Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মেরে ফেলবেন না, আটকে রাখুন বাড়িতে: সৃঞ্জয়

জামিনে মুক্তি পেলে তিনি কার্যত গৃহবন্দি হয়ে থাকতেও রাজি বলে আলিপুর আদালতে জানালেন সৃঞ্জয় বসু। সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত তৃণমূল সাংসদ শনিবার বলেন, “আমার বয়স কম। কিন্তু অনেক অসুখ রয়েছে। আমাকে মেরে ফেলবেন না। আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।” সৃঞ্জয় আর্জি জানান, প্রয়োজনে তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হোক। বাড়ি থেকে কোথাও বেরোতে চান না তিনি।

আলিপুর আদালত থেকে জেলে যাওয়ার পথে সৃঞ্জয় বসু (টুম্পাই)। শনিবার রণজিৎ নন্দীর ছবি।

আলিপুর আদালত থেকে জেলে যাওয়ার পথে সৃঞ্জয় বসু (টুম্পাই)। শনিবার রণজিৎ নন্দীর ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

জামিনে মুক্তি পেলে তিনি কার্যত গৃহবন্দি হয়ে থাকতেও রাজি বলে আলিপুর আদালতে জানালেন সৃঞ্জয় বসু।

সারদা কেলেঙ্কারিতে ধৃত তৃণমূল সাংসদ শনিবার বলেন, “আমার বয়স কম। কিন্তু অনেক অসুখ রয়েছে। আমাকে মেরে ফেলবেন না। আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।” সৃঞ্জয় আর্জি জানান, প্রয়োজনে তাঁর বাড়ির সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হোক। বাড়ি থেকে কোথাও বেরোতে চান না তিনি। তদন্তকারীরা মনে করলে তিনি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সিবিআই দফতরে থাকতেও রাজি বলে জানান সৃঞ্জয়। আলিপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট কিংশুক সাধুখাঁ অবশ্য জামিনের আর্জি খারিজ করে সৃঞ্জয়কে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন। এ দিন বিকেলেই তাঁকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়।

গত ১৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে অনেকটা একই আর্জি জানিয়েছিলেন সহারা কর্ণধার সুব্রত রায়। তবে তিনি সরাসরি ‘গৃহবন্দি’ থাকতে চান বলেই জানিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ ওই আবেদন না-মঞ্জুর করে বলেছিল, “আপনি আমাদের হেফাজতে রয়েছেন। আপনাকে আমরা গৃহ-কারাগারে পাঠাইনি।” আমানতকারীদের ২০ হাজার কোটি টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সুব্রত রায়কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ৪ মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁর ঠিকানা দিল্লির তিহাড় জেল।

সারদা রিয়েলটি মামলায় সৃঞ্জয়কে সিবিআই গ্রেফতার করে গত ২১ নভেম্বর। ঠিক পরের দিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে স্পন্ডিলাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ-সহ নিজের বেশ কয়েকটি অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সে কথা শুনে সিবিআই হেফাজতে রোজ সরকারি হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে সৃঞ্জয়ের শারীরিক পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।

এ দিন দুপুরে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে আলিপুর আদালতে নিয়ে আসা হয় সৃঞ্জয়কে। তাঁর পরনে ছিল নীল-সাদা চেক শার্ট ও লাল-নীল উলের কাজ করা হাতকাটা সোয়েটার। গলায় ‘কলার বেল্ট’, চোখেমুখে কিছুটা বিধ্বস্ত ভাব। আদালত কক্ষে কাঠগড়ার পাশে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় সৃঞ্জয়কে।

ধৃত তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল বারবার সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছেন। সব নথিপত্র জমা দিয়েছেন। ২১ নভেম্বর তাঁকে সাক্ষী হিসেবে ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করা হয়। অশোকবাবু দাবি করেন, সারদা রিয়েলটির সঙ্গে সৃঞ্জয়ের সরাসরি কোনও চুক্তি হয়নি। তিনি সারদার সংবাদমাধ্যম ‘বেঙ্গল মিডিয়া’-কে প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। ২০১২ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। নিজের মক্কেলকে ‘রাজ্যের এক বিশিষ্ট পরিবারের সন্তান’ বলে দাবি করে সৃঞ্জয়ের আইনজীবী বলেন, “সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জামিন দিয়েছেন।”

এ দিন আদালতে সিবিআই জানায়, সৃঞ্জয়কে আপাতত তারা হেফাজতে নিতে চায় না। তাঁকে জেল হাজতে পাঠানোর আর্জি জানায় তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অশোকবাবু জানান, সৃঞ্জয় শারীরিক ভাবেও অসুস্থ। তাই তাঁকে জেলে আটকে না রেখে জামিন দেওয়া হোক।

অশোকবাবুর সওয়াল শেষ হতেই বিচারককে নিজের কথা বলতে ওঠেন সৃঞ্জয়। তিনি বলেন, “আমার ৩৮ বছর বয়স। শরীর খুবই খারাপ। রক্তচাপ বারবার ওঠানামা করছে। আজ এখানে আসার আগেও ১৫০/১১০ রক্তচাপ ছিল। আমি প্রভাবশালী বলে প্রমাণ নষ্ট করব, এমন দাবি করা হচ্ছে। আদালত সেই রাস্তা বন্ধ করেই আমাকে জামিন দিক।”

সিবিআই সৃঞ্জয়কে হেফাজতে নিতে না চাইলেও তাদের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় সারদার আমানতকারীদের টাকা কী ভাবে ও কোথায় সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, তা খুঁজে বের করতে সিবিআই-কে নির্দেশ দিয়েছে। সেই তদন্তই চলছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার ফণীভূষণ কর্ণের বক্তব্যও জানতে চান বিচারক। কর্ণ

জানান, তদন্তে সৃঞ্জয় কিছু সাহায্য করেছেন। তবে তাঁকে জেরা শেষ হয়ে গিয়েছে, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে তাঁকে আরও জেরা করা হতে পারে। তিনি বাইরে বেরোলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করবেন না, এটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে সিবিআইয়ের দাবি। দু’পক্ষের যুক্তি শুনে সৃঞ্জয়ের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE