গেট বন্ধ করে কর্মীদের জমায়েত। মঙ্গলবার, জিপিও-য়। —নিজস্ব চিত্র
সহকর্মী বা সতীর্থের মৃত্যুকে সামনে রেখে দিনের কাজ বন্ধ করে দেওয়া অনেক জায়গাতেই এখন প্রায় ‘রেওয়াজ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে যার শরিক হল জিপিও। দলমত নির্বিশেষে সেই কর্মবিরতিতে অংশ নিলেন সেখানকার সমস্ত ইউনিয়নের কর্মীরা। যার জেরে দিনভর নাজেহাল হলেন সাধারণ মানুষ। তবে এ ক্ষেত্রে জিপিও-র কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের ওই সহকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন বর্তমান প্রশাসক। সেই প্রশাসক অবশ্য এ নিয়ে বিশদ কিছু বলতে চাননি।
এ দিন জিপিও-র মূল দরজা বন্ধ ছিল বিকেল তিনটে পর্যন্ত। প্রবেশপথ আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন সমস্ত ইউনিয়নের কর্মীরা। প্রতিদিনের মতোই জিপিওতে স্ট্যাম্প কেনা, টাকা পাঠানো, ডাকঘরের প্রকল্প সহ চিঠিপত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজ নিতে আসা অজস্র মানুষকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন কর্তব্যরত কর্মীরা। তাঁরাই জানিয়ে দিচ্ছিলেন, সহকর্মীর মৃত্যুতে জিপিও-র সব কাজ বন্ধ আছে। এক সময়ে ইউনিয়নের নেতারা কর্মীদের বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার কথা বলতে গিয়েও ক্ষোভের মুখে পড়েন। গেট খুলতে বাধা দেন ইউনিয়নের সাধারণ কর্মচারীরা। ভিতরে ঢুকতে না পেরে রাস্তাতেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ডাক বিভাগের চিঠি সরবরাহের লালরঙা গাড়িগুলি।
জিপিওর গেটে এই দৃশ্য দেখে এ দিন কার্যত হতবাক হয়ে পড়েন বেহালার বাসিন্দা চৈতালী চক্রবর্তী। স্পিড পোস্টে ভিন্ রাজ্যে চিঠি পাঠাতে এ দিন জিপিওতে এসেছিলেন। সব দেখেশুনে চৈতালীর প্রশ্ন, “জিপিওর মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এ ভাবে কাজ বন্ধ করা যায়? একই প্রশ্ন নিয়ে এ দিন জিপিওর গেট থেকে ফিরে যান কসবার রূপেশ রায়, দমদমের প্রবীর পাল-রাও।
কেন হঠাৎ এ ভাবে কাজ বন্ধ করে দিলেন জিপিওর কর্মীরা?
মঙ্গলবার সকালে একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় জিপিও-র সেভিংস ব্যাঙ্ক বিভাগের কর্মচারী অরিন্দম সরকারের। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অরিন্দমবাবুর মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই কাজ বন্ধ করে জিপিও-র গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁর সহকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, জিপিওর বর্তমান প্রশাসক অরুণ সরকার কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। অরিন্দমবাবুর সঙ্গেও তা-ই করেছিলেন তিনি। তাই অরুণবাবুকে জিপিও থেকে সরানোর দাবি তোলেন কর্মীরা। অভিযুক্ত প্রশাসক অরুণ সরকার বলেন, “আমি আমার সমস্যার কথা উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”
ইতিমধ্যে জিপিও-র উচ্চতর কর্তৃপক্ষের তরফে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিক্ষোভ থামানোর অনুরোধ জানান নেতারা। কর্মচারীরা প্রথমে নেতৃত্বের কথার বিরোধিতা করলেও পরে জিপিও-র গেট থেকে সরে কাজে যোগ দেন।
এ ভাবে কি জিপিও-র গেট আটকে আন্দোলন করা যায়? কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা শম্ভু চক্রবর্তী বলেন, “আজ সব কর্মচারী ইউনিয়নের সমর্থকেরা একত্রিত হয়ে এই আন্দোলন করেছেন। এটা একটা দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ক্ষোভের প্রকাশ।” জিপিও-র কর্মী ইউনিয়নের নেত্রী দেবারতি দাশগুপ্ত বলেন, “কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা শোনার আশ্বাস দেওয়ার পরেই আমরা আন্দোলন তুলে নিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy