শিল্প নেই। শিল্পের বাতাবরণও নেই। অতএব যতই ঘটা করে কলকাতা থেকে দুর্গাপুরে উড়ান চালানো হোক না কেন, যাত্রী সে ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কলকাতা-অন্ডাল এক পিঠের উড়ান-ভাড়া আড়াই হাজার টাকায় বেঁধে দেওয়ার পরেও নয়।
বিমানবন্দরের তথ্য বলছে, ১৮ মে চালু হওয়া ইস্তক এ পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়া-র ৪৬ আসনের ওই বিমানে দিনে গড়ে ১০-১২ জন যাতায়াত করছেন। তবে এ জন্য এয়ার ইন্ডিয়া’র বিশেষ কিছু এসে-যাচ্ছে না। কেননা অন্ডাল-কলকাতা বিমান উড়িয়ে যা লোকসান হবে, তার দায়ভার বর্তাবে অন্ডাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে, বিমানসংস্থার উপরে নয়। এই মর্মে লিখিত চুক্তি হয়ে রয়েছে।
বস্তুত অলাভজনক এই রুটে উড়ান চালিয়ে মাথার বোঝা বাড়াতে এয়ার ইন্ডিয়া গোড়ায় রাজি-ই হয়নি। এমনিতেই বিশাল লোকসান ঘাড়ে নিয়ে বিমানসংস্থাটি ধুঁকছে। আপ্রাণ চেষ্টা চলছে তাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর। এমতাবস্থায় অন্ডালের বাড়তি দায় নিতে স্বাভাবিক ভাবেই তারা আগ্রহী ছিল না। এয়ার ইন্ডিয়া শেষমেশ এই শর্তেই রাজি হয়েছে যে, অন্ডাল-উড়ানে আগামী এক বছর যা লোকসান হবে, বিমানবন্দরই তার দায়ভার বহন করবে। এমন শর্তে বিমানবন্দরই বা রাজি হল কেন?
অন্ডাল বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের কর্তা পার্থ ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথম প্রথম যাত্রী কম পাওয়া যায়। আমরা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। আশা করছি, ৯০ দিন বাদে ভাল সংখ্যায় যাত্রী মিলবে।’’ পার্থবাবুর যুক্তি: ধানবাদ-আসানসোল-দুর্গাপুর থেকে দৈনিক গড়ে তিন হাজার গাড়ি কলকাতায় আসে। তার সামান্য অংশ আকাশপথে যাতায়াত শুরু করলেই বিমান ভরে যাবে। আর অন্ডাল-কলকাতা রুটে যে নিয়মিত বিমান-পরিষেবা চালু রয়েছে, মাস তিনেকে মানুষ সেটা জেনে যাবেন বলে পার্থবাবুর আশা। তাই ওঁদের ৯০ দিনের ‘লক্ষ্যমাত্রা।’ হিসেব যদি না মেলে? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘দেখাই যাক না! এক বছর ধরে লোকসান টানতে হবে জেনেই তো শুরু করেছি।’’
রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মুখে অবশ্য অন্য তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে। এই মহলের বক্তব্য: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইচ্ছা’ পূরণের তাগিদে অন্ডাল বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ এয়ার ইন্ডিয়া’র সঙ্গে এমন একটা চুক্তি করেছেন, কারণ তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখতে চান। কলকাতা-বাগডোগরা ছাড়াও রাজ্যের অন্য শহর থেকে নিয়মিত বিমান পরিষেবা চালু করার পক্ষপাতী মমতা। যে কারণে রাজ্য সরকার নিজের খরচে বালুরঘাট বিমানবন্দর নতুন ভাবে তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাত্রী হবে কিনা, সেই সংশয়ের অবশ্য নিরসন হয়নি।
অন্ডাল বিমানবন্দর পুরোপুরি বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি। ভাবা হয়েছিল সেখানে বিমানবন্দর ঘিরে বিমাননগরী গড়ে উঠবে, পত্তন হবে বিভিন্ন ভারী শিল্পের। তেমনটা হলে বিমানে যাত্রীর টান ধরতো না। তবে বাস্তবে গত চার বছরে ওখানে বিমানবন্দর ছাড়া আর কিছু বিশেষ মাথা তোলেনি। আশপাশের বিশাল জমি ধু-ধু করছে। যদিও পার্থবাবু দাবি, বিমানবন্দর ঘিরে দুই বাণিজ্যিক সংস্থা নির্মাণ শুরু করেছে। দু’টি স্কুল ও আবাসনের কাজেও হাত পড়েছে।
আপাতত নিয়মিত উড়ান চালানোর জন্য দুর্গাপুর, বার্নপুর-সহ ওই তল্লাটের চালু শিল্পই অন্ডাল বিমানবন্দরের ভরসা। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, অন্ডালে এসে বিমানে জ্বালানি ভরলে জ্বালানি-কর মকুব হবে। অধিকাংশ দিন তাই চেষ্টা হচ্ছে অন্ডালে দাঁড়িয়ে বিমানের পেট ভরে জ্বালানি নিয়ে নেওয়ার। তা সত্ত্বেও শুধু জ্বালানির খরচই উঠছে না, অন্য খরচ তো দূর অস্ত্।
তিন মাসে কোন ম্যাজিকে পরিস্থিতিটা পাল্টে যায়, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy