তু গুরুঙ্গ না বলা পর্যন্ত মানুষ হাঁফ ছাড়তে পারেনি।

ছন্দে: বন্‌ধ ঘোষণা সত্ত্বেও স্বাভাবিক দার্জিলিং। —নিজস্ব চিত্র।

ছন্দে: বন্‌ধ ঘোষণা সত্ত্বেও স্বাভাবিক দার্জিলিং। —নিজস্ব চিত্র।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৪
Share: Save:

তিন মাস আগেও বিমল গুরুঙ্গ বন্‌ধ ডেকেছেন বলে চকবাজারে পোস্টার পড়লে দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারিতে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু বুধবার মোর্চা নেতা বরুণ ভুজেলের মৃত্যুর পরে যে ১২ ঘণ্টার বন্‌ধের ডাক তিনি দিয়েছিলেন, সেখানে সেই ছবি দেখা যায়নি। বরং গুরুঙ্গের শোকসন্তপ্ত কণ্ঠে পাঠানো অডিও-বার্তা শোনার পরেও খোলা থেকেছে অধিকাংশ পাহাড়। শুধু ভুজেল যে পুরসভার কাউন্সিলর, সেই কালিম্পঙে দোকান বন্ধ রেখে শোকপালন করা হয়। যেটা হয়েছে মূলত ভুজেলের প্রভাবে, মনে করছেন কালিম্পঙের লোকেরাই।

অথচ মাত্র ক’দিন আগেও গুরুঙ্গের ঘোষণাই ছিল শেষ কথা। পাহাড়ে অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধ প্রত্যাহার করে বিবৃতি দিয়েছিলেন বিনয় তামাঙ্গ। কিন্তু গুরুঙ্গ না বলা পর্যন্ত মানুষ হাঁফ ছাড়তে পারেনি। অনেক ব্যবসায়ীই বলেছিলেন, তাঁরা দোকান খুলছিলেন ভয়ে ভয়ে। গুরুঙ্গ ঘোষণা করার পরে নিশ্চিন্ত হয়ে যান।

তা হলে হঠাৎ এখন গুরুঙ্গের ডাক কেন অমান্য করল দার্জিলিং, কার্শিয়াং বা মিরিক? পাহাড়ের লোকজন বলছেন, এত দিন গুরুঙ্গকে ভয়-ভক্তি করে চলতেন পাহাড়ের অধিকাংশ মানুষ। এ বারে টানা আন্দোলনে ভক্তিভাবটা অনেকাংশ কমে গিয়েছে। ভয়টা ছিল গুরুঙ্গের গুন্ডাবাহিনীর জন্য। এত দিন গুরুঙ্গ বন্‌ধের ডাক দিলে এদেরই দেখা যেত সেই বন্‌ধ সফল করতে। এখন ছবিটা উল্টে গিয়েছে। এদের অনেকেই চলে এসেছে বিনয়ের দিকে। তাই গুরুঙ্গ বন্‌ধের ডাক দিলে বা তাঁর অনুগামীরা পথে নেমে দোকান বন্ধ করতে চাইলে এঁরাই গিয়ে বাধা দিচ্ছেন।

দ্বিতীয় কারণ, রুখে দাঁড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষও। বুধবার গুরুঙ্গের ডাক সত্ত্বেও সকালে কালিম্পং বাদে সর্বত্র সব খুলে যায়। বেগতিক বুঝে কার্শিয়াঙের এক হোটেলে প্রচারে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন গুরুঙ্গ-অনুগামীরা। রেস্তোরাঁর নেপালি ভাষী কর্মীরা তাঁদের জানান, ১০৪ দিন বন্‌ধ করে কী মিলেছে, সেই হিসেব আগে দিতে হবে। একই ভাবে দার্জিলিঙে পেট্রোল পাম্প বন্ধ করানোর চেষ্টা করলে গুরুঙ্গ-শিবিরের কয়েক জনকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয় মানুষ। দার্জিলিঙে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও।

বন্‌ধের ডাকে সাড়া না মেলায় স্বস্তিতে প্রশাসন। বিনয়ও বলেছেন, ‘‘হিংসা, বন্‌ধের রাজনীতি আর নয়।’’ পাহাড়বাসী গুরুঙ্গকে প্রত্যাখ্যান করার পরে বিনয়-অনীত থাপার শিবিরে ভিড় বাড়তে পারে। বিনয় শিবিরেরও দাবি, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে দু-চার দিনের মধ্যেই সেই ছবি দেখা যাবে।

কিন্তু, গুরুঙ্গ কী করবেন? অনুগামীরা মনে করছেন, ভয়-ভক্তি ফের আদায় করতে গুরুঙ্গ নিশ্চয়ই নতুন ছক কষবেন। তা না হলে বিপদ বাড়বে গুরুঙ্গেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE